কিশোররা জাতির স্বপ্ন ও আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এরা ঘুনে ধরা সমাজকে সভ্যতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এটাই জাতির আকাঙ্ক্ষা। এরা নতুন প্রাণে জেগে ওঠবে। এটাই তাদের ধর্ম। এসময়ে কিশোররা থাকে অত্যন্ত দূরন্ত। দূরন্ত মনে তারা ছুটে চলে দূর–দূরান্তে। শুধু তাই নয়, এ সময় তাদের মধ্যে দেখা যায়, কৌতুহলী মনসহ নানা গুণাবলি। এটাই কৈশোরের বৈশিষ্ট্য। সন্তানের এ কৈশোর মনকে সুন্দরভাবে বিকশিত করতে পারে একমাত্র মা বাবা বা অভিভাবক। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের আদর্শ ও ইতিবাচক মনোভাব কিশোরদের মননশীল করে তুলে। কিন্তু, পারিবারিক বন্ধনের অভাবে কিশোররা আজ ভিন্ন পথে পরিচালিত হচ্ছে। মা বাবার মধ্যে নিয়মিত কলহ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতা ও পরিবারের ভাঙনের কারণে সন্তানরা সঠিক দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুল কলেজে ভর্তি করিয়ে দায়িত্ব শেষ মনে করেন, এরপর সন্তানরা কোথায় যায়, কার সাথে মেশে এসব খোঁজ রাখার প্রয়োজনই মনে করেন না। অধিকাংশ সময় কিশোররা মোবাইল বা কম্পিউটারে ব্যস্ত থাকে, তারা সেখানে কী দেখছে, এটা নজর রাখার মতো সময়ও অভিভাবকের নেই। মা বাবার অসচেতনার কারণে শিশু কিশোররা আজ সুন্দর পথ থেকে ছিটকে পড়ছে। তারা ধীরে ধীরে খারাপ পথে পা বাড়াচ্ছে। বেশিরভাগ অভিভাবকরা তাদের পেশা ও অধিকতর উপার্জনের নেশায় সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে। অধিকাংশ মায়েরা মোবাইল ও টিভি সিরিয়াল দেখে ব্যস্ত সময় কাটায়। ফলে অভিভাবকেরা সন্তানদেরকে নিয়মিত সময় দিতে পারেন না। নানামুখী ব্যস্ততার কারণে সন্তানদের ধর্মচর্চায় আগ্রহী করে তুলতে ও নৈতিক শিক্ষায় গড়ে তুলতে মা বাবারা খুব বেশি আন্তরিক বা মনোযোগী নন। ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে কিশোররা আজ অন্ধকার পথের দিকে হাঁটছে। কিশোররা আজ সঠিক নির্দেশনার অভাবে দিশেহারা হয়ে এক একটি দল গঠন করে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে, যা আজ কিশোর গ্যাং নামে পরিচিত। এদের অত্যাচার নির্যাতনে সমাজ বিষিয়ে উঠেছে। পারিবারিক সচেতনতা সহ পরিকল্পিত নগরায়ণ করে সেখানে খেলার মাঠ, পার্ক ইত্যাদি ব্যবস্থা থাকলে আজ কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হতো না। আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাও কিশোর গ্যাং তৈরির জন্য দায়ী মনে করি। পরিবর্তনশীল শিক্ষাব্যবস্থায় সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর না আছে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা, না আছে বাস্তবমুখী কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। এর উপর রয়েছে শিক্ষার্থীদের জিপিএ ৫ পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ফলে যারা মেধাবী তারা শুধু টাকা উপার্জনের মেশিনে পরিণত হচ্ছে আর বাকিরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার কারণেও শিক্ষার্থী কিশোররা আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে নানা অপরাধকর্মে লিপ্ত।
এ জন্য অভিভাবকদের সর্বোচ্চ সচেতনতা, সুস্থ বিনোদন চর্চা ও তার পরিবেশ তৈরি করা সহ শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে রাখতে হবে। তবেই, কিশোর গ্যাং অপসংস্কৃতির অবসান ঘটে সমাজে শান্তি–শৃঙ্খলা ফিরে আসবে আর দেশ ও জাতি একটি ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে।