আতশবাজির আলোকচ্ছটায় হ্যাটট্রিক শিরোপা উদযাপন আবাহনীর

খেলোয়াড়দের ভাগ্যে জুটল না একটি মেডেল

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ২৪ মে, ২০২৪ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

শেষ হলো তিন মাসের বিশ্বের সবচাইতে লম্বা ক্রিকেট লিগ। চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের শেষ দিনে আতশবাজির আলোকচ্ছটায় নিজেদের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের উৎসব করল আবাহনী। চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ক্রিকেটে প্রথমবারের মত হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আবাহনী। শুধু তাই নয় তিন বছরে ৩৩ ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটি ম্যাচ হেরেছে তারা। গতকাল বন্দর ক্রীড়া সংস্থার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল কেবলই আনুষ্ঠানিকতার। আর সে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচেও পুরো শক্তির দল নিয়ে মাঠে নেমেছিল আবাহনী। আর ম্যাচে একেবারে খড়খুটোর মত উড়িয়ে দিয়েছে বন্দর ক্রীড়া সংস্থাকে। শেষ ম্যাচে আবাহনীর জয়টা ২৭২ রানের বিশাল। নিজেরা ৩২২ রানের পাহাড় গড়ার পর বন্দর ক্রীড়া সংস্থাকে মাত্র ৫০ রানে অল আউট করে দিয়েছে। যা এবারের লিগে কোন দলের সর্ব নিম্ন দলীয় ইনিংস। আর আবাহনী জিতল সবচাইতে বড় ব্যবধানে।

এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে সকালে টসে জিতে আবাহনী ব্যাট করার আমন্ত্রন জানিয়েছিল বন্দর ক্রীড়া সংস্থা। শুরুটা ধীর গতির করলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে থাকে আবাহনীর ব্যাটাররা। বিশেষ করে দলটির ঢাকার ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ব্যাটকে রীতিমত তরবারি বানিয়ে কচু কাটা করেছেন প্রতিপক্ষ বোলারদের। বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মাত্র ৫২ বলে করেছেন ১০১ রান। যেখানে তিনি মেরেছেন ১১টি চার এবং ৭টি ছক্কা। মোসাদ্দেক ছাড়া ওপেনার তাজুল ৫৩ বলে ৪৭, মোমিনুল হক ২৪ বলে ৩৪, আজাদ ২০, হান্নান ৩৫ বলে ৪৫ এবং মহিউদ্দিনের ২৩ বলে ২১ রানে রানের পাহাড়ে চড়ে আবাহনী। বন্দর ক্রীড়া সংস্থার পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তন্ময় এবং ফখরুল।

৩২৩ রানের বিশাল পাহাড়। এই পাহাড় ডিঙিয়ে ম্যাচ জেতা যে কঠিন সেটা বেশ ভালই জানা ছিল বন্দর দলের ব্যাটারদের। কিন্তু বিশাল এই রানের চাপে যে একেবারে তাসের ঘরের মত হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে বন্দর দলের ব্যাটিং সেটা বোধহয় কল্পনাও করেনি দু দলের কেউই। দলের দুই ওপেনার ফিরেন রানের খাতা খোলার আগেই। তিন নাম্বার এবং চার নাম্বারে মেহেদী হাসান এবং ইকবাল বাহার কেবল দুই অংকের ঘরে যেতে পেরেছে। বাকিদের কেউই দুই অংক স্পর্শ করতে পারেনি। ফলে ১৬.২ ওভারে মাত্র ৫০ রানে অল আউট হয় বন্দর ক্রীড়া সংস্থা। মেহেদী ১৩ এবং ইকবাল করেন ১৬ রান। আবাহনীর পক্ষে ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন শোয়েব। ৩টি উইকেট নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ। ২টি উইকেট নিয়েছেন মোসদ্দেক সৈকত। এবারের লিগে সেরা পারফরমার হিসেবে রয়েল হাট প্রদত্ত মোটর সাইকেল পেয়েছেন আগ্রাবাদ নওজোয়ান ক্লাবের মিনহাজ উদ্দিন সৌরভ।

খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ... নাছির উদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর চেয়ারম্যান মির্জা সালমান ইস্পাহানী। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস এর সভাপতিত্বে এবং সিজেকেএস নির্বাহী সদস্য হাসান মুরাদ বিপ্লবের সঞ্চালনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিজেকেএস ক্রিকেট কমিটির সম্পাদক এ.কে.এম আবদুল হান্নান আকবর। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিজেকেএস সহসভাপতি মো: হাফিজুর রহমান, সৈয়দ আবুল বশর, এ্যাডভোকেট শাহীন আফতাবুর রেজা চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য গোলাম মহিউদ্দীন হাসান, মোহা: শাহজাহান, মোহাম্মদ দিদারুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার জসীম উদ্দিন, আকতারুজ্জামান, মোহাম্মদ রাশেদুর রহমান মিলন, মো: এনামুল হক, জেলা ক্রীড়া অফিসার হারুন অর রশিদ, সাবেক নির্বাহী সদস্য আ... ওয়াহিদ দুলাল, সিজেকেএস ক্রিকেট কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মো: শওকত হোসেন, সিজেকেএস কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান মাহবুব, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আলী হাসান রাজু, সাইফুল আলম খান সহ কর্মকর্তাবৃন্দ। লিগে চট্টগ্রাম আবাহনী হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়ে রেকর্ড গড়লেও দলেল ক্রিকেটারদের ভাগ্যে জুটেনি কোন মেডেল। তবে আবাহনী তার ক্রিকেটারদের হতাশ হতে দেয়নি। তারা নিজেরাই চ্যাম্পিয়ন মেডেল বানিয়ে এনেছিল। আর ম্যাচ শেষে সেটা পরিয়ে দিয়েছেন খেলোয়াড়দের গলায়। সিজেকেএস ক্রিকেট সম্পাদক আবদুল হান্নান আকবর জানান তারা ক্রিকেটে কখনোই কোন মেডেল দেননা। অথচ এই মেডেলটা একজন খেলোয়াড়ের কাছে অনেক মূল্যবান। অন্য সব ইভেন্টে মেডেল দেওয়া হলেও ক্রিকেটে কেন দেওয়া হয়না তেমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এই বিষয়ে কেউ কখনো বলেনি। আমার মুখ থেকেই নাকি প্রথম শুনলেন। সামনে সেটা বিবেচনা করবেন বলে জানালেন তিনি। এদিকে দেশের সবচাইতে ধনী ক্রীড়া সংস্থা চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের ট্রফি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে চ্যাম্পিয়ন দলের কর্মকর্তারা। তারা বলেন এতটাকা খরচ করে আমরা দল গড়ি। অথচ নিজের ঘরে রাখার মত একটি ট্রফি দেওয়া হয়না। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের চ্যাম্পিয়নদের যে ট্রফি দেওয়া হয়েছে তার চাইতে ভাল ট্রফি নাকি এখন পাড়া মহল্লার টুর্নামেন্টেও দেওয়া হয়। যা সত্যিই দুঃখজনক। তবে নিজেদের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় উদযাপন করতে আয়োজনের কমতি রাখেনি আবাহনী। সকাল থেকে ব্যান্ড বাজিয়ে মুখর করে রাখে স্টেডিয়াম। খেলা শেষে আতশবাজি পুড়িয়ে উদযাপন করা হয় হ্যাটট্রিক শিরোপা। কারণ এমন ক্ষণতো আর সব সময় আসে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিনহাজ উদ্দিন সৌরভ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের সেরা খেলোয়াড়
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ৬.৯০ কোটি টাকা