সংবিধানের ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’র অবমাননার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের পদত্যাগ দাবি করেছেন কক্সবাজার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। ‘সাম্প্রদায়িক’ ইস্যুতে পক্ষ নিয়ে মেজর সিনহা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে আইনি সহায়তা দেওয়ার এ অভিযোগ করেন সরকারি দলের এ মহিলা নেত্রী। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর মোমিন রোডের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপকে হত্যাকারী, বহুনারীকে ধর্ষণকারী, সাংবাদিক নির্যাতনকারী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা পূর্ণচন্দ্র দে, সাবেক ছাত্রনেতা শাহাদাৎ নবীন খোকা ও জাওয়াদ আলী চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে নাজনীন সারওয়ার কাবেরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদ মর্যাদার এবং রানা দাশগুপ্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর। সুতারাং সাংবিধানিক পদে থেকে তিনি ঘৃণিত আসামির পক্ষে আইন পেশায় নিয়োজিত থাকতে পারেন না। লিগ্যাল রিমেম্বার অ্যাক্ট অনুযায়ী রানা দাশগুপ্ত রাষ্ট্রের সার্বক্ষণিক পদাধিকার বলে বেতনভুক্ত কর্মকর্তা। যা প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদারও সমান। এদিক থেকেও রানা দাশগুপ্ত এ পদে থেকে একজন স্বীকৃত আসামির পক্ষে আইনজীবী হিসেবে কোনো ধরনের আইনি সহায়তা দিতে পারেন না। যদি আইনি সহায়তা দিতে চান, তবে সাংবিধানিক পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে, অথবা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির রেফারেন্স নিয়ে তিনি অভিযুক্ত আসামিকে আইনি সহায়তা দিতে পারেন।’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের দায়িত্বে থেকে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত চিহ্নিত ও নিন্দিত আসামির পক্ষে অবস্থান নেওয়া ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অনার অব রুলস অনুযায়ী প্রফেসনাল ইথিকসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে নাজনীন সরওয়ার কাবেরী সাংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আপনারা জানেন ওসি প্রদীপ সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার আসামি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা, ধর্ষণ, ইয়াবা ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সেই বিতর্কিত ওসির পক্ষে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে তিনি এমনটা করতে পারেন না। ওসি প্রদীপের মত একজন চিহ্নিত অপরাধীকে একজন সরকারি আইনজীবী হিসেবে আইনি সহায়তা দেয়ায় রাষ্ট্রের আইনি ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও কলঙ্কিত করেছেন অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তাই তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিককের প্রশ্নের জবাবে নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, ‘ওসি প্রদীপ যেসব বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে, প্রায় ৮০ শতাংশ অভিযানে মহিলাদের ধর্ষণ করেছে।’ দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠা কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের বিচার দাবি করেন কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকে তদন্ত চলছে। এখনো অভিযোগ প্রমাণিত নয়। শুধু মুজিবুর রহমান নন, যেসব রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিচার দাবি করেন এ আওয়ামী লীগ নেত্রী। দলের সকল পর্যায়ে সংস্কারও চান কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদটি সাংবিধানিক পদ নয়। এখানে একজন প্রসিকিউটর বেতনভুক্তও নন। এখানে সম্মানি প্রদান করা হয়। শুধু সম্মানি নির্ধারণের জন্য অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেলের পদের স্কেলটি নির্ধারণ করা হয়েছে।’
রানা দাশগুপ্ত নিজে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার কর্মকর্তাও নন বলে দাবি করে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর হিসেবে সরকারিভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হয়ে থাকে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে আমি পুলিশী নিরাপত্তা পাই।’ ওসি প্রদীপের পক্ষে আদালতে লড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর। এর বাইরে সব আদালতেই আমি একজন সাধারণ আইনজীবী। একজন আসামিকে যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত অপরাধী সাব্যস্ত করবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি অপরাধী নন। একজন আসামিকে আইনি সহায়তা দেওয়া একজন আইনজীবী হিসেবে আইনসম্মত বলে দাবি করেন তিনি।’