আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন বাড়াতে হবে

| বুধবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অশনি এক বার্তা দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, নতুন বছরেই মন্দার কবলে পড়বে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ। যার প্রভাব পড়বে সারা বিশ্বে। আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা মন্দার এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, যা উদ্বেগ ছড়াচ্ছে বিশ্বের দেশে দেশে। ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, নতুন বছর তথা ২০২৩ সালের বিশ্ব অর্থনীতি গত বছরের তুলনায় কঠিন সময় পার করবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থনীতির গতি এরই মধ্যে মন্থর হয়ে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুদ হার বেড়ে যাওয়া ও চীনে নতুন করে করোনা ভাইরাসের বিস্তার বিশ্ব অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

এতে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশের অর্থনীতি চলতি বছর মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমপ্রতি সিবিএস নিউজের এক অনুষ্ঠানে আইএমএফের প্রধান এ আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন। এর আগে গত অক্টোবরে প্রকাশিত আইএমএফের অথনৈতিক আউটলুকে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমানো হয়েছে। আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, চলতি বছর যেসব দেশ মন্দার কবলে পড়বে না, সেসব দেশের মানুষও মন্দার ধাক্কা অনুভব করবে। ইউরোপ কোনোভাবেই মন্দা এড়াতে পারবে না। আর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

এদিকে, পত্রিকান্তরে এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশ্বে যে অবস্থা বিরাজ করছে, আমরা এর বাইরে যেতে পারব না। অন্যদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত আমাদের অর্থনীতি। ফলে শুধু আমাদের দেশ নয়, বিশ্বের সব দেশের অর্থনীতি পরিস্থিতি নিয়ে এখন ভাবতে হয়। তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই আতঙ্কে আছে, কারণ আগামী দিনে আরও কোনো ভয়াবহ পরিস্থিতি আসে কি না। আমরা বলেছি, জানুয়ারিতে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সেই দিকেই যাচ্ছে। এখনো দেশের অর্থনীতি বিপদমুক্ত এবং স্থিতিশীল। এই স্থিতিশীলতার হাত ধরে নতুন বছরে এগিয়ে যাব। তবে সতর্ক থাকতে হবে।

এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, বৈশ্বিক সংকটের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমবে-এমন আভাস দিয়েছে দাতা সংস্থাগুলো। দেশের নীতিনির্ধারণী মহলও তাই মনে করছেন। চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা আছে। শেষ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি কেমন হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে আসছি। এটি কমানোর অর্থ হচ্ছে, এর পেছনে কোনো না কোনো ঘটনা আছে। দাতা সংস্থাগুলো বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে শঙ্কিত। আমরা বলে দিয়েছে, বিপৎসীমার বাইরে আছি আমরা।

অর্থনীকিবিদরা বলেছেন, নতুন বছরে দেশের অর্থনীতিকে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে এগুলোর কম-বেশি আভাস ছিল আগেই। মূলত অর্থনীতিতে এ সংকট চলছে বিশ্বব্যাপী। করোনা মহামারির আঘাত সামাল দিতে না দিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র বিশ্বে নতুন নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সমপ্রতি ব্যাংক ও আর্থিক খাতেরও সংকট বেড়েছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, নতুন বছরে দেশে ডলার সংকট চলমান থাকবে, এর বিপরীতে টাকার আরও অবমূল্যায়ন হবে; বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিতে বাড়তে পারে চাপ। আমদানি কমায় শিল্প খাতে সংকট আরও প্রকট হতে পারে। সমপ্রতি নতুন শিল্প স্থাপনসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ কমেছে। এর প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানে। নতুন বছরে দেশকে সবচেয়ে বড় চাপে থাকতে হবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি সংকট, আমদানিনির্ভরতা-এসব কারণে দেশে প্রত্যাশিত মাত্রায় মূল্যস্ফীতি কমানো এক বড় চ্যালেঞ্জ। কাজেই আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন বাড়াতে হবে। অনাবশ্যক ও বিলাসী পণ্য আমদানি সীমিত বা বন্ধ করার উদ্যোগও নেওয়া দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে