অসুস্থতায় নয়, গুলিতেই প্রাণ হারিয়েছিল সেই বন্য হাতিটি

খুটাখালীর সংরক্ষিত বনাঞ্চল

চকরিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ১৪ জুন, ২০২৩ at ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ

চকরিয়ার খুটাখালীর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর অসুস্থতায় নয়, গুলিতেই প্রাণ হারিয়েছিল সেই বন্য হাতিটি। যদিওবা বনবিভাগ শুরুতে গুলির ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমনকি হাতিটিকে বাচ্চা দাবি করাসহ অসুস্থ হয়েই মারা গেছে মর্মে গত ১০ জুন রাতে থানায় রুজুকৃত সাধারণ ডায়েরিতেও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ১২ জুন গুলি করেই হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে দৈনিক আজাদীতে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বনবিভাগ অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্ত কর্তৃক গুলিতেই ওই বন্য হাতি গুরুতর আহত হওয়ার কথা স্বীকার করে থানায় মামলা দায়ের করে।

খুটাখালী বনবিট কর্মকর্তা মুবিবুল হক জানান, ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তার নির্দেশনা মোতাবেক ১০ জুন থানায় সাধারণ ডায়েরিটি রুজু করা হয়। ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেন৯ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোপন সংবাদ পান খুটাখালী বিটের জঙ্গল খুটাখালী মৌজার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কেশখোলা নামক স্থানে আনুমানিক ৯ বছর বয়সী একটি পুরুষ বন্য হাতি মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পরবর্তীতে ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা ফজলুল কাদের চৌধুরীসহ বনবিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর অনুরোধের প্রেক্ষিতে চকরিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আরিফ উদ্দিন ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ জুলকার নাইন অসুস্থ হাতিটির চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন। অথচ থানায় রুজুকৃত এই সাধারণ ডায়েরিতে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি হাতিটির মাথায় গুলি বিদ্ধ হওয়ার ঘটনা।

অবশ্য ১২ জুন একই বিট কর্মকর্তা বাদী হয়ে থানায় রুজুকৃত মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ জুন সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে মারা যায় বন্য হাতিটি। এর পর নিয়মানুযায়ী হাতিটির ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ফের ডাকা হয় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ জুলকার নাইন ও উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাকিম বিল্লাহকে। তাদের দীর্ঘ ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়ার প্রতিবেদনে উঠে আসে হাতিটির মাথায় পরপর দুটি গুলি করা হয়। গুলির আঘাতে মস্তিষ্কে গুরুতর জখমের ফলে হাতিটি মারা যায়। সেই প্রতিবেদনের আলোকেই গুলি করে বন্য হাতি হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা রুজু করেন খুটাখালী বনবিট কর্মকর্তা মুবিনুল হক।

অভিযোগ ওঠেছে, সংরক্ষিত বনের গোদার ফাঁড়ি ও খুটাখালীর ছড়ার পশ্চিমাংশের আম বাগান এলাকায় বন্য হাতিটি অবস্থান নেয়। এ সময় অজ্ঞাত বাগান মালিক হাতিটিকে তাড়ানোর জন্য কয়েক রাউন্ড গুলি করে। তদ্মধ্যে দুটি গুলি সরাসরি মাথায় বিদ্ধ হয়ে হাতিটি পূর্ব দিকে তথা খুটাখালী বনবিটের কেশখোলা বা ছনখোলার আগা নামক এলাকায় গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু মামলার এজাহারে সেই আম বাগানের মালিকের বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের তদন্তে সবকিছু ওঠে আসবে জানিয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা ফজলুল কাদের চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দৈনিক আজাদীকে বলেন, যারাই হাতিটিকে গুলি করুক না কেন, আশা করি কেউ ছাড় পাবে না। পুলিশ নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে শনাক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে সক্ষম হবেন। আমরাও পুলিশকে তদন্ত কার্যক্রমে সার্বিক সহায়তা করে যাব।

শুরু থেকেই গুলির ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রেঞ্জ কর্মকর্তার ভাষ্য, হাতিটি সঠিক কী কারণে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল, তা হঠাৎ করে আমাদের পক্ষে বলাটা সমীচীন ছিল না। তাই বন্য প্রাণী চিকিৎসকের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই নিশ্চিত হওয়া গেছে, হাতিটি গুলিতেই মারা পড়েছে। এর পর বনবিভাগ থানায় হাতি হত্যার ঘটনায় মামলা রুজু করে।

হাতিটির ময়নাতদন্ত কার্যক্রম অংশগ্রহণকারী ডা. মোস্তাকিন বিল্লাহ ও হাতেম সাজ্জাদ জুলকার নাইন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন হাতিটির মাথায় দুটি গুলি করা হয়। এতে গুলির আঘাতে হাতিটির মস্তিষ্কে গুরুতর জখমের ফলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বন্য হাতিটিকে যে বা যারাই গুলি করুক না কেন, অবশ্য তাদের শনাক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবে। কোনো অবস্থাতেই হাতি হত্যায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করাসহ আশপাশের লোকজনের সাক্ষ্য নেওয়া শুরু করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়া থেকে অপহৃত কিশোরী বায়েজিদে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২
পরবর্তী নিবন্ধছিল প্রেমের সম্পর্ক, ভেঙে যাওয়ার পর ব্যক্তিগত ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল