নগরের চকবাজার-মুরাদপুর সড়কের কাতালগঞ্জে দুটি ময়লা-আর্বজনার কন্টেনার বসিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। প্রধান সড়কের উপর কন্টেনার বসানো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে এলাকাবাসী। কন্টেনার দুটো অন্যত্র সরিয়ে নিতে একাধিকবার চসিককে অনুরোধ করা হলেও এতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এলাকাবাসী বলছেন, দিনের সিংহভাগ সময় ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি থাকে কন্টেনার দুটো। কন্টেনার উপচে সড়কেও পড়ে থাকে আর্বজনা। এসব ময়লা-আবর্জনা থেকে নির্গত উৎকট গন্ধে আশেপাশে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে। এতে স্থানীয় লোকজনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। একইসঙ্গে মূল সড়কে কন্টেনার থাকায় সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে প্রায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কন্টেনারের ধারণ ক্ষমতা চার টন। ফলে দুটো কন্টেনারে আট টন বর্জ্য জমে। প্রতিটি কন্টেনার দিনে চারবার করে পরিষ্কার করা হয়। অর্থাৎ দৈনিক ৩২ টন বর্জ্য জমে সেখানে। কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ, চকবাজারসহ আশেপাশের এলাকা থেকে ডোর টু ডোর প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীত ময়লা-আবর্জনা সেকেন্ডারি স্টেশন হিসেবে কন্টেনার দুটোতে জমা করা হয়। পরে তা আরেফিন নগর ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। পর পর গত দুইদিন সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, চকবাজার বৌদ্ধ মন্দির থেকে সামনে সামান্য যেতেই পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার প্রবেশ পথ। এ প্রবেশ পথ পেরিয়ে মুরাদপুরের দিকে কয়েক হাত যেতেই একটি কন্টেনার দেখা যায়। আরেকটি ছিল আরো ৫০ গজ (আনুমানিক) দূরত্বে কাতালগঞ্জ ব্রিজের উপর। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ভ্যানে করে ময়লা নিয়ে এসে ভর্তি করছিল কন্টেনারগুলো। কন্টেনার ভরাট হওয়ার পর রাস্তায়ও ময়লা ফেলা হচ্ছিল।
জানতে চাইলে চসিকের এক পরিচ্ছন্ন কর্মী আজাদীকে বলেন, বাসা-বাড়ি থেকে সংগৃহীত ময়লা কন্টেনারে রাখা হচ্ছে। কন্টেনার ভর্তি হলে তা নিয়ে যাওয়া হবে।
গতকাল দুপুরে দেখা গেছে, কন্টেনারের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোকজনকে উৎকট দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে নাকে হাত দিয়েছেন। করিম নামে এক পথচারী বলেন, এভাবে প্রধান সড়কে ময়লার কন্টেনার বসানোর মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীকে কি বার্তা দিচ্ছেন? পরিচ্ছন্ন শহরের স্বপ্ন দেখালেও বাস্তবে তারা যে ব্যর্থ সে বার্তা দিচ্ছেন না তো?
একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল নাছের আজাদীকে বলেন, রাতদিন ময়লা-আবর্জনায় ভরাট থাকে কন্টেনারগুলো। পাশে ভবনের বাসিন্দারা বাসায় থাকতে পারছেন না উৎকট দুর্গন্ধে। এ পর্যন্ত অসংখ্যবার সিটি কর্পোরেশনকে কন্টেনার দুটো অন্যত্র সরিয়ে নিতে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করছেন না। নগরবাসী নিয়মিত কর পরিশোধ করছে পরিচ্ছন্ন শহরের আশায়। বিশুদ্ধ বাতাসে নি:শ্বাস নিতে চায় নগরবাসী। কিন্তু ময়লার কন্টেনার তো সে সুযোগ দিচ্ছে না। দুর্গন্ধযুক্ত বাতাসে নি:শ্বাস নিলে তো ওল্টো অসুস্থ হয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে চসিকের অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, শহর থেকে আমরা খোলা ডাস্টবিনের সংখ্যা কমিয়ে আনছি। পারতপক্ষে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা রাখতে চাই না আমরা। এতে আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কিন্তু বাধ্য হয়ে কাতালগঞ্জে কন্টেনার দুটো রাখতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বাসা বাড়ি থেকে ময়লা ভ্যান গাড়িতে করে নিয়ে আসি। সেগুলো কোথাও রাখতে হয় সেকেন্ডারি স্টেশন হিসেবে। সেখান থেকে ডাম্প ট্রাকে করে আরেফিন নগর নিয়ে যাওয়া হয়। কাতালগঞ্জের আশপাশে কোথাও খালি জায়গা পাচ্ছি না সেকেন্ডারি স্টেশন করার জন্য। চকবাজার ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর মিন্টু ভাইসহ অনেক খুঁজেছি। পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে কন্টেনার বসিয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চকবাজার ওয়ার্ডে আগে ৪০টি খোলা স্পট ছিল। এখন সেগুলো নাই। কাপাসগোলা, মেডিকেলের ভেতর, চকবাজার কাঁচাবাজারে কন্টেনার আছে। কন্টেনারগুলো না রেখেও তো উপায় নাই।