অবসর মানে অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ জীবন

মৃন্ময়ী মৃম

অভিমত | বৃহস্পতিবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চাকরি থেকে অবসরে গেলে, বয়স বাড়লে জীবন গুটিয়ে নিতে হয় এটা বাঙালির একটা ভ্রান্ত ধারণা, যা একজন মানুষকে জীবন্মৃত করে দেয়। আর কোনও জাতি এই মানসিকতা লালন করে বলে মনে হয় না আমার। এই ভুল ধারণা থেকে প্রতিটি মানুষের বের হয়ে আসা খুবই জরুরি। বরং বয়স হলেই যে বিষয়টি সবার আগে ভাবতে হবে তা হলো আমিই এখন আমার বন্ধু, আমিই এখন আমাকে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসবো, ভালো রাখবো। আমার জন্য কেউ ভাববে, সহানুভূতিশীল হবে, ভালো রাখার দায়িত্ব নেবে সেই আশা না করাই বরং নিজেকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। মানুষ যত বয়স হয় তত অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয় যা চিন্তা, চেতনা ও মনকে পরিপক্ব করে। সেই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পারলে সমাজ উপকৃত হয়। ছড়িয়ে দেওয়ার অনেক পথ আছে। বেছে নিতে হবে নিজেকেই। অধিকাংশ মানুষ তা না করে ঘরকুনো হয়ে পড়ে থাকেন। একাকীত্বে ও হতাশায় ভোগেন। এর প্রভাব পড়ে শরীর ও মনে।

তাই তা একদম অনুচিত। নিজেকে ফিট রাখতে চাইলে সৃজনশীল কাজের সাথে জড়িত থাকার কোনও বিকল্প নেই। বয়স একটা সংখ্যা মনে হয় যখন মনের তারুণ্য ধরে রাখা যায়। নেগেটিভ চিন্তা একদম ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে নিজেকে সবুজ সজীব রাখতে হলে। নিজের ব্যর্থতা কখনো ফিরে দেখা উচিত নয় একটা বয়সের পর এসে। তখন শুধুই হিসাব কষা আমি এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে কী কী দায়িত্ব পালন করেছি। কোন কোন ভালো কাজ করতে পেরেছি। শেষ বয়সে এসে কী পাইনি তার হিসেব মেলাতে গেলে নিজের প্রতিই অবিচার করা হয়। যা পেয়েছি যথেষ্ট এই ভাবনাই শেষ বয়সে মানুষের আত্মতুষ্টি আনে।

অনেক সময় সমালোচনার ভয়ে বয়স হয়ে গেলে মনের বিরুদ্ধে মানুষের খুশির জন্য নিজের জীবনধারা বদলাতে থাকি আমরা। এই কাজটা যে কত ভুল বলার অপেক্ষা রাখে না। মনে রাখবেন কোনও মানুষই সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। আর বাঙালি সমাজের মানুষ নেতিবাচক সমালোচনাই বেশি করে যেটা অনেকটা স্বভাবজাত। তাই সমালোচনা গ্রহণ করেই নিজের মতো চলতে হবে। সমালোচকদের ভয়ে নিজের ভালো থাকা বদলাতে যাবেন না কখনো। কারণ আপনি খারাপ থাকলে তারা কখনোই আপনার ভালো থাকার ব্যবস্থা করে দেবে না। আপনি কোন রঙের কাপড় পরলেন, কীভাবে সাজলেন, তা নিয়ে সমালোচকরা সর্বদাই ব্যস্ত থাকবে। কিন্তু আপনার কাপড় কেনার, খাওয়ার টাকা আছে কী না, ভালো আছেন কী না, বেঁচে থাকার জন্য কিছু প্রয়োজন কী না সে নিয়ে তারা কখনোই ভাববে না, জিজ্ঞাসাও করবে না।

তাই এই ধরনের সমালোচনা অগ্রাহ্য করে নিজেকে ভালো রাখতে সহায়তা করে এমন জীবন যাপন বেছে নেওয়া আপনার নিজের প্রতি নিজের একটা কর্তব্য । অবসর জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে নিজেকেই। ফিরে আসুন নিজের ভালো লাগার জগতে যা বহুদিন আপনি ভুলে ছিলেন। পছন্দের কাজ, ভালো লাগা হবি আবার ফিরিয়ে আনুন। সময় কাটান প্রকৃতির সাথে, স্রষ্টার আরাধনায়, শিশুদের সাথে, পোষা প্রাণী নিয়ে। নিজের প্রতি যত্নবান হোন, পরিপাটি থাকুন যেমনটি ছিলেন ইয়ং বয়সে। ভুলে ভাবতে যাবেন না কে কী ভাবছে। অবসর মানে অনিয়ম জীবনধারা নয়। বরং বেশি নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিয়মিত হাঁটতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, ঘুমানো, সকালে ঘুম থেকে ওঠা একান্ত জরুরি স্বাস্থ্য নিরোগী রাখতে। আমরা সবাই মরণশীল। কিন্তু তার আগেই যেন জীবন্মৃত হয়ে না যান, পরিবারের গলগ্রহ বা বোঝা না হোন সেই দায়িত্বটা একান্ত আপনার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফেরারি মন
পরবর্তী নিবন্ধউন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সবাই চায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন