আবার আলোচলায় সিএনজির মিটার

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৪ মার্চ, ২০২২ at ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

‘মামা পুলিশ জিগাইলে বইলেন মিটারে যাইতাসেন।’- নগরীতে যারা নিয়মিত সিএনজি টেক্সিতে চড়েন, তাদের কাছে পরিচিত কথা এটি। সিএনজি চালকদের এমন আবদার অনেকটা বাধ্য হয়েই রাখতে হচ্ছে যাত্রীদের। কারণ এ শর্তেই তারা সিএনজি টেক্সিতে চড়েন। ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের অভিযোগও পুরনো। মিটারে না গেলে আগে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মামলা দিতো। মামলার ভয়ে হলেও টেক্সি চালকরা অনেক সময় বাধ্য হতেন মিটারে যেতে। কিন্তু এখন মিটার সংক্রান্ত মামলাও বন্ধ। মনিটরিং না থাকায় নগর জুড়ে চলাচলকারী আঠার হাজার সিএনজি টেক্সি প্রতি মাসে পঞ্চাশ কোটিরও বেশি টাকা মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। মিটারে ভাড়া আদায় না করে নিজেদের মর্জি মাফিক ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে সিএনজি চালকেরা প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি টাকা যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি আদায় করছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর উদ্যোগের অভাবে নানাভাবে চেষ্টা করেও সিএনজি টেক্সিগুলোকে মিটারে ভাড়া আদায়ের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ বিষয়টি ট্রাফিক বিভাগের নজরদারিতে আছে জানিয়ে আজাদীকে বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের শত শত অভিযোগ রয়েছে। তাই আমরা এ ব্যাপারে অ্যাকশনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে ট্রাফিক আইনে মিটার সংক্রান্ত মামলা বা জরিমানার সুনির্দিষ্ট কোন ধারা নেই। আগে কীভাবে মামলা দেওয়া হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে অন্য কোন ধারায় ফেলে মামলা দেওয়া হতো। এখন সে বিষয়েও আমাদের চিন্তা ভাবনা চলছে।
বিআরটিএ বলছে, সিএনজি টেক্সির ব্যাপারে তাদের বিশেষ নজরদারি নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত মিটারে চলাচলের বিষয়টি দেখে মাঝে মাঝে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, সংশ্ল্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব রয়েছে সিএনজি টেক্সির ক্ষেত্রে। কোনও চালকই মিটারে যায় না। নগরীর জামাল খান প্রেসক্লাবের সামনে থেকে জিইসি মোড়। দূরত্ব তিন কিলোমিটারের কিছু বেশি। কিন্তু আশি টাকার কমে একটি টেক্সিও যেতে রাজি হলো না। অবশেষে উক্ত যাত্রীকে আশি টাকা ভাড়া প্রদান করেই তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হলো। অথচ মিটারে চললে এই টেক্সির ভাড়া কোন অবস্থাতেই চল্লিশ টাকার বেশি হতো না।
পাহাড়তলীর সিএনজি টেক্সি চালক আব্দুর রউফ আজাদীকে বলেন, জমা ৯৫০ টাকা। মিটারে গেলে পেটই ভরবে না। তাকে গন্তব্যের বিষয়ে জানালে চান অস্বাভাবিক ভাড়া। নগরীর প্রায় শতভাগ সিএনজি টেক্সি চালকেরই একই অজুহাত, জমা বেশি। সিএনজি চালক সাইদুরকে চেরাগী পাহাড় থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথার কথা বলতেই তিনি বলেন, ভাড়া ৩০০ টাকা লাগবে। মিটারে যাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন কি আর কেউ মিটারে যায়! এই বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
সিআরবি এলাকায় কথা হয় সিএনজি টেক্সি চালক শফিকের সঙ্গে। তার গাড়িতে লেখা প্রাইভেট। মিটারও নেই। শিল্পকলা একাডেমি যেতে চাইলে জানান ভাড়া লাগবে ১৫০ টাকা। শফিক আরও বলেন, খয়েরি রঙা সিএনজি টেক্সিগুলোর বেশিরভাগই সার্জেন্ট ও পুলিশ সদস্যদের নামে চলে। কোথাও ধরলে সার্জেন্টকে ফোনে ধরিয়ে দিই। তবে আমরা সব জায়গায় যাই না।
রাকিবুল নামে এক যাত্রী বলেন, সিএনজি মিটারে চলছে নাকি চুক্তিতে, বিষয়টি দেখার জন্য কখনও দায়িত্বশীল কাউকে রাস্তায় দেখিনি। পুলিশও এখন আর যাত্রীদের কাছে জানতে চায় না, চুক্তিতে না মিটারে যাচ্ছে। আবার কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ সিএনজি টেক্সি, সেটাতো যাত্রীরা বুঝবে না। বছর কয়েক আগে শুধু সিএনজি টেক্সিকে টার্গেট করে বেশ কিছু অভিযান চালানো হয়েছে উল্ল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ বলেন, এখন আমাদের টার্গেট গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা। যে কারণে সিএনজির প্রতি নজরদারিতে ঘাটতি পড়েছে কিছুটা। তিনি বলেন, কোনও সিএনজি টেক্সি পুলিশ কর্মকর্তার বা কোনও সদস্যের নামে চলার সুযোগ নেই। তবে কেউ চালাচ্ছেন কিনা তা আমাদের নলেজে নেই। আমরা চেক করি সিএনজি টেক্সির লাইসেন্স আছে কিনা, তারা ট্রাফিক আইন মানছে কিনা এসব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাস্টমস কর্মকর্তা দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে দিনমজুরকে কুপিয়ে হত্যা