আগের সুবিধাতেই ডায়ালাইসিস সেবা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্থাপন করা স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে সরকারি ভর্তুকি সুবিধায় প্রদত্ত সেশন কমানোর সিদ্ধান্ত আপাতত কার্যকর হচ্ছে না। আগের (গত বছরের) মতোই ভর্তুকি সুবিধা বহাল থাকছে। অর্থাৎ হাসপাতাল থেকে রেফারড হওয়া রোগীরা আগের মতোই ভর্তুকি সুবিধায় ডায়ালাইসিস সেবা পাচ্ছেন এ সেন্টারে।

এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, ভর্তুকি প্রদত্ত সেশন সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে জনপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। ভর্তুকি প্রদত্ত সুবিধা বা সেশন কমানো হলে গরিব রোগীদের কষ্ট বাড়বে এবং অনেক রোগী এই ডায়ালাইসিস খরচ যোগাতে পারবে না মর্মে মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টদের বুঝানোর চেষ্টা করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। এর প্রেক্ষিতে ভর্তুকির সেশন (সুবিধা) কমানোর নতুন সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আগের নিয়মে ডায়ালাইসিস সেবা অব্যাহত রাখতে আমরা স্যান্ডরকে বলে দিয়েছি।

গতকাল দুপুরে চমেক হাসপাতালের নিচতলায় স্থাপন করা স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সারি করে বসানো বেডে ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছেন রোগীরা। সেন্টারের প্রবেশ মুখে বসেছিলেন সেন্টারের দুজন বিলিং স্টাফ। তারা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশনায় আগের নিয়মেই ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ একজন রোগী গত বছর যে অনুপাতে ভর্তুকি সেশন পেতেন, সে সুবিধা বহাল রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের নিয়মেই আমরা সেবা অব্যাহত রেখেছি।

আগের ভর্তুকি সুবিধায় সেবা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক রোগী। যদিও আগের ৫১০ টাকার জায়গায় ৫৩৫ টাকা এবং ২৭৯০ টাকার ফি ২৯৩০ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা। ৫ শতাংশ হারে ফি বৃদ্ধির বিষয়টি ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে বলে স্যান্ডর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে ডায়ালাইসিস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেডের ম্যানেজার (হিসাব) নাজমুল হাসান আজাদীকে বলেন, ৫ শতাংশ হারে ফি বৃদ্ধির বিষয়টি চুক্তি অনুযায়ী হয়ে থাকে। প্রতি বছরই ফি ৫ শতাংশ হারে বাড়বে মর্মে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। সে অনুযায়ী ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে ৫ শতাংশে বেশি টাকা বাড়েনি এবং এজন্য রোগীস্বজনরা আন্দোলন করছে না দাবি করে তিনি বলেন, ৫ শতাংশ ধরে ভর্তুকির সেশন আগের ৫১০ টাকার স্থলে বেড়ে ৫৩৫ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বেড়েছে ২৫ টাকা। আর বেসরকারি সেশনে আগে ২৭৯০ টাকার স্থলে এখন ২৯৩০ টাকা দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে দেড়শ টাকার মতো বেড়েছে। রোগীরা বাড়তি এ টাকার জন্য আন্দোলন করছেন বলে আমরা মনে করি না। তারা সরকারি ভর্তুকি সুবিধা কমানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। কারণ, সরকারি ভর্তুকির সুবিধা কমালে গরিব রোগীদের ডায়ালাইসিস খরচ বেড়ে যাবে।

ভর্তুকি প্রদত্ত সুবিধা কমানোর সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে জানিয়ে নাজমুল হাসান বলেন, আগের নিয়মে রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা অব্যাহত রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেটি মেনে আগের নিয়মে সেবা দিচ্ছি। কয়েকদিন আগে থেকেই আগের নিয়মে সেবা দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ একজন রোগী গত বছর যে অনুপাতে ডায়ালাইসিস সেবা পেতেন, এখন সে অনুপাতেই সেবা পাচ্ছেন। আগে মাসে মোট ১০টি সেশনের মধ্যে যদি ৭টি ভর্তুকি প্রদত্ত সুবিধায় পেয়ে থাকেন, এখনো একইভাবে ৭টি ভর্তুকি সুবিধায় সেবা পাবেন। উনার ভর্তুকি প্রদত্ত সেশন কমছে না। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এভাবে আগের নিয়মে সেবা অব্যাহত থাকবে।

স্যান্ডরের সেন্টারে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধি ও ভর্তুকি সুবিধা কমানোর প্রতিবাদে এবং গত বছরের মতো সুবিধা বহাল রাখার দাবিতে ৭ জানুয়ারি থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন রোগী ও স্বজনরা। টানা কয়েকদিন এ আন্দোলন চলে। সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ ঘটনায় এক যুবককে গ্রেপ্তার ও পরে মামলা করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। চারদিন জেল হাজতে থাকার পর গতকাল ওই যুবক জামিন পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, পাবলিকপ্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও চমেক হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিসে দুটি সেন্টার স্থাপন করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। এর মধ্যে ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে ৫৯টি এবং চমেক হাসপাতালে ৩১টি মেশিনে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া হচ্ছে। চমেক হাসপাতালের পূরনো (মূল) ভবনের নিচতলায় এই সেন্টারটি স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৭ সালে এই সেন্টারে ডায়ালাইসিস সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়।

এখানে বেসরকারিভাবে প্রতি ডায়ালাইসিস সেশনে গত বছর নিয়মিত ফি ছিল ২৭৯০ টাকা। সরকারি ভর্তুকি প্রদত্ত সুবিধায় সেশন প্রতি ৫১০ টাকায় সেবা গ্রহণের সুযোগ পেতেন গরিব ও অসহায় রোগীরা। এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধা ও অতি দরিদ্র কিছু রোগী ফ্রিতে এ সুবিধা পেয়ে থাকেন। যদিও ফ্রি সেশনের সংখ্যা খুবই কম। সারা বছরে সাড়ে ছয়শ সেশন ফ্রির সুবিধা প্রদানের সুযোগ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেই মোস্তাকিম পাঁচ দিন পর কারামুক্ত
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় অস্ত্রসহ পিতা ও দুই পুত্র গ্রেপ্তার