করোনার কারণে ঘরবন্দি জীবন পেরিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ফিরেছে তাদের প্রিয় ক্লাসরুমে। গত চার দিন ধরে রাস্তাঘাট, আড্ডা, ক্লাস কিংবা খেলার মাঠ-সর্বত্রই তাদের পদচারণায় মুখর ছিল পরিবেশ। এতে চট্টগ্রাম নগরী আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এতদিন অফিস-আদালত, মার্কেট, শপিংমল খুললেও কিসের যেন অভাব ছিল। ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বোঝা গেছে অভাব ছিল শিক্ষার্থীদের কলকাকলির আর অভিভাবকদের দল বেঁধে আড্ডাবাজির। অভাব ছিল কোমলমতি শিশু-কিশোরদের নগরীটাকে ‘মাথায় তোলার’। টানা ১৭ মাস পর খুলেছে সব স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় নগরীর রাস্তায় সকাল থেকেই শুরু হয় গাড়ির চাপ। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
সরেজমিনে গত চার দিন নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের পরিবেশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় রয়েছে নানা আয়োজন। প্রতিষ্ঠানের বাইরে গতিরোধ করা হচ্ছে যানবাহনের। ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মিলছে শুধু শিক্ষার্থীদের। স্কুলের ঘণ্টা বাজতেই যে যার নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসছে। হাসিখুশিতে ক্লাস করছে। বন্ধুদের সাথে আড্ডাও দিচ্ছে।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিন জাহির বলে, আমাদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেওয়া হয়েছে। তাতে আমি বা আমরা এখুনি পরীক্ষা দিতে পারব। তাই আমাদের আর অপেক্ষা না করিয়ে দ্রুত এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ করছি।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদ্রিতা রায়। প্রথম দেখায় সে সবার সঙ্গে করেছে ‘কনুই শেক’। সে বলল, ঘরে থাকতে থাকতে মাথা ধরে যেত। এরপর ছোট ভাই হলো। ওকে নিয়েই একটা বছর কাটিয়ে দিলাম। আজ (মঙ্গলবার) স্কুলে এসে মনে হচ্ছে আমি মুক্ত পাখি। স্কুল ছুটির পর বাঁধ ভাঙা আনন্দ। সহপাঠীদের নিয়ে অনেকে ভ্রাম্যমাণ দোকানের আচার, ঝালমুড়ি ও আইসক্রিম খেতে যায়। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি রিকশায়, টেঙি-টেম্পোতে গল্পে মাতে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় অভিভাবকরাও আনন্দিত। কারণ এক অভিভাবকের সঙ্গে আরেক অভিভাবকের আছে বন্ধুত্ব ও সখ্য। দীর্ঘদিন পর একজন আরেকজনের দেখা পাওয়ার উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে বিদ্যালয়ের ভেতরে সুরক্ষার নানা আয়োজন থাকলেও বাইরে অভিভাবকদের জটলায় সামাজিক দূরত্ব থাকে না।
দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, সন্তানকে আবার আগের পরিবেশে আনতে একটু সময় লাগবে।
মনোয়ারা বেগম নামের এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে অনন্যা আক্তার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল খোলায় অনেক খুশি। ওদের জীবন থেকে অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে।
অনেক অভিভাবক জানালেন, দেড় বছর পর বাচ্চাদের আবার ক্লাসের ফাঁকে স্কুলের মাঠে ছোটাছুটি করার দুরন্ত দিনগুলো শুরু হলো।
শিক্ষার্থীদের চাপে সকালের সড়কে তেমন একটা প্রভাব না পড়লেও দুপুরের পর নগরীর বিভিন্ন মোড়ে বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের সড়কে যানজট দেখা দেয়। এ সময় স্কুলগুলো ছুটি হলে যানজটের তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে। দুপুরের পর নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়ে।
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগেই গণপরিবহন, মার্কেট, হোটেল, অফিস, কারখানা-খুলেছে প্রায় সবকিছুই। ভয় ভেঙে নানা কাজে ঘরের বাইরে এসেছেন নগরবাসী। দীর্ঘদিন পর সকাল হতেই নিয়ম করে আগের মতো সড়কে ঢল নামে কর্মজীবী নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের। মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। হোটেল-রেস্টুরেন্টে মানুষের চায়ের সাথে গল্পের আড্ডা বেড়েছে। রাস্তাঘাটে মানুষের জনসমাগম। অফিস-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরগরম। সবকিছু আগের মতো হয়েছে। যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে চট্টগ্রাম। তবে সব জায়গায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহারেও দেখা গেছে অনীহা।
ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, শহর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। দোকানে ক্রেতার আনাগোনা বাড়ছে। বহুদিন ব্যবসা-বাণিজ্য হয়নি। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে ব্যবসা বাড়বে।
সিএনজি টেঙি চালক জুমেল আহমদ বলেন, রাস্তায় মানুষের চলাচল বেড়েছে। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকেরা টেঙি ব্যবহার করছে। বহুদিন কষ্টে থাকলেও এখন দিনকাল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।