আমরা তখন শহরে ব্যাচেলর বাসায় থাকি। ভাই-বোন কারো বিয়ে হয়নি। গ্রামের একজন অসুস্থ ব্যক্তির শহরে চিকিৎসা করানোর জন্য তাঁর পরিবারের সামর্থ্যবান কোন পুরুষ ছিলেন না। তাঁকে বাবা আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। আমরা তাঁর যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নিলাম।একদিন আমাদের এক নিকট আত্মীয় বাসায় এসে আমার বাবার উপর মোটামুটি ক্ষেপে গেলেন। বাড়তি ঝামেলা মাথায় নেওয়ার কি প্রয়োজন? তোমাদের বাবা সারা জীবন এইসব ঝামেলা নিজের মাথায় নিয়েছে বলে ছেলে-মেয়েদের কেন জড়াবে? আসলেই তাঁর কথায় যুক্তি আছে। আমি নিজে মনেমনে বাবার উপর ক্ষেপে গেলাম। কালকেই বাড়ি গিয়ে বাবার কাছে কৈফিয়ত চাইবো। কেন নিজের মতো আমাদেরও শেষ করে দিচ্ছে? পরদিন পৌনে দুঘন্টা জার্নি শেষে রেগে-মেগে বাবার সামনে দাঁড়ালাম। আমাদের আত্মীয়’র মতামত জানালাম। আমাদের আত্মীয়ের মতামতকে আরো জোরালো সমর্থন দিয়ে জানতে চাইলাম- কী শুরু করেছো তুমি? মৃদু হেসে বাবা আমাদের আত্মীয়ের মতামতকে সম্মান জানালো। বাবা বললো তাঁর কথায় যুক্তি আছে কিন্তু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো নৈতিক কর্তব্য তাছাড়া তিনি (অসুস্থ ব্যক্তি) তোদের খুব স্নেহ করেন। তারপরের কথাটি শুনে আমি একেবারে অপরাধবোধে ডুবে গেলাম। বাবা বললো- মানুষ মানুষের জন্য। সেদিন বাবাকে আবিষ্কার করলাম অন্য এক উচ্চতায়। মানবিকতা মন্ত্রটা বাবার কাছেই শিখেছিলাম (যদিও আমরা ভাইবোনরা বাবার ছিটেফোঁটাও আয়ত্ত করতে পারিনি)। আত্মকেন্দ্রিকতা বাবাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। বাবা সবাইকে নিয়ে চলতে ভালোবাসতো। ২০০৬ সালে ২৭ জানুয়ারি আমাদের মাথার উপর থেকে আকাশ সরে গিয়েছিল। বাবা তোমাকে অনুভব করি অহর্নিশ। যেখানে থেকো ভালো থেকো বাবা।