আকাশের তারা চেনা

গৌতম পাল | সোমবার , ১৪ মার্চ, ২০২২ at ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

সেদিন বিকেলে আমরা ক’জন সিআরবি পাহাড়ে উঠলাম শুকতারা দেখব বলে। আমরা ক’জন শৌখিন আকাশ পর্যবেক্ষক। বিকেলের আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলেও সন্ধ্যার আকাশ একদম মেঘমুক্ত পরিষ্কার। শৌখিন পর্যবেক্ষকদের এই এক সুবিধা, যখন খুশী ইচ্ছেমতো আকাশ পর্যবেক্ষণ করা যায়। কারো কাছে কৈফিয়ৎ দিতে হয় না। শুধু নিখাঁদ আনন্দটাই উপলক্ষ। প্রচলিত অর্থে শুকতারাকে সন্ধ্যাতারাও বলা হয়। গ্রামীণ জীবনে সন্ধ্যাতারা হিসেবে অধিক পরিচিত। সূর্য ডোবার পরেই পশ্চিমাকাশে শুকতারাটি উদয় হয় এবং কিছুক্ষণ পর ডুবে যায় বলে এ-নামকরণ। নামটি যথার্থ। এই শুকতারাই হলো সূর্যের নিকটবর্তী দ্বিতীয় তারা শুক্র গ্রহ আমাদের সৌরমণ্ডলে সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল তারা।
চারদিকে শহরের কোলাহল, নিয়ন বাতির ঝলকানি; তবুও সিআরবির এ-জায়গাটি অনেকটা সুনসান নীরবতায় ভরা, কোনো হৈচৈ নেই, সে-কারণে জায়গাটি বেছে নেওয়া। পাহাড়ের পশ্চিম পাশটায় আমরা দাঁড়ালাম। স্বচ্ছ নীলচে আকাশ ক্রমশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে সূর্যের সোনামাখা রঙের শেষটুকু গ্রাস করে নিলো। পরিপূর্ণ অন্ধকার নেমে এলো। পশ্চিমাকাশে ফুটে উঠল প্রতীক্ষার শুকতারাটি। বেশ জ্বলজ্বল করছে। এ-যেন এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্য। এর মূল্য কোনো কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।
আমরা জানি, আকাশে কোনো গ্রহই মিটমিট করে জ্বলে না। সৌরমণ্ডলের সব গ্রহ তার গতিপথ সৌররেখায় অতিক্রম করে। সে-হিসেবে শুক্রের পরে আছে শনি গ্রহ, মাঝ আকাশে কিছুটা পশ্চিমদিকে হেলে আছে বৃহস্পতি গ্রহ, তারও পূর্বে আছে মঙ্গল গ্রহ। খালি চোখে সব তারা একইরকম লাগলেও, পার্থক্য কিন্তু বিশাল। এর কোনোটি জ্যোতিষ্ক, কোনোটি গ্রহ, কোনোটি গ্যালাক্সি। তবে নিয়মিত প্রশিক্ষিত অনুশীলনে এগুলো আলাদা-আলাদা চিহ্নিত করা যায়। মেসিয়ার স্টার বা গ্যালাক্সি খালি চোখে দেখা না গেলেও টেলিস্কোপের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করা যায়।
এখন আসি একটি জ্যোতিষ্কের বা নক্ষত্রের কথায়। নাম তার লুব্ধক, ইংরেজিতে ঝরৎরঁং. আগেই বলেছি গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা শুক্র আর নক্ষত্রের মধ্যে লুব্ধক। বছর শেষ ও শুরুর দিকে আকাশে এর জোরালো উপস্থিতি থাকে। লুব্ধক থেকে আমাদের কাছে আলো আসতে প্রায় আট বছর লাগে। ছায়াপথের ঠিক পশ্চিমে, আকাশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কিছুটা উপরে এই তারাটি দেখা যায়।
এখন বলব কালপুরুষ তারা মণ্ডলের কথা। ইংরেজি নাম ঙৎরড়হ. জ্যোতির্বিজ্ঞানে আগ্রহীদের কাছে কালপুরুষ তারামণ্ডল বেশ জনপ্রিয়। কয়েকটি তারাসমেত এই মণ্ডলটিকে একজন যোদ্ধার চিত্ররূপ কল্পনা করা হয়েছে। এটি খুব সহজে চিহ্নিত করা যায়। পূর্বেই উল্লেখ করেছি লুব্ধক তারার কথা। পূব আকাশে লুব্ধকের সামান্য উত্তর-পশ্চিমে তিনটি তারা এক সরলরেখায় উত্তর-পশ্চিম থেকে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে দেখা যায়, যা যোদ্ধার কোমরবন্ধনী হিসেবে কল্পনা করা হয়।
এর দক্ষিণে দুটো উজ্জ্বল বর্ণের তারা, উত্তরেও দুটো তারা আছে। উত্তরের পূব দিকের তারাটি বেশ বড়, একটু লালচে। এটি কালপুরুষের ডান কাঁধের তারা- নাম বেটেল গায়েস। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের তারাটি কালপুরুষের বাঁ পায়ের তারা- নাম রিগেল । বেটেল গায়েসের উত্তরে ছোট ছোট কয়েকটি তারা আছে যেগুলো দিয়ে কালপুরুষের মাথাকে কল্পনা করা হয়েছে। কালপুরুষের বাঁ কাঁধের বেটেল গায়েসের পশ্চিমে আরও একটি তারা, এটির নাম বেলাট্রিক্স। এর ঠিক পশ্চিমে ছোট ছোট কয়েকটি তারা ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে আছে দেখা যায়, যা যোদ্ধার হাতের দণ্ড হিসেবে কল্পনা করা হয়। কোমরের বেল্টের নীচে পূবের দিকের তারাটি যোদ্ধার ডান পায়ের কল্পনা করা হয়- নাম তার সায়েফ।
লেখক : চিত্রশিল্পী

এই শুকতারাই হলো সূর্যের নিকটবর্তী দ্বিতীয় তারা শুক্র গ্রহ আমাদের
সৌরমণ্ডলে সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল তারা। চারদিকে শহরের কোলাহল, নিয়ন বাতির ঝলকানি; তবুও সিআরবির এ-জায়গাটি অনেকটা সুনসান
নীরবতায় ভরা, কোনো হৈচৈ নেই, সে-কারণে জায়গাটি বেছে নেওয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাশেদ রউফ – এর অন্ত্যমিল
পরবর্তী নিবন্ধমহাগায়িকার বিদায়