অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

| শুক্রবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘যারা মজুতদারি, কালোবাজারি এবং এলসি খোলা নিয়ে দুই নম্বরি করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং সামনেও নেব। প্রয়োজনে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নেব। মানুষের কষ্ট যেন না হয় সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেব।’

অসৎ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মুক্তির জন্য সমবায় মালিকানার ওপর গুরুত্ব দেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে আমাদের দেশের অর্থনীতি তিন ধরনের; সরকারি, বেসরকারি এবং সমবায়ভিত্তিক। আমাদের সমবায়ভিত্তিক আছে, নেই তা নয়। এখানে ভোগ্য পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।’

এদিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, রোজায় পণ্যের সংকট হবে না। ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংক সহায়তা করবে। পণ্যমূল্য সহনীয় ও আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গত ৪ জানুয়ারি সকালে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের বৈঠক বসে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া এই বৈঠক শেষে এদিন দুপুরে তিনি এ কথা জানান। টিপু মুনশি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ‘ডলার কোটা’ নির্ধারণ করে দেবার দিকটি বিবেচনা করছে। আসন্ন রমজান মাসে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। বলেন, রোজার মাসে ভোজ্যতেল, চিনি, মশুর ডালসহ কয়েকটি পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

বলা বাহুল্য, আগামী রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবার আগে থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ওই সময় বাজারে স্বস্তি ফেরাতে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে সরকার। গম (আটা), ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, খেজুর ও ছোলার মতো ৭টি ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আমদানিকৃত এসব ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় মিটাতে চাহিদামতো ডলারের জোগান পাবেন ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর বিদেশ থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি বাড়াতে সরব হয়েছেন উদ্যোক্তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।

অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ আজ নতুন নয়। সামপ্রতিক সময়ে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ও জোগানে মারাত্মক অস্থিরতা দেখা দেয়। বিশ্লেষকরা এর জন্য কতিপয় ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা লাভের মানসিকতা ও বাজার সিন্ডিকেট বা কারসাজিকে দায়ী করছেন। বাজারে অনেক সময়ই জোটবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, যা ‘সিন্ডিকেট’ নামে পরিচিত।

গুটিকতক বিক্রেতা বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে জোট তৈরি এবং বাজারে সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করেন। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ ব্যবস্থা কারো কাম্য হতে পারে না। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রচলিত আইনে সম্ভব হয় না। কারণ তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ফলে সরকার বিব্রত হয় আর ক্রেতাদের ক্ষোভ বাড়ে। বাংলাদেশেও তা নানা সময়ে পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বাজারে প্রতিযোগিতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ থাকলে সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে পারে না। সরকারকে প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

ক্ষেত্রবিশেষে বাজারে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। মজুদ আইন ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী যে হুঁশিয়ারি জারি করেছেন, তার প্রভাব বাজারে পড়তে হবে। যারা বাজার অস্থিতিশীল করবে, সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ ব্যাহত করবে, তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বাজারে মনিটরিংয়ে জোর দিতে হবে। উৎপাদক, বিপণনকারী, ভোক্তা থেকে শুরু করে সর্বত্র সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড বন্ধে আইনের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তবে সিন্ডিকেটের বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এক্ষেত্রে কোনো ব্যবসায়ী যেন অযথা হয়রানির শিকার না হন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে