ঘড়ির কাটায় সময় তখন সকাল ৭টা পেরিয়েছে মাত্র। কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম পাড়ে গাড়ির দীর্ঘ লাইন আর শত শত পথচারীর জটলা। জটলা ঠেলে পায়ে হেঁটে ব্রিজের উপর উঠতেই দেখা গেল মাঝপথে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে এন মোহাম্মদ কোম্পানির বিশালাকার একটি কাভার্ডভ্যান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোরের কোনো এক সময়ে শহরমুখী অতিরিক্ত মাল বোঝাই কাভার্ড ভ্যানটি সেতুর হাইটক্যারিয়ারের সাথে আটকে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এ সময় রহিমা বেগম নামে মধ্যবয়সী চাকরিজীবী এক নারীকে দেখা গেল চিৎকার ও চেঁচামেচি করতে। তিনি কাজ করেন নগরীর সিএন্ডবি এলাকায় বেসরকারি একটি কোম্পানিতে। সকাল ৮টার মধ্যেই কর্মস্থলে পৌঁছতে হবে। কিন্তু সেতুতে যানজটের কারণে তাকে পায়ে হেঁটে পার হতে হচ্ছে। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলে যাচ্ছিলেন, ‘মরার সেতুটি ভেঙে গেলেই নিস্তার পেতাম’। শুধু রহিমা নয়, গতকাল সোমবার সকালে সেতুর উপর কাভার্ড ভ্যানটি আটকে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় হাজারো চাকরিজীবীদের। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই জানান, সকালে কর্মস্থলে য়াওয়ার উদ্দেশ্যে সেতু পার হতে গিয়ে হঠাৎ দেখতে পান সেতুর উপর কাভার্ডভ্যানটি আটকে সব ধরণের যানচলাচল বন্ধ হয়ে আছে। মুহূর্তেই শত শত গাড়ির জট লেগে যায় উভয় পাড়ে। সকাল ৮টার দিকে কাভার্ডভ্যানটি সরিয়ে নিলেও যান চলাচল স্বাভাবিক হতে আরো কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। এতে হঠাৎ করে নিত্য যাতায়াতরত চাকরিজীবীকে পড়তে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে। এ সময় অনেকে নৌকা বা সাম্পানযোগে আবার অনেকে নতুন ব্রিজ হয়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন।
আরেফা আকতার নামে এক নারী বলেন, চাকরি বাঁচাতে গিয়ে বাধ্য হয়ে আমার মত অনেকেই নৌকাযোগে নদী পার হয়ে কর্মস্থলে যান। স্থানীয় গোমদন্ডী পাইলট স্কুলের শিক্ষক সেলিম মাহমুদ বলেন, আমি বাইক নিয়ে সকাল ৯টা হতে দীর্ঘ এক ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলাম সেতুর পশ্চিম পাড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে পরে নতুন ব্রিজ হয়ে কর্মস্থল বোয়ালখালীতে আসতে হয়েছে। শুধু আমি একা নই আমার মত আরো অনেকেই এভাবে এসেছেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, অনেক পূর্বেই মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুটির স্টীলের নিরাপত্তা রেলিংগুলো ভেঙ্গে এবরোথেবরো হয়ে পড়ে আছে এদিক-ওদিক। সেই ভাঙ্গা স্থানগুলোতে সুতা দিয়ে কাঠের কঞ্চি বেঁধে সেতুটির শেষ রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। কাঠের পাদানীগুলো স্থানচ্যুত হয়ে পথচারী ও যানবাহনগুলোকে দুর্ভোগে ফেলছে প্রতিনিয়ত। ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধ থাকলেও কে শোনে কার কথা। টোল অফিসের কর্মচারীদের ম্যানেজ করে হর হামেশাই পার হচ্ছে ভারী যানবাহন। এসব গাড়ি আটকে সপ্তাহের কোননা কোন সময় সেতুটি বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে ফেলছে যাতায়াতকারীদের। পরিদর্শনের সময় যানজটে আটকে থাকা অনেকেই এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘এই দুর্ভোগ আর কতদিন?
ব্রিজের টোল অফিসে দায়িত্বরত জাহাঙ্গীর আলম নামের এক কর্মচারী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের লোকজনের সহায়তায় কাভার্ডভ্যানটি পেছনে সরিয়ে এনে প্রায় সাড়ে ৭টা নাগাদ সেতুটি স্বাভাবিক করে দেয়া হয়।