আন্তঃনগর ট্রেনে প্রতিদিনই বিলম্ব

চট্টগ্রাম-ঢাকা রুট ।। লাকসাম-আখাউড়া ৭২ কিমি ডাবল লাইন নির্মাণ কাজে ধীরগতি ।। ৬ বছরে পরিবর্তন হয়েছে ৭ প্রকল্প পরিচালক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের লাকসাম-আখাউড়া ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে এই রুটে চলাচলরত আন্তঃনগর ট্রেনসমূহ নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে এখন ট্রেন চলাচল করছে সিঙ্গেল লাইনে। এ লাইনে ট্রেনের স্বাভাবিক গতি ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু এখন ট্রেন চালাতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে। ফলে গন্তব্যে পৌঁছতে ২০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি হচ্ছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আজাদীকে জানান, চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন ১৪টি ট্রেন ছেড়ে যায়, আবার ফিরেও আসে। তবে কোনো ট্রেনই নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছায় না, ফিরেও আসছে না।
লাকসাম-আখাউড়া ৭২ কিলোমিটার ডাবল রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ যত দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার কথা সেইভাবে কাজ এগুচ্ছে না। শুধু প্রকল্পের সময় বাড়ছে আর পরিবর্তন হচ্ছে প্রকল্প পরিচালক। এই প্রকল্পে গত ৫ বছরে ৬ প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হয়ে এখন ৭ নম্বর প্রকল্প পরিচালক দিয়ে কাজ চলছে। প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের কাজ ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ৭ নম্বর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) দিয়ে কাজ চলমান রয়েছে। বারবার প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনকে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে দায়ী করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্পটির প্রথম পিডি ছিলেন সাগর কৃষ্ণ চক্রবর্তী। তিনি ওই সময়ে টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইন প্রকল্পেরও প্রধান ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় মো. লিয়াকত আলীকে। এই প্রকল্পের তৃতীয় পিডি ছিলেন মোজাম্মেল হক। প্রকল্পটির চতুর্থ প্রকল্প পরিচালক ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার (ডিএন মজুমদার)। এর পর প্রকল্পটির পঞ্চম প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল মো. আরিফুজ্জামানকে। কিছুদিন কাজ করার পর তাকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় রেলের বর্তমান যুগ্ম মহাপরিচালক (প্রকৌশল) রমজান আলীকে। তাকে সরিয়ে সর্বশেষ এই প্রকল্পের ৭ম পিডি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মো. শহিদুল ইসলামকে।
প্রকল্পের শুরুতে লাকসাম-আখাউড়া ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কবলে পড়ে। বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ৯০ শতাংশ নিরসন হলেও নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারছে না রেলওয়ে। ২৫ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় নতুন করে প্রকল্পটির ডিপিপি সংশোধন ও প্রকল্পের কার্যকাল বাড়ানোর আবেদন করা হলে-এখন সেই ব্যাপারে কাজ করেছে রেলওয়ে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের ১১৮ কিলোমিটার আগে থেকেই ডাবল লাইন ছিল। ২০০৮ সালের পর দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩১ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইন করা হয়েছে। বাকী ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন হিসাবে উন্নীতকরণে এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পটি ২০১৬ সালের নভেম্বরে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কোভিড-১৯ এর কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে দেয় সরকার। পরবর্তীতে প্রকল্প পরিচালক আবার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে আবারো ১ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ৭২ কিলোমিটার ডাবল লাইনের কাজ জন্য এত বেশি সময় আগে আর কোনো প্রকল্পে লাগেনি। এদিকে কাজের ধীরগতির কারণে চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথে চলাচলরত আন্তঃনগরসহ সকল ট্রেনের যাত্রা পথের সময় বেড়ে যাচ্ছে। দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনেক ছাত্রকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করা হয়
পরবর্তী নিবন্ধডবলমুরিংয়ে ছিনতাই চক্রের ৭ সদস্য গ্রেপ্তার