হাজারো ভালো মনের মানুষের মধ্যে একজন ভালো মনের মানুষ একজন মানবতাবাদী সমাজ ব্যক্তিত্ব যিনি সর্বদা ন্যায়ের পক্ষে জনগণের পক্ষে গণতন্ত্রের পক্ষে সাহসের সাথে কন্ঠ উঁচু করে প্রাজ্ঞদীপ্ত শক্তিতে মানুষের মনের গভীরে স্থান রেখে গেছেন, তিনি সদ্য প্রয়াত সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক- উল হক। দীর্ঘ ছয় দশক কাল ধরে তিনি আইন পেশার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছাত্রজীবনে তার সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। ছাত্রাস্থায় যুব কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তখন পুরো ভারতে সভাপতি ছিলেন ইন্দ্রা গান্ধী। যদিও পরে ব্যারিস্টার রফিক -উল হক নিজেকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। রফিক-উল হকের পিতাসহ পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই ছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু দাদির ইচ্ছায় আইন পেশায় আসেন তিনি। দেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য ব্যারিস্টার রফিক সবসময় সোচ্চার ছিলেন। সত্যকথা বলতে তিনি কখনো এই ব্যাপারে কারো সাথে আপস করেননি। সত্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন একজন ব্রতচারী। আইন শাস্ত্রের বাতিঘর ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ছিলেন একজন মানবতাবাদী আইনজীবী। এই সাবেক অ্যটর্নি জেনারেল মানবতাবাদী আইনজীবী হিসেবে বাঙালি সমাজে তিনি এক অনন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলাদেশের অন্যতম বরেণ্য এই মানুষটির সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর মানবিক ও সেবা-মনোভাবের অসামান্য গুণটি সবার সামনে চলে আসে। নানা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক সম্পৃক্ত থেকে তাঁর উপার্জনের সমস্ত অর্থ দান করে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত অর্জন করেছিলেন অর্থাৎ তিনি তাঁর সমস্ত আয়ের সিংহভাগ ব্যয় করেছিলেন মানুষের কল্যাণে তার সমস্ত কর্মে আমরা লক্ষ্য করেছি একটি সমৃদ্ধ ও স্নিগ্ধ ছাপ। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হোসেইন মোহম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও। তত্ত্বাবধায়ক সরকার চলাকালীন দুই নেত্রীর দুঃসময়ে তাঁকে আমরা পাশে দাঁড়াতে দেখেছি। এমনকি তিনি অনেক প্রভাবশালী নেতার আইনজীবীও ছিলেন বটে তবে আবার তাঁদের নানা কর্মকাণ্ডে সমালোচনা করতে পিছপা হননি ব্যারিস্টার রফিক। তাঁর এক মহান গুণাবলি ছিল তিনি সরাসরি সমালোচনা করতে পছন্দ করতেন। ন্যায় ও সত্যের পথে তিনি ছিলেন সবসময় অবিচল। কখনো রক্তচক্ষুকে ভয় পান নাই তিনি। রাজনীতি বা আদালতে যেকোন ঘটনা সম্পর্কে আইন ও ন্যায় সংগত কথা বলতে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের ভূমিকা ছিল সাহসী। এতে যে যা-ই মনে করুক তিনি তাঁর মতামত প্রকাশে দ্বিধা করতেন না। দেশ, জাতি, জনগণের এবং গণতন্ত্রের পক্ষে তিনি সারাজীবন দৃঢ়তার সাথে কথা বলে গেছেন। মানুষের ভালোবাসাকে জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন মেনে নিয়ে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মানবতার জন্য কাজ করে গেছেন। দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে তিনি একবিন্দুও সরে আসেন নি। তাই পরিশেষে বলতে চাই মানবতাবাদী ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে সারাজীবন শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় বাঙালি জাতি প্রাণের গভীরে রেখে স্মরণ করবে।