আজাদীকে ঘিরে আমার সুখস্মৃতি

পারভীন আকতার | রবিবার , ২২ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

তখন আমার বয়স আনুমানিক নয় কিংবা দশ। কর্ণফুলী অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল আমাদের বাপ দাদার জনবসতি। আমার জন্ম কর্ণফুলীর তীরেই। সেজন্যই হয়তো আমার প্রমত্ত উত্তাল জলরাশি খুবই ভালো লাগে। নদীর কূল ভাঙ্গার শব্দ এখনো যেন কানে বাজে। নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে আমাদের মূল বসতবাড়ি। আস্ত একটা পুকুর নদীটি চোখের সামনেই গিলে ফেলেছে। শৈশবের সেই পুকুরের গোসলের দৃশ্য এখনো মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখি। একদিন এক সাংবাদিক ক্যামেরা হাতে নদীর এদিক ওদিক ঘুরছেন। আমি আর আমার চাচাতো বোন ফেরদৌসী বেশ সই পেতে নদীর ২০ ফিট উপর থেকে দিতাম লাফ একেবারে নদীর মাঝে ভেসে উঠতাম। সাংবাদিক সাহেব বেশ মনোযোগ দিয়ে আমাদের খেলা দেখছিলেন। তিনি আমাকে ডাকলেন। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। পরে সাহস করে এগিয়ে গেলাম। বললেন,”ঐ নৌকাটায় আমাকে উঠিয়ে দাও, ছবি তুলবো।” কি জানি আমার ক্ষ্যাপা চালচলনে উনার হয়তো ভরসা জেগেছিল যে দূরের জেলের সেই নৌকায় আমিই উনাকে চড়াতে পারবো। হুকুম মতো কাজ। উনাকে নৌকায় উঠিয়ে দিলাম। দাঁড় বাইছি আমি। আমি বেশ পটুই ছিলাম। জেলেদের সাথে সখ্যতা আমার আজন্ম। যেভাবেই হোক লুকিয়ে হলেও আমি সব বাঁদরামি শিখেছি। মাছ ধরা থেকে নৌকা চালানো সব। সাংবাদিক সাহেব ডাকলেন, খুকী তোমার নাম কী? বললাম, পারভীন। তিনি হাতের ক্যামেরায় আমাদের ছবি তুলেছেন বললেন। আশেপাশের নদী ভাঙ্গনের অনেক ছবিই তুলেছিলেন। আমরা তখন গোসল করে নদীর ধারে রোদে কাপড় শুকাতে দিতাম। আমাদের বাড়ীতে সুপেয় পানির অভাব ছিল না। কিন্তু নদী কাছেই ছিল বলে বড্ড টানতো। এই কর্ণফুলী নদী আমার প্রাণ। লোকটি বিকেল পর্যন্ত ছিলেন। আমি বাড়ীতে থেকে উনার জন্য কী যেন নাস্তা নিয়ে গিয়েছিলাম আজ তা মনে নেই। শুধু মনে আছে যাওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, “তোমরা দাঁড়াও, আরেকটা ছবি তুলি।” আমি আর আমার চাচাতো বোন ফেরদৌসী হাতে এক গাদা শুকানো কাপড়সহ আমি গেঞ্জি পরা ছবি তুললাম। ওমা, একি কান্ড! কয়েকদিন পর দেখলাম, আমার সেই ছবিটা আজাদীতে বড় করে ছাপানো হয়েছে! সেকী যে খুশি সবাই! আমার মনে পড়ে সেই প্রতিবেদনের পর আমরা নদী ভাঙ্গন থেকে কিছুটা রক্ষা পেয়েছিলাম। না হয় বর্তমান যে আমাদের পৈত্রিক ভিটেমাটি আছে তাও বিলীন হয়ে যেতো নদী বক্ষে। সেই সুখ স্মৃতি আজো মনকে দোলা দেয়। বাড়ীতে তখন থেকেই আজাদী পড়া হতো। হয়তো আমার জন্মের আগ থেকেই। শিশুকাল থেকেই আজাদী পড়ে, স্পর্শ করেই বড় হওয়া। আজ যখন নিজের লেখা ছাপানো হয় প্রিয় আজাদীতে, অনেক যত্ম করে তা রাখি যাতে আমাদের আগামী প্রজন্ম প্রিয় আজাদীকে আমাদেরই মতো বুকে আগলে রাখে। ভালোবাসি আজাদী, ভালোবাসবো আজীবন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলুন সত্য বলার চেষ্টা করি
পরবর্তী নিবন্ধজানাজায় বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ