কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ নেতাকে জামিনের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা গতকাল বুধবার বেলা ১২ টার দিকে আদালত ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বিচারকের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী ছাড়াও বিএনপি–জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা বক্তব্য দেন। এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুন্সি আবদুল মজিদ শুনানি শেষে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক রাশেদকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের জের ধরে দায়ের করা হত্যাসহ তিনটি মামলায় জামিন দেন।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম সিদ্দিকীর জিম্মায় আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। আবুল কালাম সিদ্দিকী বিএনপি জামায়াত সমর্থিত প্যানেল থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসেদুল হক রাশেদকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব–১৫। পরে তাকে ৩টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল চলাকালে এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ১৭ আগস্ট কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) মো. সেলিম মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। সেই মামলায়ও অজ্ঞাত আসামি হিসেবে মাসেদুল হক রাশেদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল।
তার জামিনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বুধবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবিতে মিছিল নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে বিক্ষোভ করে। তাদের কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সাধারণ আইনজীবীরাও। সমাবেশে শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরা বিচারকের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদের পক্ষে গিয়ে বিচারকরা ছাত্র আন্দোলনে হামলাকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে জামিন প্রদান করছেন। এতে তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের সুযোগ হবে।
সমন্বয়করা তাদের বক্তব্যে বলেন, এখনো শহীদ ছাত্র–জনতার রক্তের দাগ শুকায়নি। অথচ আপনারা বিএনপি–জামায়াতের আইনজীবীরা স্বৈরাচারের দোসর খুনি–হামলাকারীদের জামিন করাচ্ছেন। এই বেঈমানী ছাত্ররা মেনে নেবে না। একই সাথে খুনি ও দোসরদের জামিন মঞ্জুরকারী বিচারকদেরও ক্ষমা হবে না। তাদেরকে অতিসত্বর অপসারণ করতে হবে।
গণ–জমায়েত ও বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সমন্বয়ক সাহিদুল ওয়াহিদ সাহেদ, রবিউল হোসেন, তাজদিজুর রেজা, জোনায়েদ হোসেন, সাগর ইসলাম, জিনিয়া শারমিন রিয়া, একরামুল হক, নবী জালাল, রিযাদ মনি।
আইনজীবীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, এড. তাহের সিকদার, এড. আবু সিদ্দিক ওসমানি, আবিদুর রহমান, সম্যক দৃষ্টি বড়ুয়া, ইসমাইল হোসেন, ফয়সাল মোশাররফ ও মিজান ভুট্টো প্রমূখ।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম সিদ্দিকী বলেন, রাশেদকে যে ৩ টি মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, ওই মামলায় নাম উল্লেখে এজাহারভুক্ত আসামি নন তিনি। একই সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতে রাশেদ গুরুতর অসুস্থ বলে লিখিতভাবে জানিয়েছে। সব বিবেচনায় আদালত এই মামলায় রাশেদেকে আমার জিম্মায় জামিন দিয়েছেন। এটা ন্যায় বিচারের অংশ।
তিনি আরও বলেন, ন্যায় বিচারের পক্ষে লড়তে গিয়ে আওয়ামী লীগের আমলে আমি নিজেও মামলার আসামি হয়ে কারাভোগ করেছি। বিএনপির অ্যাডভোকেট মান্নানসহ আরো অনেক আইনজীবী কারাভোগ করেছেন। ওই সময় আমাদের জামিনের ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থায় নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছিল। এখন আবারও তা করা যাবে না। বিচারিক ব্যবস্থাকে আইনের গতিতে চলতে দিতে হবে।