অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

| শুক্রবার , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চালের বাজার আবারও অস্থির হয়ে পড়েছে। প্রায় এক মাসের ব্যবধানে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। আয়ের সঙ্গে বাড়তি ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছে না সাধারণ মানুষ। এই এক মাসে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্যের সরবরাহ কমে যাওয়া ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়া। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকার নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেও বাজার ঊর্ধ্বমুখী। গত ১৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানিতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে সরকার। এর প্রভাবে চালের বাজার নিম্নমুখী হয়। দেশে শুল্ক কমানোর দুই সপ্তাহ না যেতেই ভারত চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে; যার প্রভাবে আবারও আমদানি চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দেশে আমদানি চালের সিংহভাগই আসে ভারত থেকে। শুধু আমদানির চাল নয়, ভারতের রপ্তানি শুল্ক বাড়ানোকে কেন্দ্র করে দাম বেড়েছে দেশীয় চালের বাজারেও। আড়তদাররা বলছেন, ডলার ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল। তাই চালের বাজার ক্রমেই বাড়তে থাকে। তবে সরকার গত মাসের শেষ দিকে শুল্ক কমানোর কারণে দাম কমলেও এখন ভারত আবার রপ্তানি শুল্ক বসিয়েছে। ভারত থেকে বেতি আতপ চালই বেশি আসে।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে থাকায় চালের বাজারের অস্থিরতা কমছে না। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সমপ্রতি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর চালের দাম আরও লাগামহীন হয়ে পড়েছে। লক্ষ করা যাচ্ছে, চালের দাম কমাতে সরকারের সব উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। স্বল্পমূল্যে ওএমএস চালু এবং আমদানি শুল্ক কমানোর পরও মিলারদের কারসাজিতে ফের চালের দাম বাড়ছে। ভারত আতপ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করায় মিলাররা এটাকে অজুহাত হিসাবে নিয়েছেন। তারা একদিনে সব ধরনের চাল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা বাড়িয়েছেন। এতে খুচরা বাজারে চালের দাম আরও বাড়বে।’
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দেশে গত ৫০ বছরে চালের উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ। সার, বীজসহ কৃষি উপকরণে ভর্তুকি, কৃষি গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন কর্মসূচিসহ বহুমুখী উদ্যোগের ফলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। সেই সঙ্গে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে লাখ লাখ টন চাল। তারপরও স্থিতিশীল হচ্ছে না চালের বাজার। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত মজুত নীতির কারণেই বাড়ছে দাম। অতিরিক্ত দামে ধান কিনে সেটা মিলে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। সংকট দেখিয়েও বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম। অপরদিকে আমদানির চালও বাজারে আসেনি। এলসির চাল বাজারে ছাড়ছেন না আমদানিকারকরা। এ সুযোগে ওইসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে দাম নিয়ে সুসংবাদ পাওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকার ব্যবসায়ীদের কম শুল্কে চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে।
তবে ব্যবসায়িক শর্ত ভেঙে চালের ব্যবসা করছেন কারা, তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নামছে সরকার। তাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে মজুত করা চাল বা ধান উদ্ধার করে বাজারে ছাড়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। ব্যবসায়ীরা কীসের অনুমতি নিয়ে কীসের ব্যবসা করছেন, তারা মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশনের শর্ত ভাঙছেন কিনা সেসবও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই অবস্থা রোধে প্রধানমন্ত্রী বাজার দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাল এদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। মানুষ তার আয়ের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ব্যয় করে খাদ্য খাতে। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষ চাল কিনতেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে থাকে। কাজেই চালের দামের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনমান। এ অবস্থায় চাল নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি চলতে দেওয়া উচিত নয়। তাঁরা বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই নতুন করে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে