খ্যাতিমান সমাজ চিন্তাবিদ ও বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ আবুল হুসেন। উদার মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও মুক্তচিন্তার অধিকারী আবুল হুসেন এদেশে অসাম্প্রদায়িক সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার এক অনন্য দিশারী। আবুল হুসেনের জন্ম ১৮৯৭ সালের ৬ জানুয়ারি যশোরের পানিসারা গ্রামে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২০ সালে অর্থনীতিতে এম.এ করেন তিনি। পেশা হিসেবে প্রথম জীবনে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা এবং পরে জজ কোর্ট ও হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগ দেন। বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রধান সংগঠন ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ পরিচালনায় আবুল হুসেনের অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় মেলে। সংগঠনটির অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ ও কাজী মোতাহের হোসেন। সমাজের মুখপত্র ‘শিখা’র প্রথম বর্ষের সম্পাদক ছিলেন আবুল হুসেন। পত্রিকাটির প্রচ্ছদে লেখা থাকতো ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব’। আবুল হুসেন ছিলেন সমাজমনষ্ক মননশীল প্রাবন্ধিক। তাঁর রচনাবলীতেও এর ছাপ সুস্পষ্ট। প্রকাশিত গ্রন্থ কিংবা অগ্রন্থিত-অপ্রকাশিত রচনার সংখ্যা প্রচুর না হলেও সাহিত্যমূল্য বিচারে এর পরিধি ব্যাপক ও বিস্তর। সমাজ-রাষ্ট্র-ধর্ম-রাজনীতি-অর্থনীতি-ইতিহাস-শিক্ষা-সংস্কৃতি – সকল বিষয়ে তাঁর রচনাশৈলী যুক্তি ও তথ্য সমৃদ্ধ। বাংলা ও ইংরেজি – দু ভাষাতেই তিনি লিখেছেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ‘বাঙালি মুসলমানের শিক্ষা সমস্যা’, ‘মুসলিম কালচার’, ‘খোঁয়াড় ও খেয়ার আইন’, ‘দ্য প্রবলেমস অব রিভার ইন বেঙ্গল’ প্রভৃতি। বেশ কিছু ছোটগল্পও রচনা করেছেন তিনি। ‘রুদ্ধ ব্যথা’, ‘পেটের দায়’, ‘নেশার ফের’, ‘প্রীতির কুঁড়ি’, ‘স্নেহের টান’ প্রভৃতি ছোটগল্পে তাঁর মানসবৈশিষ্ট্যের মতোই সমাজহিত, মানবকল্যাণ, নীতিবোধ ও সুন্দর মনের পরিচয় মেলে। ১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর প্রয়াত হন আবুল হুসেন।