আমাদের পঞ্চাশ বছরের বাড়ি ও পিতার জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা

মাসুদা তোফা | বুধবার , ১৭ মার্চ, ২০২১ at ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ

আমাদের পঞ্চাশ বছরের বাড়িটা আজও কাঁদে
একজন সৌম্য সুপুরুষ কান্তিময় পিতাকে হারিয়ে
বাড়িটার জন্মের ইতিহাস করুণ
অজস্র রক্তের নহর বয়ে গেছে তার হৃতপিণ্ড জুড়ে।
বাড়িটা আমাদের, তবুও ছিলো না আমাদের
বাড়িটা দুঃশাসন আর অজানা শঙ্কায় প্রকম্পিত।
বাড়িটা থিতু হতে পারেনি,
কখনো বাইরের কখনো বা ভেতরের লোভ
তার অন্তর ছিঁড়ে খেয়েছে।
হবে না এ বাড়ি যে সোনা ফলায়, সোনার টুকরোবাড়ি।
বাড়িটা আমাদের ভালবাসা,
সে কখনো প্রতিশোধ নিতে চায়নি
দুর্বৃত্তায়নকে ক্ষমা করেছে বারবার।

পঞ্চাশ বছর ধরে রক্তক্ষরণের ক্ষত,
তাকে দাঁড়াতেই দিলো না!
আমাদের পঞ্চাশ বছরের বাড়িটি আমার প্রায় সমান বয়সী,
না একটু ছোট ঠিক পিঠাপিঠি ছোট ভাইবোন যেমন।
আমার সাথে সাথেই তার বেড়ে ওঠা
অথবা আমি কিংবা আমরা একসাথেই বেড়ে উঠি।
একেকটা দুর্যোগে তার তীব্র মর্মবেদনা দেখেছি
কখনো কখনো খসে পড়া,
কখনো বেঁকে যাওয়া শির উঁচু করতে
যেই সোজা দাঁড়াতে চেয়েছে,
তখনি আবার দুমড়ে মুচড়ে একাকার।
তবুও সাতকোটি সন্তানের জন্য রুখে দাঁড়িয়েছে অহর্নিশ।
এখন প্রায় বিশকোটি তাদের জন্যই বিনিদ্র পাহারায়।
আমাদের পঞ্চাশ বছরের বাড়ি
আমাদের ভালোবাসার বাড়িটি
এখন উন্নয়নশীল দেশে যাত্রা।
বাড়িটির সংগ্রামের দুর্বিষহ ইতিহাসে পৃথিবীময় স্তম্ভিত।
এবাড়ি কোনো সহজ বাড়ি নয়,এবাড়ি সহজে আসেনি আমাদের কাছে।
তার জন্য অনেক রক্ত, অনেক জীবনদান
আর একটি মহাকাব্যিক ভাষণ আজও ইতিহাস।
দীর্ঘ নয়মাস ত্রিশ লক্ষ নারী পুরুষ মিলে
গড়েছে এ বাড়ি,
আমাদের বাড়িটি কোনো সাধারণ বাড়ি নয়।
স্বপ্নের বাড়িটার বীজ বুনেছে বহু বহু বছর আগেই।
এই বাড়িটার জন্য আমরা জীবন বাজি রাখি,
বাড়িটাকে আমরা হারতে দেইনা,
বাড়িটাও আমাদের রাখে জিতিয়ে।
আমার সমবয়সী মধ্যবয়সী পুরনো এ বাড়ির চার পাশজুড়ে
দগদগে কষ্টের স্মৃতি, তীব্র বারুদের গন্ধ,
রক্ত, মৃত্যু, লোভ লালসায় নিমজ্জিত।
আর লালসবুজ পতাকা জুড়ে অহংবোধের ইতিহাস।
সাতান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে একটি বাড়ি নাম
তার বাংলাদেশ।
এই বাড়িটি সর্বংসহা,
এই বাড়িটি স্মৃতির আয়না
এই বাড়িটি আমাদের পূর্বপুরুষদের স্বপ্ন বাড়ি।
এই বাড়িটি আমাদের পিতার।
দীর্ঘ বছর মাস কারাবাসে অবর্ণনীয় ত্যাগ তিতিক্ষার জীবন তাঁর
দেশ ও মানুষকে ভালবেসে দুঃখময় বর্ণিল জীবন সাজিয়েছিলেন।
বেঁচে থাকলে আজ একশ বছর পূর্ণ হতো।
যেনো আজও সেই তর্জনী উঁচিয়ে বলতেন,
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

আমাদের এই ঐতিহাসিক বাড়িটি
আর এ বাড়ির বাসিন্দারা
আগামী প্রজন্মের হাতে সুরক্ষিত শক্তিশালী
এবং সুষমামণ্ডিত সৌন্দর্যের আকর হয়ে থাকুক।
পঞ্চাশ বছরের বাড়িটির জন্য জীবনভর আমাদের ভালোবাসা।
আর এবাড়ির শতবর্ষী পিতার জন্য
এক সমুদ্র ভালোবাসা
যা কখনো ফুরাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিনি বেঁচে থাকবেন এ বাংলায়
পরবর্তী নিবন্ধসাধনপুরে বঙ্গবন্ধু