আট বছরেও বরাদ্দ মেলেনি ৪ হাজার অটোরিকশার

চট্টগ্রামে বেকার ১০ হাজার চালক অতিরিক্ত চাহিদায় দাম বাড়ছে নিবন্ধিতগুলোর

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

২০১৩ সালে মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সিদ্ধান্তের ৮ বছরেও চট্টগ্রামে বরাদ্দ মেলেনি ৪ হাজার অটোরিকশার। সময়ের ব্যবধানে চাহিদা বাড়ার কারণে একদিকে পুরোনো নিবন্ধিত ১৩ হাজার অটোরিকশার দাম বাড়ছে হু হু করে, অন্যদিকে কর্মসংস্থান মিলছে না বেকার ১০ হাজার অটোরিকশা চালকের। তাছাড়া অবৈধ কিংবা অনিবন্ধিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য বেড়েছে নগড়জুড়ে।
সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৩ হাজার করে ২৬ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। এসব গাড়ির মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ বছর করে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের ১৩ হাজার অটোরিকশার মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ১২ হাজার অটোরিকশার স্ক্র্যাপ করার পর প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ সড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তৎকালীন চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) আ.ল.ম. আবদুর রহমান ‘চট্টগ্রাম শহরে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার তুলনায় সিএনজি অটোরিকশার নির্ধারিত সিলিং সংখ্যা কম’ উল্লেখ করে নিবন্ধিত ১৩ হাজারের বাইরে অতিরিক্ত আরও ৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। পরে আলোচনার প্রেক্ষিতে সভায় চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য অতিরিক্ত ৪ হাজার সিএনজি অটোরিকশা বরাদ্দ দিয়ে নিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা ১৭ হাজারে উন্নীত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য বরাদ্দ নীতিমালা তৈরির জন্য বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই বছরের ৯ এপ্রিল ‘সিএনজি/পেট্রোলচালিত ৪-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার সার্ভিস নীতিমালা, ২০০৭’ সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য অনুরোধ জানিয়ে সড়ক বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয় বিআরটিএ চেয়ারম্যান। একইসাথে একটি খসড়া প্রজ্ঞাপনও সড়ক বিভাগের সচিবকে দেওয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্যকারণে দীর্ঘ ৮ বছরে ওই প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারেনি সড়ক বিভাগ।
অন্যদিকে ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহার ও জেলা প্রশাসক মো. শাসুল আরেফিনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগরীতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সভাতেও নতুন করে ৪ হাজার অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশনের অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। বিগত চার বছরেও সেই সুপারিশও কার্যকর করেনি বিআরটিএ। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২০০১ সালে ১৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়। বিগত ২০ বছরে চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গাড়ির চাহিদাও বেড়েছে। সময়ের ব্যবধানে বৈধ লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু নতুন সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা বাড়েনি। প্রতিনিয়ত চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মহানগরীতে নিবন্ধিত অটোরিকশাগুলো একেকটি ১৪ লক্ষ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অথচ একটি নতুন গাড়ির নিবন্ধন খরচসহ মূল্য ৪ লাখ টাকার বেশি নয়।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের মার্চে মন্ত্রণালয়ের এক সভায় চট্টগ্রামে আরও ৪ হাজার অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আজও সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। ওই সময়েই খসড়া নীতিমালাও প্রস্তুত করা হয়েছিল। সিলিং বৃদ্ধি করে গাড়িগুলো নিবন্ধন দেওয়ার জন্য আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। অথচ উচ্চ আদালত ২০১৮ সালে যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই নির্দেশনাও এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এ শ্রমিক নেতা বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতেই ২৩-২৫ হাজার হালকা লাইসেন্সধারী চালক রয়েছেন। গাড়ির অপ্রতুলতার কারণে যার মধ্যে ৮-১০ হাজার চালক বেকার রয়েছেন। অনেকে বদলী হিসেবে গাড়ি চালালেও মাসের বেশিরভাগ সময় তারা বেকার বসে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে রয়েছে। তিনি তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএ’র এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি নীতিমালার কারণে চট্টগ্রাম মেট্রো এলাকাতে ১৩ হাজারের বেশি অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ নেই। নতুন ৪ হাজার অটোরিকশার নিবন্ধন দিতে হলে আগে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন লাগবে। যদি প্রজ্ঞাপন জারি হয় তাহলে নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন জটিলতার থাকবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাল করোনার টিকাদান বন্ধ থাকছে
পরবর্তী নিবন্ধশহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে একসঙ্গে ৫ জনের বেশি নয়