আত্মসাতের ১০ লাখ টাকাসহ ক্লিফটন গ্রুপের অফিস সহকারী গ্রেপ্তার

ছিনতাইয়ের নাটক

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েও পার পেলেন না রিপন। নাটকের অংশ হিসেবে অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের উপর্যুপরি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করতে বাধ্য হন- প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ততার সুযোগ নিয়ে সে দশ লাখ টাকা নিজে আত্মসাত করে ডিবি পুলিশ ছিনতাই করে নিয়ে গেছে বলে নাটক সাজিয়েছিল। পুলিশ অভিযুক্ত রিপন ও তার সহযোগী সেলিমকে গ্রেপ্তার করে এবং উদ্ধার করে আত্মসাতকৃত দশ লাখ টাকা।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আজাদীকে বলেন, ক্লিফটন গার্মেন্টসে ফিনিশিং বিভাগের অফিস সহকারী আব্দুর রহিম ওরফে রিপন (৩১) দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ততার সুযোগ কাজে লাগিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। মূলত পিয়নের চাকরির পাশাপাশি রাজীব নামে এক ব্যক্তির সাথে দীর্ঘদিন আগে অংশীদারে গ্লাসের ব্যবসায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই কাল্পনিক ছিনতাইয়ের এই কাহিনী তৈরি করে। রিপনের পাশাপাশি তার সহযোগী রেল কর্মচারী সেলিমকেও (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর রিপনকে নগরীর কাজীর দেউড়ি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে স্টেশন রোডের স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংকে জমা দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন অফিসের হিসাব রক্ষক। রিপন ব্র্যাক ব্যাংক থেকে টাকা তুললেও সেই টাকা অফিসে কিংবা স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংকে জমা না দিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান। পরদিন রাতে বাসায় ফিরে মাথায় আঘাত পাওয়ার কথা বলেন রিপন। পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। এদিকে রিপনের খোঁজ না পেয়ে ক্লিফটন গ্রুপের পক্ষ থেকে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলা তদন্তের এক পর্যায়ে গত মঙ্গলবার ন্যাশনাল হাসপাতালে রিপনের অবস্থান শনাক্ত করা হয় বলে জানান ওসি নেজাম।
জিজ্ঞাসাবাদে রিপন পুলিশকে বলেন, নূপুর মার্কেটের কাছে ডিবি পরিচয় দিয়ে দুই লোক তাকে সিএনজি টেক্সিতে তুলে নেয়। তারপর মোবাইল ও ব্যাগ কেড়ে নিয়ে তাকে বায়েজিদ লিঙ্ক রোডে নিয়ে যায়। সেখানে পানি খাওয়ার পর তিনি সংজ্ঞা হারান এবং চেতনা ফেরার পর নিজেকে অলঙ্কার এলাকার একটি ঝোঁপের ভেতর আবিষ্কার করেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন। জ্ঞান ফিরে দেখতে পান, টাকার ব্যাগ আর তার মোবাইল নেই। পরে এক বৃদ্ধ লোকের সহায়তায় বাসায় ফিরে যান।
ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, রিপনের কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তার বর্ণনা দেওয়া ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু এ ধরনের কিছু দেখতে না পেয়ে সন্দেহের মাত্রা বেড়ে যায়। চিকিৎসকরা রিপনের শারীরিক অবস্থা ‘ভালো’ বলায় মঙ্গলবার তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতের অনুমতি নিয়ে এক দিনের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রিপন স্বীকার করেন কোম্পানির টাকা তিনি এক বন্ধুকে রাখতে দিয়েছেন। পরে বুধবার রাতে টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে অভিযান চালিয়ে রিপনের বন্ধু সেলিমকে আটক করে পুলিশ। তার বাসা থেকেই ১০ লাখ টাকা, রিপনের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় রিপনের পাশাপাশি সেলিমকেও আসামি করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান কোতোয়ালী থানার ওসি। তিনি বলেন, রিপন সাত বছর ধরে ক্লিফটন গ্রুপে চাকরি করছিলেন। আগেও তার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন ও জমার কাজ করিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। সে কারণে তিনি সবার কাছে বিশ্বস্ত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনেই কোনো ঋণ নেই পাওনাদার
পরবর্তী নিবন্ধসাগরিকায় কাভার্ডভ্যান চাপায় রিকশাচালক ও পথচারী নিহত