ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ করার জন্য বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজনবোধ থেকে তারা জামায়াত ও সমমনা আট দলের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর ভিত্তিতে তারা নির্বাচনি সমঝোতায় একমত হয়েছেন।
গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর বাংলা মোটরে নিজেদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে নাহিদ ইসলাম বলেন, এই নির্বাচনি সমঝোতা একদিকে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার জন্য; একইসঙ্গে সংস্কার, বিচার ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে এক থাকার। তার ভাষ্য, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই দলীয় সিদ্ধান্ত জানানোর জন্যই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ডামাডোলের শুরুতে নিজেরা এককভাবে অংশ নিতে প্রস্তুতের কথা জানালেও মাস ঘুরতেই দলটির আহ্বায়কের এমন ঘোষণার মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটের গুঞ্জনই সত্য হলো। এর আগে বিকালে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান আট দলীয় জোটের সঙ্গে এনসিপির যোগ দেওয়ার কথা জানান। এর ঘণ্টা তিনেক পরেই দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন নাহিদ। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কদের একজন এবং সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে প্রথম থেকে বলে এসেছি, আসন্ন এই নির্বাচনে আমরা এককভাবে অংশগ্রহণ করতে চাই, ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চাই। সে অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা চলছিল। পরবর্তীতে আরও দুইটি দলের সাথে আমাদের রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছিল সংস্কার প্রশ্নে।
কিন্তু হাদিকে প্রকাশ্যে গুলি করার পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেক বেশি পরিবর্তন হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারছি বাংলাদেশে আধিপত্যবাদী ও আগ্রাসনী শক্তি এখনো কার্যকর রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যাদের আমরা পরাজিত করেছিলাম, তারা এখনো চক্রান্ত করছে নির্বাচন বানচাল করার জন্য। তারা চক্রান্ত করছে সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার জন্য। তারা চক্রান্ত করছে জুলাই প্রজন্মকে নিঃশেষ করার জন্য। এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করেছি।
এই নির্বাচন সুষ্ঠু, প্রতিযোগিতাপূর্ণ করতে এবং আধিপত্যবাদী কোনো শক্তি যেন গণ অভ্যুত্থান–পরবর্তী অগ্রযাত্রা ঠেকাতে না পারে সেজন্য বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা মনে করেন তারা। সেই তাগিদ থেকে আমরা জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমমনা আট দলের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের যে নির্বাচনি সমঝোতা, এনসিপি সেই নির্বাচনি সমঝোতায় একমত হয়েছে। আমরা এনসিপি এই সমমনা আট দলের সঙ্গে একত্রে নির্বাচন করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ) আমাদের প্রার্থীর বিষয়টি চূড়ান্তভাবে ঘোষণা দেব এবং সমঝোতায় আমাদের যে প্রার্থী তারাই মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। সারা দেশে আমরা একত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যের প্রশ্নে অনেকে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন–এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, এনসিপির যে নির্বাহী বডি সেখানে আলোচনা করেছি। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে অনেকের বিরোধিতা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি নির্বাচন করবেন কিনা, দলে থাকবেন কিনা সেটা তার একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমরা মনে করি সারা দেশ থেকে এনসিপির যারা নেতাকর্মী রয়েছেন, সবার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ঐকমত্য রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এ সময় মুখ্য সংগঠক মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।












