বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের ‘মাতব্বরির’ সংস্কৃতি তৈরি হয়ে গেছে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নে এজন্য কিছুটা দায় সাংবাদিকদেরও দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কারণেই বিদেশি রাষ্ট্রদূতগুলো এক্সট্রা অ্যাকটিভ; অ্যাকটিভ রাষ্ট্রদূতগুলো বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাতব্বরি করে, এটা আপনাদেরও কারণে এবং এটা একটা সামহাউ কালচার তৈরি হয়েছে, অনেক দিন। আপনাদের উচিত এসব বন্ধ করা। এ ধরনের উপদ্রব বন্ধ করার সময় এসেছে। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকা–১৭ আসনের উপ নির্বাচনের দিন গত ১৭ জুলাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের উপর হামলার ঘটনায় যৌথ বিবৃতি দেওয়া ঢাকায় ১২ দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশন প্রধানকে ডেকে অসন্তোষ জানানোর পরদিন এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইতালি সফর থেকে ফিরে গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মোমেন। ইতালিতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতালির কৃষিমন্ত্রী ফ্রান্সেস্কো ললোব্রিগিদা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি এবং বিচারমন্ত্রী কার্লো নর্দিও এফএও সদরদপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকগুলোর কোনো পর্যায়ে ইতালি সরকারের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতদের বিবৃতির বিষয়টি তোলা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে করেন এক সাংবাদিক। উত্তরে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সফরে সেটা নিয়ে বলিনি। এটার, ভদ্রতার জ্ঞান আছে, আপনি ময়লা এগুলো নিয়ে আলাপ করবেন না, দে শুড আন্ডারস্ট্যান্ড। আমরা এটা নিয়ে ওখানে আলাপ করিনি। আপনারা সবসময় ময়লা খোঁজেন, আপনাদের অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে, আপনারা ভালো জিনিস দেখবেন।
এরপর সাংবাদিকদের দায়ী করে বক্তব্য দেওয়ার পর এক সাংবাদিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, রাজনীতিকরাও কারণে–অকারণে রাষ্ট্রদূতদের কাছে যাচ্ছেন। তখন মোমেন বলেন, ইয়েস, এটা অনেক দিন ধরে কালচার– এটা তৈরি করেছেন, আমরা এই কালচারটা পছন্দ করি না।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে রোমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোলটেবিল আলোচনার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে অন্য দেশের অনেকের জ্ঞান সীমিত। সেজন্য দেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশন, আগুন সন্ত্রাস প্রভৃতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১০টি বিশেষ ব্রিফ তৈরি করেছে। আমরা বলেছি আপনারা এসব শেয়ার করবেন, আমরা বই তৈরি করেছি, এগুলো ওদের সাথে শেয়ার করবেন, তাদের জানান দেবেন। যাতে তারা আহাম্মকের মতো হঠাৎ করে একটা স্টেটমেন্ট দেবে না।
অনেক সময় না জেনে বিভিন্ন দেশ হুটহাট বক্তব্য দেয় মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেকেই, দেশ সম্পর্কে কেউ একজন গিয়ে তাকে ধরল এবং আর সে না জেনে একটা বক্তব্য দিয়ে দিল। কখনও কখনও কেউ তার ফান্ডের পয়সা দিল, আর স্বপক্ষে বলে ফেলল… আমরা বলেছি, এজন্য আপনাদের একটা বড় দায়িত্ব, আপনারা তাদের কাছে সাক্ষাৎ করে আমাদের দেশের বড় বড় ইস্যু, সেগুলো সম্পর্কে তাদের ওয়াকিবহাল করবেন, জানান দেবেন। তাহলে আমাদের মনে হয়, এ ব্যাপারে তাদের জ্ঞান বাড়বে এবং দে উইল অ্যাক্ট সেনসিবলি।