অভাব-অনটনে ৫০ কুটির শিল্প পরিবার

বারৈয়াঢালা

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বুধবার , ২৬ মে, ২০২১ at ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বহরপুর গ্রামের ৫০ কুটির শিল্প পরিবার ভাল নেই। প্রয়োজনীয় পুঁজি, উপকরণ আর বাজার দরের অভাবে ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এক সময় এই গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার এই পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল। বর্তমানে এসব পরিবারগুলোতে নেমে আসছে অভাব-অনটন। এই এলাকার হিন্দু পরিবারের একটি বিরাট অংশ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। শত অভাবের মধ্যেও লোকেরা পূর্ব পুরুষের এই পেশা আঁকড়ে ধরে আছে।
এই শিল্পের সাথে জড়িতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় তাদের নিপুণ হাতে উন্নতমানের ধামা, ঢোল, ডালা, চাটাই, খাড়ই, হাঁজি, কুলা, ডালা, চালন, মোড়া, ঝুড়ি, চেয়ার, বুকসেলফ, কলমদানিসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। বাজারে এগুলোর চাহিদাও ছিল প্রচুর। অনেকে আবার বাড়িতে গিয়ে অর্ডার দিয়ে আসত। স্বাচ্ছ্যন্দময় ছিল তাদের জীবন-যাপন। বেত শিল্পের সাথে এখনো জড়িত বহরপুর গ্রামের অনীল চন্দ্র দাশ (৫০) জানান, তখন প্রচুর বেত উৎপাদন হতো। স্বল্পমূল্যে অনায়াসে বেত পাওয়া যেত। এখন বেত নেই বললেই চলে। দূর-দূরান্ত থেকে বেত কিনে আনতে হয়। দামও অনেক। বেতের তৈরি মাঝারি আকারের একটি ধামার বর্তমানে দাম পড়ে ১৫শ’ টাকা। এ মূল্যে অনেকেই কিনতে চায় না। এ পেশায় জড়িত আরো অনেকে জানান, মাত্র কয়েকবছর আগেও এ অঞ্চলে বাঁশ ছিল সহজলভ্য। ৪০ থেকে ৫০ টাকায় একটি বাঁশ কেনা যেত। এখন তার দাম দেড়শ’ থেকে দুশ টাকা। কিন্তু সে অনুপাতে উৎপাদিত দ্রব্যের দাম তেমন বাড়েনি। পাশাপাশি প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্যাদির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এগুলোর চাহিদা কমে গেছে। বহরপুর এলাকার বেত শিল্পের সাথে জড়িত ফাতেমা আক্তার ও জোৎস্না বেগম ক্ষোভ ও হতাশার সঙ্গে জানান, কেউ তাদের খোঁজ নেয় না। জানতে চায় না তাদের সুখ-দুঃখের, সুবিধা-অসুবিধার কথা। বাঁশ দিয়ে প্রতি খাঁচা তৈরি করতে খরচ পড়ে ২০টাকা। অথচ বাজারের ২০টাকা দিয়ে বিক্রি করতে হয়। বাঁশের তৈরি সব ধরনের পাত্র তৈরি করতে গিয়ে উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাজার মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলোর দাবি, পরিবারভিত্তিক ব্যাংক ঋণ ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি উপকরণ সরবরাহের ব্যবস্থা করলে বাঁশের তৈরি কুটির শিল্পটাকে একমাত্র অবলম্বন করে টিকে থাকা এখনও সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুঁইছড়িতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা
পরবর্তী নিবন্ধনা ফেরার দেশে সোলসের রনি