আইসিইউর ২০ শয্যাতেই মিলবে সেবা

১৫টি নতুন ভেন্টিলেটর পেল চমেক হাসপাতাল

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১২ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে নতুন ১৫টি ভেন্টিলেটর এসে পৌঁছেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। গত বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) এসব ভেন্টিলেটর বুঝে পেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে হাসপাতালের চারতলায় আইসিইউ বিভাগের একটি কক্ষে এসব ভেন্টিলেটর রাখা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে কয়েকদিনের মধ্যেই এসব ভেন্টিলেটর ইনস্টলের (স্থাপনের) কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। আগামী সপ্তাহ নাগাদ ইনস্টলেশন কাজ সম্পন্ন হবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন হাসপাতাল পরিচালক। আর ভেন্টিলেটর ইনস্টলেশন সম্পন্ন হলে আইসিইউর সবকয়টি (২০টি) শয্যায় সেবা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রনয় কুমার দত্ত। প্রসঙ্গত, চমেক হাসপাতালের আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) বিভাগে নতুন ৮টি শয্যা যুক্ত করা হয় ২০২০ সালের শেষ দিকে। এর মাধ্যমে বিভাগের মোট শয্যা সংখ্যা ২০টিতে উন্নীত হওয়ার কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২১ নভেম্বর (২০২০ সালের) নতুন এই ৮ শয্যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী
ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য এর আগে ১২টি আইসিইউ শয্যা ছিল বিভাগে। এর সাথে নতুন ৮টি যুক্ত হলে মোট শয্যা সংখ্যা ২০টিতে দাঁড়ায়।
আইসিইউ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০ আইসিইউ শয্যার বিপরীতে বিভাগে ২৯টি ভেন্টিলেটর রয়েছে। তবে এসব ভেন্টিলেটরের অর্ধেকই দীর্ঘ দিন ধরে অকেজো (চিকিৎসকদের ভাষ্য মতে নন ফাংশনিং) হয়ে পড়ে আছে। অন্তত ৫/৬ মাস ধরে এসব ভেন্টিলেটর অকেজো বলে সংশ্ল্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। আর ভেন্টিলেটর অকেজো থাকায় অন্তত ৯টি আইসিইউ শয্যায় ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে এই ৯ আইসিইউ শয্যা অনেকটা থেকেও নেই। এছাড়াও রয়েছে প্রশিক্ষিত কর্মচারী সংকট। সবমিলিয়ে অনেকটা খুঁড়িয়েই চলছে হাসপাতালের আইসিইউ সেবা। এ নিয়ে গত ২৪ মার্চ দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘চমেক হাসপাতাল : অর্ধেক ভেন্টিলেটর অকেজো/ খুঁড়িয়ে চলছে আইসিইউ সেবা, ২৯টি ভেন্টিলেটরের ১৪টিই অকেজো’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
পরবর্তীতে নতুন ২৫টি ভেন্টিলেটর চেয়ে ঢাকার কেন্দ্রীয় ওষুধাগারে (সিএমএসডি) চিঠি দেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে অবশেষে নতুন ১৫টি ভেন্টিলেটর পেল চমেক হাসপাতাল। যা ইতোমধ্যে হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে। হাসপাতাল প্রশাসন বলছে, নতুন পাওয়া ১৫টি ভেন্টিলেটরের মধ্যে একটি ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ারে (ওসেক) এবং আরেকটি হৃদরোগ বিভাগের সিসিইউতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাকি ১৩টি ভেন্টিলেটর দেয়া হচ্ছে আইসিইউ বিভাগে। আইসিইউ বিভাগে বর্তমানে ১১টি ভেন্টিলেটর ফাংশনিং রয়েছে। এখন নতুন করে ১৩টি যুক্ত হলে সচল (ফাংশনিং) ভেন্টিলেটরের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৪টিতে। এতে করে বিভাগে থাকা ২০টি আইসিইউ শয্যাতেই সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে জানান আইসিইউ বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডা. প্রনয় কুমার দত্ত।
হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি আইসিইউ শয্যায় একটি করে ভেন্টিলেটর (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসদানের যন্ত্র) থাকে। এই ভেন্টিলেটর ছাড়া মূলত আইসিইউ সেবা অকার্যকর। কিন্তু প্রায় সময়ই এসব ভেন্টিলেটর অকেজো হয়ে পড়ে। আর ভেন্টিলেটর অকেজো হলে ওই সব শয্যায় আইসিইউ সেবাও বন্ধ থাকে। এতে করে গরীব-অসহায় রোগীরা এই আইসিইউ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে নগরীর প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে আইসিইউ সেবা নিতে হলে দৈনিক ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা ফি গুনতে হয় রোগীর পরিবারকে। যা গরীব-অসহায় পরিবারের পক্ষে বহন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ফলে মুমূর্ষু আইসিইউর মতো ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয় এসব অসহায় রোগীদের।
প্রসঙ্গত, মুমূর্ষু রোগীদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য আইসিইউ কেবল ভরসাস্থলই নয়, অপরিহার্যও। কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মুমূর্ষূ রোগীদের এখানে বাচিঁয়ে রাখা হয়, বাচিঁয়ে তোলা হয়। কিন্তু বৃহত্তর চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেবায় গরীবের একমাত্র ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে শয্যা সংখ্যা ১২টি থেকে বাড়িয়ে ২০টিতে উন্নীত করা হলেও ভেন্টিলেটর অকেজো থাকায় এর শতভাগ সেবা/ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রায় অর্ধেক ভেন্টিলেটর প্রায়সময়ই অকেজো হয়ে পড়ে। অর্থাৎ মুমূর্ষু রোগীর ভরসাস্থল আইসিইউ বিভাগটি নিজেই মুমূর্ষূ হয়ে পড়ে প্রায় সময়। অথচ, হাসপাতালে দৈনিক কম হলেও একশ মুমূর্ষু রোগীর জন্য আইসিইউ শয্যার আবেদন-অনুরোধ আসে। আর সাধারণ আবেদনকারীর পাশাপাশি অনুরোধকারীর কাতারে থাকেন মন্ত্রী-এমপি এবং সচিবরাও। কিন্তু শয্যা সংকট তো আছেই, পাশাপাশি ভেন্টিলেটরসহ বিভিন্ন সংকটে যে কয়টি আছে তাতেও ঠিকমতো সেবা দিতে অপারগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নতুন করে ১৩টি ভেন্টিলেটর যুক্ত হওয়ায় এমন অবস্থার উন্নতি হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, ভেন্টিলেটর সংকট কাটলেও প্রয়োজনীয়-প্রশিক্ষিত কর্মচারী সংকটের কথা জানিয়েছেন বিভাগের দায়িত্বে থাকা আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রনয় কুমার দত্ত। তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসক ও নার্স সংকট ততটা নেই। তবে কর্মচারী পর্যায়ে আমাদের যথেষ্ট সংকট রয়েছে। বিভাগে একজন সিকিউরিটিও নেই। সিকিউরিটি না থাকায় আইসিইউর মতো সংবেদনশীল ওয়ার্ডে হুট করে যে কেউ ঢুকে পড়ছে। যা রোগীর জন্য মঙ্গলজনক নয়। আর আইসিইউ শয্যার অন্তত দ্বিগুণ ভেন্টিলেটর প্রয়োজন বলে মনে করেন আইসিইউ ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ। ২০টি আইসিইউ শয্যার বিপরীতে অন্তত ৪০টি ভেন্টিলেটর অপরিহার্য জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, ভেন্টিলেটরগুলো হঠাৎ করে অচল হয়ে পড়ে। এরকম প্রায়-ই সময় ঘটে। আর ভেন্টিলেটর অচল হলে সেটি সার্ভিসিংয়ের জন্য হাসপাতালের নিজস্ব কোন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারও নেই। যার কারণে সামান্য ক্রটি দেখা দিলেও এর সার্ভিসিং সময়সাপেক্ষ। এ বিষয়টাতে সংশ্ল্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমসজিদে যাওয়ার পথে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত
পরবর্তী নিবন্ধআদালতে ঢুকে গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা