অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণমাত্রায় পালন না করলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে

| মঙ্গলবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ‘যেনতেনভাবে’ কাজ করে টাকা ভাগাভাগি না করতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নতুন খাল খনন প্রকল্পের ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, প্রকল্পটি যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়। যেনতেনভাবে কাজ করে টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যাবেন, তা হবে না। মাথা-মস্তিষ্ক পরিষ্কার করে ফেলেন। অতীত যেভাবে গেছে আগামীতেও একইভাবে যাবে না। তিনি শনিবার ‘বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্প’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়ে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, সবকিছু সিটি কর্পোরেশনকে করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন শহরের মালিক। সব অথরিটির সঙ্গে কো-অপারেট করতে হবে, সবাইকে নিয়ে কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে একসাথে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন শহরের নেতৃত্ব দিচ্ছে। মেয়র সরকারের পক্ষে, জনগণের পক্ষে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অতএব কাউন্সিলর বা অন্য জনপ্রতিনিধি যারা আছেন সবাইকে একসাথে মিলে কাজ করতে হবে।
সমন্বয়ের অভাবে চট্টগ্রামে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না বলে ইতোপূর্বে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি। নির্ধারিত সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন কাজে প্রকৌশলীসহ যারা সম্পৃক্ত প্রত্যেককে ঠিকভাবে কাজ করতে হবে। কোথাও কোনো কাজে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। অবশ্য গুণগত মানও ঠিক থাকতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন বলতে শুধু অর্থ বরাদ্দ নয়। বরং কতটা সুশাসন কায়েম করতে পেরেছেন, নির্বাচিত কাউন্সিলরগণ কতটুকু জনসম্পৃক্ততা বজায় রাখতে পারছেন এবং তার এলাকা কতটুকু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন, শক্তিশালী দ্বারা শক্তিহীনরা কতটুকু অত্যাচারিত না হচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে উন্নয়ন।
আসল কথাটাই বললেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বলা জরুরি যে, চট্টগ্রামে পরিপূর্ণ সুবিধা পাচ্ছে না নাগরিকরা। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, নাগরিক সুবিধার অনেক কিছুই পূরণ হচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে আবর্জনা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়টিও তুলে ধরেন তাঁরা। এছাড়া নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, খেলার মাঠ ও পার্ক ব্যবস্থাপনাও সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকলেও সেগুলোও ঠিকমত পালিত হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন। তবে এর পেছনে কারণ হিসেবে তিনি শুধু সিটি কর্পোরেশনকে এক তরফা ভাবে দায়ী করতে চান না। তাঁরা বলেন, ‘আমরা বলছি না যে, সিটি কর্পোরেশনের দায়ভার নেই। মূল দায়টা তাদের। তবে এখানে আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা সিটি কর্পোরেশনকে তার কাজ করতে অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগ দেয় না।’ এক্ষেত্রে তাঁরা বলেন, সরকারের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে নগর পরিচালনার সাথে জড়িত নানা বিভাগ এবং মন্ত্রণালয়ের সাথে সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ের অভাব একটি বড় কারণ। তাঁরা বলেন, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি এর জবাবদিহিতারও ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে নাগরিক সেবা সুনিশ্চিত করা যাবে না।
মন্ত্রী বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করে। এ রকম গর্বিত জায়গা মর্যাদাপূর্ণ স্থানে পরিণত হবে সেই প্রত্যাশা থাকা সঙ্গত। প্রধানমন্ত্রীও এ অনুধাবনে আন্তরিক। কিন্তু চট্টগ্রামে যারা বসবাস করেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা আছেন তারা যদি অনুধাবন না করেন অথবা অর্পিত দায়িত্ব ওই মাত্রায় পালন না করেন তাহলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন স্বাভাবিকভাবে ব্যাহত হবে।
এটা খুবই দুঃখের বিষয় যে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে তেমন মাথা ঘামান বলে মনে হয় না। অর্পিত দায়িত্ব ওই মাত্রায় পালন না করলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ফ্লাইওভারের নিচে জায়গা যেন বেশি অপচয় না হয়, তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রশস্ত রাখতে হবে। উপরে এবং নিচেও গাড়ি চলতে হবে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার থাকতে হবে। নালা-ড্রেন সবগুলো পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নাগরিকদেরও দায়িত্বের কথাও স্মরণ করে দেন তিনি। তিনি বলেন, রাস্তা ঠিকভাবে ও সময়মতো হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। না হলে অভিযোগ দেন। নাগরিকরা ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করলে কোনো অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে