চট্টগ্রাম কাস্টমসে কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা সেই ১১৩ বিলাসবহুল গাড়ি ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) ও ম্যানুয়াল নিলামে তোলা হবে আগামী ৩ ও ৪ নভেম্বর। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কাস্টমস কমিশনারের দপ্তরে কার্নেট গাড়ির নিলামের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন কমিশনার মো. ফখরুল আলম। তিনি এ সময় বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা অখালাসকৃত ১১৩টি গাড়ি আছে। মূলত বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক অন্যদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তারা গত ২০১১-২০১২ সালের দিকে এই গাড়িগুলো নিয়ে এসেছিলেন। কার্নেট সুবিধার গাড়ির ক্ষেত্রে আইনের বিধান হলো-আমদানিকারক ট্যুরিস্ট হিসেবে এসব গাড়ি এনে বাংলাদেশে তারা ৬ মাস ব্যবহার করবেন। যখন তারা বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন তখন এই গাড়িগুলো ফেরত নিয়ে যাবেন। এক সময় কেবল অঙ্গীকারনামা দিয়ে আমদানিকারকরা শুল্ককর পরিশোধ ছাড়াই অনেক গাড়ি খালাস করে নিয়ে যান। কিন্তু পরে দেখা গেল, এদের অধিকাংশই গাড়ি ফেরত না নিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ এখানে আইনের বড় ধরণের ব্যত্যয় দেখা দেয়। এরপর সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, এভাবে আর অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে কাউকে গাড়ি খালাস দেওয়া হবে না। তখন শর্তারোপ করা হলো- যে পরিমাণ শুল্ককর প্রযোজ্য, সে শুল্ককরের সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে গাড়ি খালাস নিতে হবে। যখন এই সিদ্ধান্ত হলো- তখন আমদানিকারকরা গাড়ি আর খালাস করেননি এবং ফেরতও নেননি। তাদেরকে একাধিকবার নোটিশ করা হয়েছে, শো-কজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশই জবাব দেননি। দুই একজন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, কিন্তু আদালত থেকেও তারা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
কাস্টমস কমিশনার ফখরুল আলম আরো বলেন, এরপর আমরা ৭-৮ বছর পার করেছি। এই গাড়িগুলো নিলামে নিষ্পত্তি করার জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নানাবিধ কারণে সম্ভব হয়নি। প্রথমত এই গাড়িগুলো অনেক দিনের পুরনো, কিছু কিছু গাড়িতে চাবি পাওয়া যাচ্ছে না। যেহেতু এ গাড়ির অধিকাংশই নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানের তৈরি। সে কারণে এগুলোর ওপর শুল্ককরের পরিমাণও কিন্তু বেশি। যেহেতু আমাদের গাড়ির শুল্কায়ন হয় সিসিভিত্তিক। অনেকগুলো উচ্চ সিসি বিধায় সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়। তবে এর আগে নিলাম পদ্ধতি অনুসারে সংরক্ষিত মূল্যের ন্যূনতম যেটা পাওয়ার কথা, সেটা না পাওয়ায় আমরা গাড়িগুলো একাধিকবার নিলামে তুলেও বিক্রি করতে পারিনি। বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে গাড়িগুলো বন্দরে জায়গা দখল করে আছে। সর্বশেষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিষয়টি খুব সিরিয়াসলি নিয়েছে। ইতোমধ্যে মিটিংয়েও হয়েছে। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে এই গাড়িগুলো যেভাবে হোক, আইন ও বিধি মোতাবেক নিলামের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার জন্য আমাদের বলা হয়েছে। সে নির্দেশনা অনুসারে আমরা সবগুলো সংস্থার সাথে সমন্বয় করে অকশন করতে যাচ্ছি। যেটি ই-অকশন ও ম্যানুয়াল দুই পদ্ধতিতেই হবে। নিলামটি ব্যাপকভিত্তিক করার জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে সম্ভবত ১৩০টি গাড়ি খালাস হয়। এই গাড়িগুলোর মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক আমাদের কাস্টমস ইন্টেলিজেন্স এবং বিভিন্ন সংস্থা বাসা বাড়ি থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। বেশ কিছু আছে যেগুলো উদ্ধার করা যায়নি, কারণ গাড়িগুলোর রং পরিবর্তন করে বিভিন্নভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এখনো চেষ্টা আছে। আমরা আগেও নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছিলাম।












