আবহাওয়ায় সুখবর নেই

দাবদাহ চলছে ৫৩ জেলায়, চলবে আরও দিন দশেক ।। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪ পরামর্শ ।। সড়কে পানি ছিটাতে বলল সংসদীয় কমিটি

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

দেশে চলমান তাপপ্রবাহ থেকে শিগগিরই মুক্তি মিলছে না। এ পরিস্থিতি আরও দিন দশেক বিরাজ করতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটির পরিচালক আজিজুর রহমান গতকাল বলেন, মে মাসের ৪/৫ তারিখ পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলতে পারে। তবে এসময়ে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠবে না। তাপমাত্রা আরেকটু বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এর মধ্যে হালকা বৃষ্টি সিলেট, নেত্রকোণা এসব এলাকায় হতে পারে, অন্য অঞ্চলে হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

গতকাল সন্ধ্যার বুলেটিনে দেশের ৫৩ জেলার উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বুলেটিনে বলা হয়, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও পটুয়াখালীর উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, চাঁদপুর, বান্দরবান জেলাসহ রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে ঢাকা, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে। খবর বিডিনিউজের।

এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। এ সময় ঢাকার তাপমাত্রা তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময়ে বাগেরহাটের মোংলায় ৪০ ডিগ্রি এবং পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্য দিয়ে আবহাওয়াবিদ আজিজুর রহমান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় সাধারণত এতো তাপমাত্রা হয় না। তবে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলেও তাপপ্রবাহ বইছে। এ বছর জলীয়বাষ্পের পরিমাণটা বেশি, যে কারণে অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। স্বাভাবিক যা থাকার কথা, তার চেয়ে ৪ থেকে ৭ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা উঠছে বিভিন্ন এলাকায়।

আজিজুর রহমান বলেন, এ সময়ে যে কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়া চলার কথা, সেটা চলে গেছে অনেক উপরে। বিশেষ করে চায়না এসব এলাকায়। এটা যদি বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি এসব বরাবর থাকত তাহলে এদিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকত। স্কেল উপরে থাকার কারণে এ অঞ্চলটা শুষ্ক হয়ে গেছে।

পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় চলমান তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও শিগগিরই কোনো সুখবর মিলছে না। আগের দুদিন থার্মোমিটারে পারদ খানিকটা নিচে নামলেও গতকাল মঙ্গলবার থেকে ফের তাপমাত্রা বাড়ার আভাস রয়েছে। সেইসঙ্গে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ঢালাওভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি কিংবা গরম কমারও কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির। গতকাল তিনি বলেন, আজকে তাপমাত্রা বাড়বে। সামনে এ ধারাটা অব্যাহত থাকবে। এই মাসের মধ্যে ঢালাওভাবে বৃষ্টি বা গরম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

এদিকে তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চারটি পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে তীব্র গরম থেকে দূরে থাকতে হবে, মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে। এছাড়া তাপপ্রবাহের মধ্যে জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে রাস্তায় নিয়মিত পানি ছিটানোর পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। একই সঙ্গে জনগণের মাঝে স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে বলেছে কমিটি।

বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

গতকাল সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্য এলাকায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে গতকাল ঢাকায় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গুলিস্তানের রাস্তায় হাঁটার সময় প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় ঢলে পড়েন এক ব্যক্তি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। ওই ব্যক্তি হিটস্ট্রোকে মারা যেতে পারেন ধারণা পুলিশের। গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। হিটস্ট্রোকে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকদের ধারণা। তীব্র গরমের কারণে স্কুলকলেজে সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস চালানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪ পরামর্শ : তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চারটি পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে তীব্র গরম থেকে দূরে থাকতে হবে, মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে। শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ করতে প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। তবে হেপাটাইটিস এ, , ডায়রিয়াসহ প্রাণঘাতী পানিবাহী রোগ থেকে বাঁচতে রাস্তায় তৈরি পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে দিনে একাধিকবার গোসল করতে হবে।

গরম আবহাওয়ায় ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সম্ভব হলে গাঢ় রঙিন পোশাক এড়িয়ে চলতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, গরম আবহাওয়ায় ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, তীব্র মাথাব্যথা, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়া, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

সড়কে পানি ছিটানোর পরামর্শ : তাপপ্রবাহের মধ্যে জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে রাস্তায় নিয়মিত পানি ছিটানোর পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। একই সঙ্গে জনগণের মাঝে স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে বলেছে কমিটি।

গতকাল জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংসদীয় কমিটির সভায় আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা শেষে সুপারিশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে জরুরি ভিত্তিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার পূর্বাভাস এবং সার্বিক সহযোগিতায় স্বচ্ছতা আনতে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে কমিটি।

বৈঠকে ইউনি ব্লক প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ এবং ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় অবকাঠামো নির্মাণে বিল্ডিং কোড ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিতুর টাকায় তাকে খুন করান বাবুল
পরবর্তী নিবন্ধসাদ মুসা গ্রুপের এমডি ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা