আধুনিকতার স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে আন্তরিকতা

সুব্রত কুমার নাথ | সোমবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান যুগ হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির, যান্ত্রিক ও দূরদর্শনকেন্দ্রিক। বর্তমানে যে কেউ সমাজ ব্যবস্থার সাথে জড়িত না হয়েও ফেসবুককেন্দ্রিক সামাজিকভাবে সম্পৃক্ত। এখন আমরা সরাসরি সাক্ষাৎ বা অংশগ্রহণ না করেও নানারকম ডিভাইসে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম। যাকে আমরা আধুনিক যুগ বলে জানি। এসব আধুনিকতা আমাদের জীবনকে করেছে অনেক বেশি সহজ। প্রযুক্তির কারণে পুরো দুনিয়াটাই এখন হাতের মুঠোয়। ঘরে বসেই এখন সবার সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব। কিন্তু এই আধুনিকতার কারণে আমাদের প্রাত্যহিক জীবন থেকে ক্রমশ লোপ পাচ্ছে সামাজিকতা, নৈতিকতা, আত্মীয়তা ও ধার্মিকতা। হারিয়ে যাচ্ছে বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা, মেধা বিকাশের চর্চা ও প্রতিযোগিতা, প্রিয়জনদের কাছে পত্র লেখার পারদর্শিতা সহ লেখালিখির দক্ষতা। বিলুপ্তির পথে খনার বচন, যাত্রা গান, কবি গান, পিঠা উৎসব সহ নানান লোকজ সংস্কৃতি। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এসব সনাতনী প্রথা ছাড়া কিছুই নয়। একসময় এসব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আমাদের পরস্পরকে কাছে টানতো, সম্প্রীতি ও আত্মীয়তার সখ্যতা বাড়াতো। পরিবারের সবাই একসাথে বসে সময় কাটাত, পিঠা পুলির আয়োজন চলতো, ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে চলতো, পরস্পরের প্রতি ভাব ভালোবাসা ছিল। গুরুজনদের প্রতি ছিল গভীর শ্রদ্ধাবোধ। ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পূজা পার্বণে নানা ধর্মের মানুষের মধ্যে ছিল সহনশীল মনোভাব ও সহাবস্থান। সময়ের ব্যবধানে এসব এখন মেকি ও লৌকিকতায় রূপ নিয়েছে। আধুনিকতার স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা। বিদেশি সংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। কিশোরদের হাতে নেই এখন বই, তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মোবাইলে। আজকাল মনের মাধুরী মিশিয়ে কাব্যিক ভাষায় কেউ আর প্রিয়জনের কাছে পত্র লেখেন না। পরিবারের অভিভাবকেরাও এত ব্যস্ত যে তাঁরা ছেলেমেয়েদের খেয়াল রাখতে পারেন না। সন্তানদেরকে নীতিকথা বলারও সুযোগ হয় না। আজকাল শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের শ্রদ্ধাবোধ, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা চোখে পড়ে না। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবতা আজ বিবেককে তাড়িত করে না। আজ ব্যস্তময় জীবনে কেউ কাউকে দুদণ্ড সময় দিতে প্রস্তুত নয়। আমরা এখন অনেকটা যান্ত্রিক হয়ে গেছি। ফলে সমাজের সর্বত্র দুর্নীতি, অনৈতিকতা সহ ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় দৃশ্যমান। যত্রতত্র কিশোর গ্যাং সৃষ্টি সহ কিশোর কিশোরীরা অপসংস্কৃতির দিকে ছুটছে। যা আমাদের জন্য সুখকর নয়। তাই, সুশৃঙ্খল ও সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ সহ সকলের মধ্যে বিবেকবোধ জাগানোর জন্য চাই আদর্শ পরিবার যেখানে ধর্ম ও নৈতিকতার চর্চা হবে। সৃজনশীল ও মানবিক মানুষ হতে প্রেরণা যোগাবে। সন্তানদের শুধু শিক্ষিত নয় প্রকৃত মানুষ তৈরিতে পরিবারই প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে, তবেই একটি সুশীল সমাজ ও জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে আসন সংখ্যা বাড়ানো হোক
পরবর্তী নিবন্ধপ্রত্যেকের আত্মসম্মানবোধ বজায় রাখা উচিত