আগুনে পুড়ে ছাই কারো বই, কারো মেয়ের বিয়ের টাকা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

ফিরিঙ্গি বাজারের টেক পাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্যান্য সব ঘরের মতো পুড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে হরি কমল দাশের ঘরও। আগুনের লেলিহান শিখায় চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে হরি কমল দাশের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে অঙ্কিতা দাসের সমস্ত বইপত্র, পুড়েছে তার সমস্ত সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য কাগজপত্রও। অঙ্কিতা দাশ এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বষের্র শিক্ষার্থী। সে চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

অঙ্কিতার বইপত্রের সাথে পুড়েছে তার বড় বোন কুয়াশা দাশের জন্য কেনা বিয়ের গহনা এবং বিয়ের জন্য জমানো টাকাও। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার কারণে ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেননি বলে জানান হরি কমল দাশ। হরি কমল দাশ বলেন, কিছু বুঝে উঠার আগেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার বড় মেয়েটার বিয়ের জন্য দুই ভরি স্বর্ণ কিনেছিলাম। সেগুলোও বের করতে পারিনি। ছোট মেয়েটা এনায়েত বাজার মহিলা কলেজে পড়ে তার সব বইপত্র সব পুড়ে গেছে।

আগুনে শুধু হরি কমল দাশের ঘর নয়, পুড়েছে সোহাগীশিল্পী, সুগন্ধা, বিরজিৎসহ অসংখ্য গরীবঅসহায় পরিবারের স্বপ্ন। সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব তারা। খোলা আকাশের নিচেই এখন বসবাস এ পরিবারগুলো। একই অবস্থা পোশাক শ্রমিক শাবরিনা বেগমেরও। ঈদের ছুটি শেষ করে সবেমাত্র বাসায় ফিরেছেন। শাবরিনা বেগম বলেন, ঈদের পর মেয়ের বিয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা ধার করে ঘরের আলমারিতে রেখেছিলাম। আগুনে আমার সব শেষ।

স্বামীর মৃত্যুর পর বন্দর হাসপাতালে ঠিকাদারের অধীনে আউট সোর্সিংয়ের ভিত্তিতে কাজ করেন সুগন্ধা দাশ। গত ১৪ দিন ধরে মেয়ে বন্দর হাসপাতালে ভর্তি। পেটে টিউমার। মেয়ের অপারেশনের জন্য ৫০ হাজার টাকা ধার দেনা করে জমিয়েছিলেন। মেয়ের চিকিৎসার সমস্ত টাকা পুড়ে শেষ। কিভাবে মেয়ের চিকিৎসা করাবেন সেটা নিয়ে এখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সুগন্ধা।

বিরজিৎ দাশ বলেন, অনকে কষ্ট করে মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা গুলো জমিয়েছিলাম। পাড়ার এক ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের কথা পাকা হয়েছে। আমার ঘরে আলমিরাতে প্রায় তিন লাখ ছিল । আর শ্যালকের ঘরের স্টিলের আলমারিতে রাখা ছিল দুই লাখ টাকা। পুড়ে সব শেষ হয়ে গেছে। অভাবের সংসারে ছোট্ট দুই মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য খেয়ে না খেয়ে টাকা জমিয়ে রেখেছিল শিল্পী দাশ। আগুনে পুড়েছে তার সব। একই অবস্থা লশমী দাশ ও সোহাগী দাশেরও। আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের ওপর দাঁড়িয়ে কান্না করছিলেন সোহাগী দাশ। বৈশাখেই ছোট মেয়ের বিয়ে। খেয়ে না খেয়ে টাকা জমিয়েছিলেন। সোহাগী বলেন, কতো কষ্ট করে মেয়ের বিয়ের জন্য বানিয়েছিলাম কয়েক ভরি স্বর্ণ, জমিয়েছিলাম টাকা। আগুনে সব শেষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটানা ছয়দিন মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচলাইশ থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার