আমাদের ইশকুল

উৎপলকান্তি বড়ুয়া | বুধবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

কাঁধ থেকে ঝুলানো বইয়ের ব্যাগ নামিয়ে ফার্স্ট বেঞ্চে রাখে দোয়েল। দুই ভাগে ভাগ করা ফার্স্ট বেঞ্চের অপর প্রান্তে টুনটুনি বসে আছে।
দোয়েল টুনটুনিকে দেখেই দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। -ইস কতদিন পরে দেখা হলো! কেমন আছো টুনটুনি?
-আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো?- টুনটুনি দোয়েলকে পাল্টা প্রশ্ন করে।
-ভালো নেই মোটেও। তোমাকে না দেখে কি ভালো থাকতে পারি? তোমাকে কতদিন দেখি না, ইস! কী যে মিস করেছি এতোদিন তোমাকে! কী যে খারাপ লেগেছে তোমার জন্য! বলতে বলতে দোয়েল টুনটুনির পাশে টেবিলে বসে পড়ে।
-আমিও কি তোমাকে কম মিস করেছি! বাবা – মাকে কতবার বলেছি, তোমার সাথে দেখা করার জন্য। তোমার বাসায় যেতে চেয়েছি। কিন্তু কী করবো বলো! করোনা – লকডাউনের জন্য কি ঘর থেকে বের হওয়া যায়! টুনটুনির কন্ঠে দীর্ঘশ্বাস ঝরে পড়ে।
ক্লাস ফোরের রুমে বসে দোয়েল আর টুনটুনি দুই বন্ধু কথা বলে। ক্লাস শুরু হতে এখনো অনেকটা সময় বাকি। ইশকুলের সামনে মাঠে অন্যান্য ক্লাসের ছোট-বড় সবার সে কী দৌড়াদৌড়ি-হৈ চৈ, লাফ-ঝাঁপ খেলা। এতোদিন পর একটু নিজেদের খোলা ইশকুল মাঠে আকাশের নিচে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেয়ার, খেলার সুযোগ এলো।
দোয়েল টুনটুনির আরেক বন্ধু ময়না। অনেকটা দৌঁড়েই ক্লাস রুমে ঢোকে সে। ঢুকতেই দরোজায় থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। এক ঝলক চকিতে দেখে নেয় ক্লাসের ভেতরে কে কে আছে! দোয়েল- টুনটুনিকে দেখেই দৌঁড়ে এসে দু’দিক থেকে দু’জনের গলায় একসাথে জড়িয়ে ধরে। সে কী খুশির উচ্ছ্বাস তিন বন্ধুর! কলকল কথা হাসি খুশির ঝরনা যেনো থামতেই চায় না ওদের।
ইশকুলের বারান্দায় সামনে এসে দাঁড়ায় দোয়েল টুনটুনি ও ময়না। পাকা বারান্দার নিচে লোহার নেট জাল দিয়ে ঘের দেয়া ফুল বাগান। ইশকুলের ফুল বাগান। ইশকুল শুরুর আগে, দুপুর ছুটি বা ইশকুল ছুটির পরও স্যার-ম্যাডামদের তদারকিতে ফুল বাগানে পানি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, পরিচর্যা করে থাকে সব ছাত্ররা মিলে মিশে। কতদিন দেখা হয়নি বাগানের জবা, ডালিয়া, গোলাপ, মাধুরীলতা, পাখিফুল কুঞ্জফুলের সাথে। টকটকে লাল থোকা থোকা পাখিফুলগুলো দেখতে কী সুন্দর লাগছে আজ! নিচে থেকে উপর দিকে দাঁড় করে রাখা বাঁশের জালিতে মাধুরীলতা কী চমৎকার তার রং ছড়িয়ে হাসছে! দোয়েল বাম হাতে আলতো আদুরে হাত বুলায় গোলাপের গায়ে। টুনটুনিতো রস-গন্ধহীন টুকটুকে জবা ফুলের পাগল বরাবরই। ময়নার আবার বাগানের সব ফুলগুলোই ভারী পছন্দের। বলে, একটার চেয়ে একটা কী চমৎকার ফুল! কোনটা ছেড়ে কোনটা রাখি। সব ফুলগুলোই যে সুন্দর।
– এই যে তোমরা ফুল বাগানে কী করছো? ফুল ছিঁড়ছো তোমরা? যাও ক্লাসে গিয়ে বসো। অংকের বিভূতি স্যার সাংঘাতিক রাগী। বিভূতি স্যারকে ভয় না এমন কেউ নেই। স্যারের অপ্রত্যাশিত এমন ধমক দোয়েল টুনটুনি ময়না আশা করেনি। পড়ি মরি তিন জনই ক্লাসের উদ্দেশ্যে ভোঁ দৌড় সিঁড়ি বেয়ে দৌড়তে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায় দোয়েল। হাঁটুতে প্রচন্ড চোঁট লাগে। ব্যথায় উহ্‌ আহ্‌ করে চিৎকার করে ওঠে দোয়েল। ওহ্‌ মা! মরে গেলামগো মা! মা মা ও-মা—–।
দোয়েলকে মা গায়ে বার কয়েক ঝাঁকি দিয়ে বলে, কি হয়েছে, এমন করছো কেনো মা? কি হয়েছে? বলো! স্বপ্ন টপ্ন দেখেছো নিশ্চয়। এইতো আমি আছি তো! ! কিচ্ছু হয়নি- ওঠো। বেলা অনেক হলো, ওঠো। আজ না তোমাদের ইশকুল খুলেছে! ইশকুলে যাবে তো, ওঠো। হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করে নাও আগে।
দোয়েল শোয়া থেকে বিছানায় ধর ফর করে উঠে বসে। আমি কী তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম! হ্যাঁ তাই তো! করোনা-লকডাউনের কারণে সেই অনেক দিন থেকে ইশকুল বন্ধ ছিল। বন্ধু টুনটুনি দোয়েলসহ সব ক্লাসবন্ধুদের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ছবি হয়ে ভেসে ওঠে প্রিয় পাকা রঙিন ইশকুল, ইশকুলের সবুজ মাঠ, ফুলের বাগান, রাগী বিভূতি স্যার, হেডস্যারসহ ম্যাডামদের চেহারা চোখের সামনে।
-উঠেছো মামনি! নাস্তা রেডি,এসো। অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।
হুম, যাই! নাস্তা সেরেই আবার ইশকুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। আজ সবার সাথে, সব বন্ধুদের সাথে দেখা হবে। অনেকদিন পর। ইস কতদিন পর আজ ইশকুলে যাবো, আমাদের প্রিয় ইশকুলে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে হোটেলে তরুণীর লাশ স্বামী পলাতক
পরবর্তী নিবন্ধশরতের স্বরূপ