অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতনতা জরুরি

‘স্মার্টফোনে আসক্ত দেশের ৮৬ শতাংশ শিশু’

| শুক্রবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

শিশুদের মধ্যে স্মার্টফোনের আসক্তি মারাত্মক আকারে দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতি এতেটাই ভয়ানক যে তা থেকে রেহাই পাওয়া কষ্টসাধ্য। গত ২০ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে ‘স্কুলে ভর্তির আগেই স্মার্টফোনে আসক্ত দেশের ৮৬ শতাংশ শিশু’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৮৬ শতাংশ প্রিস্কুল শিশু স্মার্টফোনে আসক্ত। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ শিশুর মারাত্মকভাবে স্মার্টফোনের আসক্তি রয়েছে। কিন্তু প্রতি ১০ জন মায়ের মধ্যে ৪ জনই সন্তানের স্মার্টফোনের আসক্তি সম্পর্কে জানেন না। সম্প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছরের ৪০০ প্রিস্কুল শিশুর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ প্রিস্কুল শিশু স্মার্টফোনে আসক্ত, যার মধ্যে ২৯ শতাংশের মারাত্মকভাবে স্মার্টফোনের আসক্তি রয়েছে। কিন্তু প্রতি ১০ জন মায়ের মধ্যে ৪ জনই স্মার্টফোনের আসক্তি সম্পর্কে অবগত নন। বাবামা সন্তানদের সময় কম দেওয়ার কারণে ৮৫ শতাংশ শিশু স্মার্টফোন আসক্তিতে ভুগছে। এছাড়াও খেলার মাঠের অভাবে ৫২ শতাংশ ও খেলার সাথীর অভাবে ৪২ শতাংশ শিশুস্মার্টফোনের দিকে আসক্ত হচ্ছে। ৭৯ শতাংশ প্রিস্কুল শিশু কার্টুন বা কল্পকাহিনী দেখার জন্য, ৪৯ শতাংশ গেম খেলার জন্য, ৪৫ শতাংশ শিশু টেলিভিশন/ভিডিও দেখা বা গান শোনার জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করে। অন্যদিকে, শুধু ১৪ শতাংশ শিশু অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নির্বাচিত ৪০০ শিশুর প্রত্যেকে স্মার্টফোন ব্যবহার করে, যাদের মধ্যে ৯২ শতাংশ তাদের বাবামায়ের স্মার্টফোন ব্যবহার করে এবং ৮ শতাংশ শিশুর ব্যবহারের জন্য পৃথক স্মার্টফোন আছে। এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের শিশুরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কর্তৃক সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ সময়ের প্রায় ৩ গুণ।

শিশুদের মোবাইল ফোন বা ট্যাবে বেশি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রথমত, শহরের অধিকাংশ পরিবারে মাবাবা দু’জনই চাকরিজীবী। অফিস শেষ করে সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। ফলে শিশুরা মাবাবার আদরযত্ন থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হয়। তাই তারা শিশুদের অবসর সময় কাটানোর জন্য ফোন বা ট্যাব দিচ্ছেন। ফলে শিশুরা সহজেই এসবে আসক্ত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, একসময় শিশুদের খেলাধুলা করার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ ছিল। তখন শিশুরা বাইরে খোলা মাঠে খেলাধুলা করত। বর্তমানে খোলা মাঠ যেমন নেই তেমনি ঘরের বাইরে শিশুদের খেলতে পাঠানোর আগে নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবেন অভিভাবকরা। তাই অনেক অভিভাবকই ঘরে শিশুদের গেমস, কার্টুন দেখে সময় কাটানোকে শ্রেয় মনে করেন। তৃতীয়ত, মা বাবা হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। তাদের পাশে বসে ছোট শিশুটা দুষ্টুমি করছে। তাকে শান্ত রাখার জন্য তার হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দিলেন। গান, কার্টুন বা মজার ভিডিও ছেড়ে দিয়ে তাকে নিমিষেই শান্ত করে মা বাবা নিজের কাজে মনোনিবেশ করলেন। এভাবেই শিশুরা আসক্ত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশুরা মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটারে আসক্ত হয়ে পড়লে তাদের মানসিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে। মোবাইলের বিকিরণের কারণে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়াসহ স্বাস্থ্যগত নানা ঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা। যে সময়টায় শিশুর খেলার কথা, শেখার কথা, সেই সময়টায় শিশুর চিন্তা ধারা বা বুদ্ধি একটি ডিভাইসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। সে জন্য সামাজিক ও পারিবারিক বিষয়গুলো সে শিখতে পারে না, শিশু আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। এটা গেল মানসিক বিষয়। শারীরিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশু। শিশুর চোখ ও ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এসব ডিভাইস থেকে নানা ধরনের রেডিয়েশন বের হয়। শিশু দিনে এক ঘণ্টা এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে খেলতে পারে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি সময় খেললে সমস্যাগুলো হতে পারে।

এটি সত্য যে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের ব্যবহার সবার জন্য জ্ঞানার্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম। তবে তার অতিরিক্ত ব্যবহার বা আসক্তি নানা জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্ম দেয়। গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায়, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে মোবাইল ফোনের চুম্বকীয় রশ্মির প্রভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতির আশঙ্কা প্রবল; এমনকি মস্তিষ্কে টিউমারও দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক বিশ্বে স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট প্রযুক্তির ভালোমন্দ দুটি দিকই রয়েছে। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন প্রযুক্তি শিক্ষা ও জ্ঞানলাভের একটি শক্তিশালী মাধ্যম; তাতে সন্দেহ নেই। আজকের যুগে শিশুদের এই আসক্তি নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতনতা, একনিষ্ঠ চেষ্টা এবং শিশুদের প্রতি দায়িত্বশীলতাই তাদের এ ঝুঁকি থেকে মুক্ত করতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে