আজ (১৩ জুলাই) থেকে ফের গণটিকাদান শুরু হচ্ছে চট্টগ্রামে। সিটিকর্পোরেশন এলাকার পাশাপাশি একই সাথে উপজেলা পর্যায়েও এ টিকাদান শুরু হচ্ছে। এর আগে রোববার (১১ জুলাই) সকালে সিনোফার্মের ৭৮ হাজার ৪০০ ডোজ চীনা টিকা এবং মডার্নার ১ লাখ ৫ হাজার ৬০০ ডোজসহ মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ডোজ টিকা পৌঁছেছে চট্টগ্রামে। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে ভ্যাকসিন গ্রহণ কমিটির সদস্যরা এসব টিকা গ্রহণ করেন। গ্রহণের পর এসব টিকা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই স্টোরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা মেনে সংরক্ষণে রাখা হয়েছে।
প্রাপ্ত টিকার মধ্যে মডার্নার টিকা দেয়া হবে কেবল সিটিকর্পোরেশন এলাকায়। টিকার জন্য সিটিকর্পোরেশন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা এ টিকা পাবেন। আর সিনোফার্মের তৈরি চীনা টিকা দেয়া হবে উপজেলা পর্যায়ে। এ জন্য সিনোফার্মের তৈরি টিকা সোমবারই (গতকাল) উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিটিকর্পোরেশন এলাকায় ১১ কেন্দ্রে মর্ডানার টিকা : চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশন এলাকায় এবারও আগের নির্ধারিত ১১টি কেন্দ্রে এ টিকাদান কার্যক্রম চলবে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চসিক জেনারেল হাসপাতাল, চসিক মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল, চসিক বন্দরটিলা মাতৃসদন হাসপাতাল, চসিক ছাফা মোতালেব মাতৃসদন হাসপাতাল, নৌ-বাহিনী হাসপাতাল, বিমান বাহিনী হাসপাতাল, সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল), চট্টগ্রাম পুলিশ হাসপাতাল ও বন্দর হাসপাতাল। সিটিকর্পোরেশন এলাকার এই ১১ কেন্দ্রেই দেয়া হবে মর্ডানার টিকা। সিটিকর্পোরেশন এলাকায় পুনরায় গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরুর সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম সিপিকর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী।
আপাতত অর্ধেক সংরক্ষিত রেখেই টিকাদান : দ্বিতীয় ডোজের জন্য সংরক্ষিত রেখেই সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে। এ তথ্য আগেই নিশ্চিত করেছিলেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। এবার মর্ডানার টিকাও আপাতত ২য় ডোজের জন্য সংরক্ষিত রাখার কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। তিনি বলেন, আমরা এ সংক্রান্ত স্পষ্ট নির্দেশনা এখনো পাইনি। তবে যেহেতু ২য় ডোজ নিশ্চিত করতে হবে, সেহেতু মর্ডানার টিকাও আপাতত অর্ধেক সংরক্ষিত রেখেই দেয়া হবে। পরবর্তীতে যদি কোন নির্দেশনা আসে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, মর্ডানার ১ লাখ ৫ হাজার ৬০০ ডোজ টিকা বরাদ্দ পেয়েছে চট্টগ্রাম। অর্ধেক সংরক্ষিত রেখে টিকার প্রয়োগ করা হলে সিটিকর্পোরেশন এলাকায় মর্ডানা টিকার প্রথম ডোজ পাবেন ৫২ হাজার ৮০০ জন। প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের পরবর্তীতে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। সিনোফার্মের মতো মর্ডানার দ্বিতীয় ডোজও দেয়া হবে প্রথম ডোজ গ্রহণের ২৮ দিন পর।
এসএমএস ছাড়া টিকা নয় : করোনার টিকার জন্য সুরক্ষা পোর্টালে নিবন্ধন কার্যক্রম ফের উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার তালিকাভুক্তদের পাশাপাশি ৩৫ বছর ও তদুর্ধ্ব বয়সীরা টিকার জন্য নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে নিবন্ধন সম্পন্ন করলেও মোবাইলে এসএমএস প্রাপ্তি সাপেক্ষে টিকা নেয়া যাবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিপিকর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী এবং চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। এই দুই কর্মকর্তা বলেন, নিবন্ধিতদের মধ্যে যারা এসএমএস পাবেন, তারাই নির্ধারিত দিনে নিবন্ধিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন। যে কেন্দ্রের জন্য নিবন্ধন, সে কেন্দ্রে গিয়েই টিকা নিতে হবে। কেন্দ্র পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে এসএমএস না পাওয়া পর্যন্ত অযথা কেন্দ্রে ভিড় না করার অনুরোধ জানান তাঁরা।
পূর্বে এসএমএস প্রাপ্তদের পুনরায় এসএমএস-এর প্রয়োজন নেই : অনেকেই আছেন টিকার জন্য আগে নিবন্ধন করার পর এসএমএসও পেয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে টিকা নিতে পারেন নি। এরকম নিবন্ধিত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা পূর্বে এসএমএস পেয়েও টিকা নিতে পারেন নি, তাদের পুনরায় এসএমএস পাওয়ার প্রয়োজন নেই। নিবন্ধিত কেন্দ্রে গিয়ে পূর্বের ওই এসএমএস দেখিয়েই টিকা নিতে পারবেন। তারা বরং অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই টিকা পাবেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য নিবন্ধনকারী যে কেন্দ্রের জন্য নিবন্ধন করেছেন, নির্ধারিত ওই কেন্দ্রে গিয়েই টিকা নিতে হবে। কেন্দ্র পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায়।
টিকা পাবেন বিদেশগামী কর্মীরাও : বিদেশগামী কর্মীদের মাঝে সুরক্ষায় যাদের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে, এসএমএস প্রাপ্তি সাপেক্ষে তারাও চট্টগ্রামে টিকা নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। সিভিল সার্জন বলেন, সৌদি আরব ও কুয়েতগামী কর্মীদের কেবল ফাইজার ও মর্ডানার টিকা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আছে। ফাইজারের টিকা কেবল ঢাকার ৭টি কেন্দ্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে এই দুই দেশগামী (সৌদি ও কুয়েত) কর্মীদের মর্ডানার টিকাও যেহেতু দেয়া যাবে, সেহেতু তারা চাইলে মর্ডানার টিকাও নিতে পারবেন। মর্ডানার টিকা নিতে হলে তাকে অবশ্যই সিটিকর্পোরেশন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে নিবন্ধন করতে হবে। উপজেলা হাসপাতাল কেন্দ্রে যারা নিবন্ধন করবেন, তাদের সিনোফার্মের টিকা নিতে হবে। অবশ্য অন্যান্য দেশের প্রবাসী কর্মীরা সিনোফার্মের টিকা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে বিদেশগামী কর্মী যে দেশে যাবেন, সে দেশের নির্দেশনা ভালো মতো জেনে-বুঝে টিকা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন।
প্রসঙ্গত, এর আগে প্রথম দফায় সিনোফার্মের তৈরি ৯১ হাজার ২০০ ডোজ চীনা টিকা পেয়েছে চট্টগ্রাম। টিকা প্রাপ্তির পর গত ১৯ জুন থেকেই চীনা এ টিকার প্রয়োগও শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রে এ টিকাদান শুরু হয়। পরে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত অন্যদের টিকাদান কার্য়ক্রমও শুরু হয়। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। তবে চমেক হাসপাতাল কেন্দ্রের বাইরে চট্টগ্রামের আরো দুটি (চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতাল) কেন্দ্রেও চীনা এ টিকাদান কার্যক্রম চলছে।
এর আগে দুই দফায় সবমিলিয়ে ৮ লাখ ডোজের সামান্য বেশি (অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার) টিকা পায় চট্টগ্রাম। ৭ ফেব্রুয়ারি এই টিকার প্রথম ডোজ টিকাদান উদ্বোধনের পর গত ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ প্রদান শুরু হয় চট্টগ্রামে। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে- চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৫ হাজারের মতো টিকাগ্রহীতা তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। এর আগে চট্টগ্রামের (মহানগরসহ জেলায়) মোট ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০ জন মানুষ এই (অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার) টিকার প্রথম ডোজ নেন। হিসেবে প্রথম ডোজ নেয়া আরো প্রায় লক্ষাধিক টিকা গ্রহীতা দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন। এরই মাঝে প্রথম ডোজ গ্রহণের পর অনেকের সময়ের ব্যবধান তিন মাস পার হতে চলেছে। অনেকের আরো বেশি। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।