কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে জন্ম নেওয়া কালো ভালুকের ফুটফুটে দুই ছানা অনেকটা বড় হয়ে উঠেছে। পার্ক প্রতিষ্ঠার পর এই পর্যন্ত তিন দফায় পাঁচটি ভালুকের প্রজনন হয়েছে। এ নিয়ে পার্কে বর্তমানে ভালুকের সংখ্যা ৮টি। আবার নতুন করে প্রজননের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় বিপদাপন্নের ঝুঁকির তালিকায় থাকা এশিয়াটিক কালো ভালুক প্রজননের আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে এই সাফারি পার্ক। পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবা, যত্ন-আত্তিতে বেড়ে উঠা এশিয়াটিক এই কালো ভালুকও দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীদের বিনোদনের অন্যতম খোরাকে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন পার্কে আগত শিশু থেকে সব বয়সের পর্যটক-দর্শনার্থী অবশ্যই ঢুঁ মারছে ভালুক বেষ্টনীতে।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, আবদ্ধ অবস্থায় সচরাচর বাচ্চা প্রসব করতে পারে না এশিয়াটিক ব্ল্যাক বিয়ার তথা কালো ভালুক। তবে আবাসস্থল যদি মাটির সংস্পর্শে থাকে তাহলে সেখানে গর্ত খুঁড়ে বাচ্চা প্রসব করতে পারে স্ত্রী ভালুক। আর সেই সুযোগ করে দেওয়ায় হাতছাড়া করেনি পার্কের স্ত্রী ভালুক ‘জরিনা’। এবার নতুন করে বাচ্চা প্রসবের সময় এসেছে ভালুক বেষ্টনীতে। বেষ্টনীতে থাকা চার পুরুষ ভালুকের সঙ্গী হিসেবে সংস্পর্শে রাখা হয় স্ত্রী ভালুক জরিনা এবং কারিনাকে। গতবছর দুটি বাচ্চা প্রসব করে জরিনা। যা সাফারি পার্কের ইতিহাসে এশিয়াটিক কালো ভালুক প্রজননে বড় ধরনের সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এই প্রজাতির ভালুক এশিয়ার মধ্যে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে তথা বিপদাপন্নের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে পার্কের আরেক বেষ্টনীর পুরুষ ভালুক জ্যাকবনের দুই স্ত্রী মৌসুমী ও পূর্ণিমার সংসারে তিনটি ভালুক বাচ্চা জন্ম নেয়। যা সাফারি পার্ক তথা দেশি-বিদেশি পর্যটক-দর্শনার্থীদের জন্য সুখবর এবং বিরল ঘটনা ছিল। এর পর ২০২২ সালে জরিনার ঘরে জন্ম নেওয়া দুই বাচ্চাকে ঘিরে তাদের লালন-পালনে পার্ক কর্তৃপক্ষ বেশ তৎপর থাকে। বর্তমানে পার্কে ভালূকের সংখ্যা ৮টিতে দাঁড়িয়েছে। সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, ভালুক বেষ্টনী প্রতিদিন একাধিকবার পরিদর্শন করা হয়। গত ১৫ দিন ধরে স্ত্রী ভালুক মৌসুমী গর্তের ভেতরই সময় পার করছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে নতুন করে আবারো বাচ্চা প্রসব করবে সে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের অন্যতম উদ্যোক্তা ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. তপন কুমার দে জানান, এশিয়াটিক ব্ল্যাক বিয়ার তথা কালো ভালুক বর্তমানে বিপদাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এরা নিশাচর ও একাকী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। মূলত জঙ্গলাকীর্ণ খাঁড়া পাহাড়ই এদের অন্যতম আবাসস্থল।
চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা এবং বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, দিন দিন এই পার্কটি বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ পার্কে পরিণত হতে চলেছে। শুধু তাই নয় আগেও এই পার্কটি সিংহ, বাঘ, ওয়াইল্ডবিস্ট, জলহস্তি, হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর প্রজনন হয়েছে।
তিন দফায় ভালুকের প্রজনন হয়েছে বিপদাপন্নের ঝুঁকিতে থাকা বেশ কয়েকটি এশিয়াটিক ব্ল্যাক বিয়ার। যা আবদ্ধ অবস্থায় প্রজজন সাফারি পার্কের ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, পার্কে ভালুক আবদ্ধ অবস্থায় থাকলেও যখন সন্তান প্রসব করার সময় আসে তখন নিজেরাই খাঁচার কাছে বেষ্টনীর ভেতর টিলা শ্রেণির মাটির নিচে গর্ত খুঁড়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। সেখানেই বাচ্চা প্রসব করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখে যাতে কোনো জন-মানবের নজর না পড়ে। এবারও স্ত্রী ভালুক মাটি খুঁড়ে গর্তের মধ্যেই অবস্থান করায় ভালুকের প্রজননে বিরাট সফলতার হাতছানি দেখা দিয়েছে।