আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো জরুরি

| বৃহস্পতিবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

নানারকম অজুহাতে বাড়ছে চালের দাম। গত বছর বেড়েছে দফায় দফায়। এ বছরও তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। এরকম অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। রমজান আসার বাকি আরো অনেক দিন। তবু তার আগেই চালের বাজার নিয়ে চালবাজি শুরু হয়ে গেছে। একটা সিন্ডিকেট অত্যন্ত কৌশলে চালের বাজার অস্থির করার পেছনে কাজ করছে। কিছু মিল মালিক ও শিল্পগ্রুপ চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক অভিযান ও উদ্যোগ নেওয়ার পরও চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে না আসা দুঃখজনক। অন্যদিকে, চিনির বাজারও উর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীদের পক্ষে অভিযোগ হলো সরকার গত বছরের চিনির আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে দিলে দামের ওপর তার প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ চিনির দাম কমে যায়। কিন্‌তু এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে উঠানামা করছে মূল্য।
চাল-চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সঙ্গতি নেই। সাধারণ মানুষ এসব ক্রয় করতে তাদের অপারগতার কথা ব্যক্ত করেছেন গণ মাধ্যমে। শুধু চাল-চিনি নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় অন্য দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে শংকিত করেছে তুলেছে। পেঁয়াজ-রসুনের দামও স্থিতিশীল নয়। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা নানারকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তাঁরা বলেন, বর্তমানে হিলিতে ভারতীয় পেঁয়াজ না থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ পড়েছে বেশি। খুচরা বাজারে তেমন দেখা যাচ্ছে না দেশি পেঁয়াজ। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম হওয়ায় এই সংকট। এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে আগামীতে পরিস্থতির আরো অবনতি হবে। তাই সুষ্ঠুভাবে তদারকি দরকার। চাল, চিনি, পেঁয়াজের বাজার নিয়ে কারসাজি নতুন নয়; একেকটা সিন্ডিকেট তার পেছনে ক্রিয়াশীল। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরির করার সুযোগ পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেসরকারিকরণ, মুক্তবাজার, অবাধ বাণিজ্য ও শুল্ক হ্রাস-সবই বাণিজ্য উদারীকরণের অন্তর্ভুক্ত। বাণিজ্য উদারীকরণ বলতে শুধু মূল্য ও পণ্য আমদানি নয়, সেবা আমদানিও বোঝায়। বিশেষ করে, কারিগরি ও জীবন রক্ষাকারী সেবা সার্ভিস এই শ্রেণিতে পড়ে। কাজেই সেবাপণ্য বাদ দিয়ে কেবল জড়পণ্য আমদানি হলেই বাণিজ্যের উদারীকরণ ঘটে না। একটি ছাড়া অন্যটি অর্থহীন। এমনকি প্রতিউৎপাদকও বটে। ব্যাংকিং, কনসালট্যান্সি, আর্থ ও অন্যান্য সার্ভিস আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ ইতোমধ্যে তুলে দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক উদারীকরণকে তার যথাপ্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠা ও এই ব্যবস্থায় আরো ভারসাম্য আনার জন্য বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা উচিত। একথা আজ অস্বীকার করা যায় না যে, বাংলাদেশের আঞ্চলিক বাণিজ্যের একটা মোটা অংশ দেশের তিন দিকের ফাঁক-ফোকরে ভরা দীর্ঘ সীমান্তে তৎপর একটা বড় আকারের চোরাচালানী নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। বাস্তবিক পক্ষে, এই চোরাচালান ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য বাংলাদেশের আইন সিদ্ধ বৈধ ব্যবসায়ের জন্য প্রকট সমস্যা হয়ে উঠেছে। চোরাচালান কমাতে সরকারকে অবশ্যই এক স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতির মতোই চোরাচালান বিত্তের অবৈধ সঞ্চয় গড়ে তোলে। চোরাচালানীরা দেশে সংগঠিত অপরাধে মদদ জোগায়। চোরাচালান জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়। চোরাচালান কমাতে হলে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য অবশ্যই বাড়াতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, অর্থনৈতিক সামর্থ্যই উন্নয়ন ও অস্তিত্ব রক্ষার মূল চাবিকাটি। সরকার ও বেসরকারি খাতের মধ্যে বলিষ্ঠ একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য উপযুক্ত চাপ ও রাজনৈতিক অভিপ্রায় গড়ে তুলতে হবে। পণ্য ও সেবাপণ্যের অবাধ বাণিজ্যকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হলে কতগুলো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। এগুলো হলো : আঞ্চলিক পণ্যে কোনো করারোপ নয়; বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে; বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের রীতিপদ্ধতিগুলো সামঞ্জস্য করতে হবে; পণ্য ও সেবাপণ্যের সহজতর চলাচলের জন্য শুল্কায়ন পদ্ধতি সহজতর করা। আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের লক্ষ্যে উন্নততর অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধইস্তোনিয়ার জাতীয় দিবস