আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাত প্রস্তাবনা

মহামারীতে বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৯ জুলাই, ২০২১ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন, ডেলিভারি ও জাহাজীকরণে কোনো জটিলতা নেই বলে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সাতটি বিশেষ প্রস্তাবনা প্রদান করেছে। এই সাতটি প্রস্তাবনা অনুসরণ এবং যথাযথভাবে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা গেলে বৈশ্বিক এই সংকটে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে না।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক কোভিড মহামারীর কারণে বিভিন্ন দেশে লকডাউনের জন্য সিঙ্গাপুর, কলম্বোসহ বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে জাহাজের এবং পণ্যের জট তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশে লকডাউনের ফলে শ্রমিক সংকট, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা, বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে জটের কারণে পৃথিবীব্যাপী পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর সমূহে এক একটি জাহাজ জেটিতে ভিড়তে ৮/১০ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ, ভারত, কম্বোডিয়ার মতো ছোট বন্দর হতে ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে ব্যবহৃত বন্দরগুলোতে রপ্তানিযোগ্য কন্টেনারের কানেকশন পেতে বিলম্ব হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর হতে কন্টেনার ওইসব বন্দরে পৌঁছানোর পরও কানেকশন পেতে গড়ে দুই সপ্তাহের মতো লেগে যাচ্ছে। কিন্তু চটগ্রাম বন্দরে কোভিড মহামারীকালীনও আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালিত হয়েছে এবং চটগ্রাম বন্দর সপ্তাহের সাতদিনই রাতে দিনে ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে। ফলে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো ১১.৯৮ শতাংশ, কন্টেনারে ৩.০৯ শতাংশ এবং জাহাজ ৭.৯২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর এবং বেসরকারি আইসিডিগুলোতে প্রায় ৪০ হাজার টিইইউএস-এর বেশি বেশি খালি কন্টেনার সংরক্ষিত রয়েছে। এরমধ্যে আইসিডিতে ১৩ হাজার ৬৪৭ টি ২০ ফুটি এবং ১২ হাজার ৬৮৯ টি ৪০ ফুটি কন্টেনার রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ২হাজার ৪৩১ টি ২০ফুটি এবং ১৪৭৭টি ৪০ফুটি খালি কন্টেনার রয়েছে। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দরে খালি কন্টেনারের কোনো সংকটই নেই। বাংলাদেশে বিভিন্ন এমএলওগণের যে খালি কন্টেনার রয়েছে, তা পরস্পরের মধ্যে ইন্টারচেঞ্জের মাধ্যমে সমন্বয় করলে ক্রমবর্ধিষ্ণু রপ্তানি চাহিদা খুব সহজেই পূরণ করা সম্ভব বলেও বন্দর সূত্র মন্তব্য করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন আমদানি-রপ্তানি পণ্য নিয়ে গড়ে ১০ থেকে ১২টি জাহাজ আসা-যাওয়া করে।
জাহাজগুলোর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিটি জাহাজই তার প্রকৃত ধারণ ক্ষমতার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ স্লট খালি নিয়ে যাওয়া-আসা করছে। ফলে পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের কোনো ঘাটতি নেই। বহির্নোঙরে সম্প্রতিককালে কন্টেনার জাহাজের অবস্থানকাল ২-৩ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। বিভিন্ন এমএলও এবং ফিডার অপারেটরদের মধ্যে কমন কেরিয়ার চুক্তি বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে সমন্বয় করা হলে পণ্য পরিবহন আরো অনেক বেশি সহজ হবে। বর্তমানে এমএলওদের মধ্যে এই চুক্তি না থাকা এবং দুয়েকটি এমএলও’র মধ্যে চুক্তি থাকলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় কন্টেনার পরিবহনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ফিডার ভ্যাসেল অপারেটরদের কমন কেরিয়ার এগ্রিমেন্ট করে একে অপরের স্লট ব্যবহার পদ্ধতি ফলপ্রসূভাবে প্রয়োগ, এমএলওগণ কন্টেনার ইন্টারচেঞ্জের মাধ্যমে একে অপরের কন্টেনার ব্যবহার, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্য চীনের সুবিধাজনক বন্দরে পরিবহন করে মাদার ভেসেলের সংযোগ নেয়ার ব্যবস্থা, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিদেশী বায়ার এমএলও এবং ফিডার ভেসেল নির্দিষ্ট করে দেয়। তা না করে অ্যাভিলেবল জাহাজ ও কন্টেনারে পণ্য পরিবহনে বিভিন্ন অপশন রাখা হলে কার্যক্রম নির্বিঘ্ন হবে। বিজিএমইএ এবং দেশিয় রপ্তানিকারকগণ তাদের বায়ারদের সাথে সমন্বয় করে তাহলে এধরনের একচেটিয়া সংকট দূরীভূত হবে। এতে পণ্য পরিবহনে গতিশীলতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি কোনো ধরনের জটের আশংকা থাকবে না।
হেপাক লয়েড নামের জার্মান কোম্পানি সিঙ্গাপুর বন্দরের জটের কারণে চার সপ্তাহের জন্য সিঙ্গাপুর বন্দরের মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশমুখী কন্টেনার বুকিং চার সপ্তাহের জন্য বন্ধ রেখেছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, এর পরিবর্তে কলম্বো বন্দর হয়ে বাংলাদেশে কন্টেনার বুকিং করার জন্য তাদের গ্রাহকদের পরামর্শ দিয়েছে। হেপাক লয়েডের নিজস্ব কোনো জাহাজ নেই বলে মন্তব্য করে বলা হয়েছে, এই কোম্পানি অন্যের জাহাজে পণ্য পরিবহন করে। সিঙ্গাপুর চট্টগ্রাম রুটের পরিবর্তে তারা চট্টগ্রাম কলম্বো রুটে পণ্য পরিবহন করবে। এতে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে প্রভাব পড়ার মতো কোনো অসুবিধা হবে না বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।
বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি পণ্য কন্টেনারের মাধ্যমে পরিবহনে বিশ্বব্যাপী যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তা উত্তোরণের জন্য বিজিএমএইএ, এমএলও, ফ্রেইট ফরওয়াডার, ফিডার ভেসেল অপারেটর এবং বায়ারদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরসন করা সম্ভব বলে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুর এবং কলম্বো বন্দরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া কন্টেনারসমূহ মাদার ভেসেলের মাধ্যমে পরবর্তী গন্তব্যে দ্রুত পরিবহনের জন্য সিঙ্গাপুর এবং শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশস্থ হাইকমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমৎস্য প্রজেক্টের পুকুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ শ্রমিক নিহত
পরবর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালে করোনায় নারীর মৃত্যু স্বজনরা লাপাত্তা