আদর্শের প্রশ্নে বেঈমানি করেননি কায়সার

স্মরণসভায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১০ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেছেন, আতাউর রহমান কায়সার বঙ্গবন্ধু, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আদর্শের প্রশ্নে কখনো বেঈমানি করেননি। সামরিক শাসকরা তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল। তিনি আপস করলে সে সময় মন্ত্রী হতে পারতেন। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে তিনি যা পেয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। কোনো সময় তার মধ্যে না পাওয়ার বেদনা প্রকাশ পায়নি। ১/১১ এর সময় তিনি সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। চট্টগ্রামের গৌরব ছিলেন আতাউর রহমান খান কায়সার। আওয়ামী লীগের মত দেশপ্রেমিক দলই আতাউর রহমান খান কায়সারের জন্ম দিয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর রীমা কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক রাষ্ট্রদূত প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, আমি-কায়সার-বাবুর মধ্যে একটা ভালো মিলমিশ ছিল। আওয়ামী লীগের কঠিন দুঃসময়ে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে কায়সার, এম এ মান্নান, মহিউদ্দিন চৌধুরী, বাবু ভাইয়েরা কোনোদিন পিছপা হননি। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার সময় যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামে আমরা এক সাথে কাজ করেছি।
স্মরণসভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি বলেন, আতাউর রহমান খান কায়সার অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার মত ভালো মানুষের দেখা পাওয়া খুবই কঠিন। আজকে শুধুমাত্র বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় কিছু বিরোধী দল। অথচ তারাও সরকারে ছিল, দেশের কোনো উন্নয়ন করতে পারেনি, তারাই আজ আমাদের সমালোচক। আজকে টেলিভিশন খুললেই একজন ব্যক্তিকে পাবেন। তিনি বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। তার জন্য মায়া হয় আমার, তিনি শিক্ষিত মানুষ। বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে শিক্ষার আলো নেই। এসএসসি পাশ করেছেন কি না সন্দেহ আছে। শিক্ষার আলো নেই বলেই তিনি জাতির পিতাকে হত্যার দিনে কেক কেটে উল্লাস করতে পারেন। অথচ বেগম জিয়ার জন্মদিন কখনোই ১৫ আগস্ট ছিল না। ১৯৯৩ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী, তখন হঠাৎ তিনি ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনের ঘোষণা দিয়ে জাতির শোকের দিন নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতে শুরু করেন। মায়ের মতো তারেক রহমানের মধ্যেও শিক্ষার আলো নেই মন্তব্য করে সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, তারেক রহমানের মধ্যে যদি শিক্ষার আলো থাকত, তাহলে আন্দোলনের নামে তিনি বাসে পেট্রোল বোমা মেরে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো পৈশাচিক কাজ করতে পারতেন না। আন্দোলন-সংগ্রাম আমরাও করেছি। কিন্তু বাসে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা- এর নাম আন্দোলন নয়। তারেক রহমানের নির্দেশে ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিনশ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। হানিফ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপিকে মানুষ কেন ভোট দেবে? পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে মির্জা ফখরুল বললেন, আওয়ামী লীগ থেকে বাঁচার জন্য ভোট দেবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার মতো-আপনাদের সামর্থ্য নেই। কারণ এই দেশের জনগণ আপনাদের সাথে নেই। এই দেশের জনগণ আপনাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই দেশের জনগণ আর আপনাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনবে না। সেই আশা দুঃস্বপ্নই থেকে যাবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেন, কায়সার ভাই যে প্রজন্মের নেতা সেই সময়ে আমরা নিজেকে কর্মী হিসেবেও গড়ে তুলতে পারিনি। তার মধ্যে বড় গুণ ছিল-তিনি কর্মী-বান্ধব নেতা ছিলেন। তার মধ্যে অহংকার-অহমিকা দেখিনি কখনো। ওয়ান ইলেভেন যখন আসে, নেত্রী শেখ হাসিনা যাদের নেতা বানিয়েছিলেন, দলের বিভিন্ন পদ-পদবী দিয়েছিলেন, তাদের অনেক রাজনৈতিক নেতা সেদিন বিশ্বাসঘাতকতা করে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। তখন একমাত্র কায়সার ভাই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে সুধাসদনের সামনে গিয়ে নেত্রীর পক্ষে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। নেত্রীর প্রতি বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিতে তিনি অন্য নেতাদের মতো কুণ্ঠাবোধ করেননি। তিনি সবসময় আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক, মরহুমের কন্যা ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি বলেন, আমার প্রয়াত পিতা-মাতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। তারা যা করেছেন তাদের আদর্শ যেন ধারণ করতে পারি। নেত্রীর নির্দেশিত কাজগুলো যেন সঠিকভাবে করতে পারি এই দোয়া চাই। রাজনীতি সবাইকে নিয়ে করতে হয়। রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেম না থাকলে, সাধারণ মানুষের প্রতি দরদ না থাকলে, লোভ পরিহার করতে না পারলে রাজনীতি হয় না। আমার পিতা সেই শিক্ষা আমাকে দিয়ে গেছেন।
আওয়ামী লীগ উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আজকে যখন আদর্শহীনতা রাজনীতিকে গ্রাস করে ফেলছে এই সময়ে কায়সার ভাইকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন রাজনীতিতে নীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ কতখানি দরকার। বড় মাপের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন কায়সার ভাই। বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে কায়সার ভাইয়ের ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, কায়সার আঙ্কেলকে দেখেছি, নেত্রীর খুবই বিশ্বস্ত ছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় আমার বাবা জেলে ছিলেন, তখন আমাদের দুঃসময়। অনেক বিষয়ে অনেক নেতাকে ফোন করে সহযোগিতা পাইনি। ব্যতিক্রম ছিলেন কায়সার আঙ্কেল। তিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, নেত্রীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। অর্থবিত্তের কোনো মোহ তার ছিল না। থাকলে তিনি দেশের অন্যতম সেরা ধনী হতে পারতেন।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপির সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান রহমানের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরো বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অ্যাড. সুনীল সরকার, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, আবুল কালাম চৌধুরী, অ্যাড. একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এস এম আবুল কালাম, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, জসীম উদ্দিন শাহ, মহানগর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, কাউন্সিলর হাসান মাহমুদ হাসনী, দক্ষিণ জেলা আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. মির্জা কছির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. জহির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, দপ্তর সম্পাদক আবু জাফর, শ্রম সম্পাদক খোরশেদ আলম, শিক্ষা সম্পাদক বোরহান উদ্দিন এমরান, তথ্য সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন, ধর্ম সম্পাদক আবদুল হান্নান চৌধুরী মঞ্জু, কৃষি সম্পাদক অ্যাড. আবদুর রশিদ, বন সম্পাদক অ্যাড. মুজিবুল হক, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়ুয়া, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান, চন্দন ধর, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন বাবলু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য সৈয়দুল মোস্তফা চৌধুরী রাজু, মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর, মাহবুবুল আলম সীবলী, ছিদ্দিক আহমদ বি.কম, এ কে আজাদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, মহানগর যুবলীগ আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, সাতকানিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল মোতালেব, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন, উত্তর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তানভীর আহমেদ তপু, মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজপথের সহযোদ্ধার জন্য কাঁদলেন মোশাররফ
পরবর্তী নিবন্ধভ্যাপসা গরমে নগর জীবন অতিষ্ঠ