আন্দরকিল্লায় ভয়াবহ আগুন, জীবন্ত দগ্ধ ১

পুড়েছে কেমিক্যাল গুদামসহ বেশ কয়েকটি দোকান শত্রুতা করে আগুন লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন আন্দরকিল্লা এলাকায় সংঘটিত ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে এক ব্যক্তি নিহত এবং কেমিক্যাল গুদামসহ বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওয়েল্ডিং কারখানা ও ছাপাখানা। তবে ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় আগুন ছড়িয়ে পড়তে না পারায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা মিলেছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতের এই আগুনে চারদিকে ভয়াবহ রকমের আতংক ছড়িয়ে পড়ে। রেডক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতাল থেকে রোগীরা আত্মরক্ষায় বাইরে চলে যান। এই সময় প্রসূতি, গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন আয়ত্বে আনে। তবে ওয়াসার হাইড্রেন্টে পানি না থাকায় ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নিভানোর পানি যোগাড়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। পরবর্তীতে রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, আন্দরকিল্লা শাহে জামে মসজিদ এবং সিপিডিএল প্যারাগন সিটি থেকে পানি নিয়ে আগুন নিভানো হয়। ফায়ার সার্ভিস বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে উল্লেখ করলেও ক্ষতিগ্রস্ত আলম ইঞ্জিনিয়ারিং এর মালিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, শত্রুতা করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ের সমবায় মার্কেটে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। টিনশেডের মার্কেটটিতে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চন্দনপুরা, নন্দনকানন ইউনিট আগুন নিভানোর কার্যক্রম চালায়। পরবর্তীতে আগ্রাবাদ ইউনিটের দুইটি গাড়িও আগুন নিভানোর কাজে যোগ দেয়। তিনটি স্টেশনের ছয়টি গাড়ি আগুন নিভানোর কার্যক্রম চালায়। রেড ক্রিসেন্টের একটি টিমও শুরু থেকে আগুন নিভানোর কাজে যোগ দেয়। পুলিশ এবং র‌্যাবের টিমও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সহায়তা করে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মার্কেটের একটি ওয়েল্ডিং কারখানায় আগুন লাগে। পরবর্তীতে দ্রুত আশপাশের তিনচারটি প্রিন্টিং প্রেসসহ পাশের তিন তলা ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওখানে একটি কেমিক্যালের গুদামও ছিল। এবি সার্জিক্যাল নামের দোকানে কেমিক্যাল মজুত থাকায় আগুন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও সমবায় মার্কেটের আলম ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হতভাগ্য ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ ইদ্রিস আলম। আনুমানিক ৫০ বছর বয়সী উক্ত ব্যক্তি আলম ইঞ্জিনিয়ারিং এর মালিক মোহাম্মদ শাহ আলমের ছোট ভাই এবং রাউজানের উরকিরচর এলাকার মাহমুদুল হকের বাড়ির মৃত নূর হোসেনের ছেলে। মোহাম্মদ ইদ্রিস আলম সহজ সরল প্রকৃতির ছিলেন। তিনি কারখানার ভিতরে শুয়ে পড়ে ভিতর থেকে তালা লাগিয়ে দিয়ে ঘুমাতেন। ধারণা করা হচ্ছে যে, আগুনের ধোঁয়ায় তিনি তালা খুলতে পারেননি। এতে করে ওখানে তিনি আগুনে পুড়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারান।

রাত সোয়া ১২টা নাগাদ সূত্রপাত হওয়া আগুন রাত আড়াইটা নাগাদ নিভানো সম্ভব হয়। কেমিক্যাল থাকায় আগুন নিভাতে বেশ বেগ পেতে হয়। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতি ৩০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে আলম ইঞ্জিনিয়ারিং এর মালিক মোহাম্মদ শাহ আলমের পুত্র মোহাম্মদ দিদার অভিযোগ করেছেন যে, তাদের কারখানা বা আশপাশে আগুন লাগার মতো কোনো প্রোডাক্ট ছিল না। শত্রুতা করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। শত্রুতার আগুনে তার চাচার প্রাণহানিসহ আশপাশে দোকান এবং কারখানায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সমবায় মার্কেটের দোকানগুলো নিয়ে অনেকদিন ধরে নানাভাবে বিরোধ চলে আসছে বলেও স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষ্যদর্শী সূত্র জানায়, আগুন লাগার পর অল্পক্ষণের মধ্যে টিনশেডের সমবায় মার্কেটে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। বিশেষ করে কেমিক্যাল থাকায় আগুনের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। তীব্র আগুনে চারপাশে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আতংকে রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে রোগীরা সরে যান। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর রোগীরা ফিরে আসেন।

ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম সিটি ইউনিটসহ স্থানীয়রা উদ্ধার কাজ শুরু করে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সিটি ইউনিটের সেক্রেটারি আবদুল জব্বার এবং জেলা ইউনিটের কার্যকরী সদস্য শাহাদাত হোসেন রুমেল, ইসমাইল হক চৌধুরী ফয়সাল, যুব রেড ক্রিসেন্টের প্রধান ইমুর নেতৃত্বে ৫০ জনেরও বেশী সদস্য আগুন নিভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করেন।

আগুন নিভানোর জন্য দমকল বাহিনী সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ে পানি নিয়ে। আন্দরকিল্লা এলাকায় ওয়াসার হাইড্রেন্ট থাকলেও তা এখনো চালু করা হয়নি। ফলে ফায়ার সার্ভিস আন্দরকিল্লা রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, শাহী জামে মসজিদ এবং সিপিডিএল প্যারাগন সিটি থেকে পানি এনে আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আগুন নিভানোর কার্যক্রম চালায়।

নন্দনকানন ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ আলী জানান, সমবায় মার্কেটে আগুন লাগার খবর পেয়ে আমাদের দুইটি টিম কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন থেকেও টিম এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়।

এদিকে গতকাল বুধবার সকালে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সমবায় মার্কেট পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তির দাফনকাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম ও চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জামিউল হিকমা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি যে অত্যাচার করেছে, আমরা তার কিছুই করি না : শেখ হাসিনা
পরবর্তী নিবন্ধক্যাম্পে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের গোলাগুলি, ২ রোহিঙ্গা শিশু গুলিবিদ্ধ