দৈনিক আজদী ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২; ৬৩ বছরে পা রাখল। তার জন্ম ১৯৬০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। আজাদী নাম বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় আজাদ অর্থ স্বাধীন, আজাদী – স্বাধীনতাকে ধারণ করে যে পত্রিকা। জন্ম লগ্ন থেকে দৈনিক আজাদীর সংগ্রামী জীবন। অজস্র বাধা, বিপত্তি, ঝড়, ঝঞ্জাট পেড়িয়ে আজ সফল, পূর্ণ জাতীয় দৈনিকের সমতূল্য একটা পত্রিকা। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী। এই পত্রিকার স্বপ্নদ্রষ্টা প্রথিতযশা সাংবাদিক, চট্টলার গৌরব মরহুম ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সাহেব এই পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। সেই দিন তিনি ভেবেছিলেন, অবহেলিত চট্টগ্রামবাসীর দুঃখ, দুর্দশা, উন্নয়নের কথা সরকার ও জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে এই পত্রিকার মুখ্য উদ্দেশ্য। আজাদী ইতিহাস ও তথ্যের উৎস। আজাদী শুধু শিল্প সাহিত্য নয়, সামাজিক আন্দোলন ও জনমত গঠনে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসা। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামবাসীর সর্ব প্রকার ন্যায্য দাবী ও সংগ্রামী মনোভাব আজাদীতে তুলে ধরা হয়। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব অসীম সাহসিকতার সহিত তাঁর পত্রিকায় প্রথম ছাপানো হয় কবি মাহবুবউল আলম চৌধুরী অমর কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি।’ আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার সাহেব ইন্তেকাল করার পর স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত শ্রদ্বেয় অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেক সম্পাদক হন। এরপর আসে পত্রিকার আরও গৌরবোজ্জল ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মৃত্যুর পর আসেন- চট্টলার নক্ষত্র, আলোকোবর্তিকা সর্বজন শ্রদ্ধেয় ২০২২ সালে ২১শে পদক প্রাপ্ত জনাব এম.এ.মালেক। তিনি ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের সুযোগ্য পুত্র ও উত্তরসুরী। তাঁর দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা, সাহসিকতা ও লেগে থাকা দৈনিক আজাদীর এই সফলতা। আজ বাংলাদেশব্যাপী এটি নন্দিত ও বহুল প্রচারিত। এই নিরহংকারী চরিত্রবান ব্যক্তির গুণাবলি বলে শেষ করা যাবে না। যা গবেষণার দাবীদার । তাঁর চরিত্রে এমন একটা মাধুর্য আছে বর্তমান দুনীর্তিগ্রস্ত সমাজে তার বিশ্বস্থতায় ও ব্যক্তিত্বে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। তিনি অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। নতুন লেখক সৃষ্টিতে আজাদী ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সংবাদ পরিবেশনে সত্য নিষ্ঠ, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, দল ও পক্ষ নির্বিশেষে নির্মোহ আচরণ ইহার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বর্তমান সম্পাদক জনাব এম এ মালেক বলেন- ‘চট্টগ্রামবাসীকে একটা সংবাদ পত্র দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিনিময়ে আমি দিয়েছি আমার যৌবন, আমার জীবন, চট্টগ্রামবাসীর কাছ থেকেও পেয়ে যাচ্ছি অফুরন্ত ভালোবাসা ও আমার সংবাদ পত্রের প্রতি অশেষ আগ্রহ। এই পত্রিকার বৈশিষ্ট্য মানব মুক্তি, বিশ্ববিজ্ঞানের জয়যাত্রা, খ্যাতিমান বিশিষ্ট জনদের জীবন চরিত্র, সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গন, ব্যবসা, বাণিজ্য, খেলাধুলা প্রভৃতি পত্রিকায় প্রচার করা। পত্রিকাটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, চেতনার বাতিঘর। অফুরন্ত এর গ্রাহক। চট্টগ্রামের আপামর জনতার দর্পণ বলা হয় আজাদীকে। অনন্তকাল ইহার সুগন্ধ ছড়িয়ে যাবে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে নতুন সূর্য উদীত হল। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হল। ঠিক পর দিন ১৭ ডিসেম্বর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী আত্মপ্রকাশ করল। ১৯৭২ সালে আমার গ্রাম নোয়াপাড়া-রাউজান ছেড়ে শহরে চলে আসি। ১৯৬৯ জানুয়ারী এম,বি,বি,এস পাশ করে নোয়াপাড়া পথের হাটে প্র্যাকটিস শুরু করি। কারণ ছোটবেলা থেকে আকাঙ্ক্ষা ছিল গ্রামের মানুষদের সেবা করব। শহর থেকে প্রতিদিন নোয়াপাড়া পথের হাটে যাতায়াত করতাম। ১৯৭২ সালে ২৫ মার্চ থেকে আমি আজাদীর নিয়মিত গ্রাহক হই যা অদ্যাবদি চলমান। আমি আজাদীর এতই ভক্ত যে বিগত করোনা মাহামারিতে একদিনও আজাদী বন্ধ করিনি। হকারকে বলা ছিল প্রতিদিন আজাদী পত্রিকা আমার চাই। মহামারির লকডাইনে অনেক গ্রাহক আজাদী পড়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে খবর নিয়ে জানা যায় তারা অন-লাইনে আজাদী নিয়মিত পড়েন। ঐ লক-ডাইনে একদিনের জন্যও আজাদী পড়া আমি বন্ধ করি নাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে ইশ্বেরের নাম নেওয়ার পরই আজাদী খুঁজি। এটা আমার মজ্জাগত অভ্যাস হয়ে গেছে। আজাদী না পেলে আমার পুরো পরিবারে একটা ভ্যাকুয়াম তৈরী হয়। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য চট্টগ্রামবাসীরা প্রতিদিন অন-লাইনে আজাদী পড়ে থাকে। আজাদীর সুদীর্ঘকাল আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তার পিছনে যে দু’জন প্রবাদ প্রতিম পুরুষের বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে তারা হলেন পরম শ্রদ্ধের মরহুম অধ্যাপক মো. খালেদ- অন্যজন চট্টলার প্রাণ পুরুষ জনাব এম এ মালেক। আজাদী আজ চট্টগ্রাম ছাপিয়ে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকার নামের তালিকায় প্রথম সারিতে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পেয়েছে সম্মাননা স্মারক। সংবাদ পত্র জগতের মহীরুহ আজাদীর জন্মদিন পালন হয়ে গেল ৫ সেপ্টেম্বর। এমনি একটি পত্রিকার পাঠক হতে পেরে নিজেকে ধন্য ও গৌরবান্বিত মনে করি।
লেখক: প্রাক্তন চিফ অ্যানাসথেসিওলজিস্ট, বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।