অবক্ষয়ের শেষ সীমানায় আমরা

আজহার মাহমুদ | মঙ্গলবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ

সমাজ এবং দেশ যখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় ভাসছে, ঠিক তখনই অন্য প্রান্তে ডুবে যাচ্ছে মানুষের সভ্যতা, শিষ্টাচার, নৈতিকতা আর সৌজন্যবোধ। হারিয়ে যাচ্ছে মানবতা আর মনুষ্যত্ব। সমাজে এখন সিনিয়র, জুনিয়র একে অপরের প্রতি নেই কোনো সৌহার্দ এবং ভালোবাসা। নেই সম্মান আর স্নেহ। নেই গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি আর সৌজন্যবোধ। বলা যায় শিষ্টাচারিতার স্থানটি প্রায় লোপ পেয়ে যাচ্ছে এ দেশ এবং সমাজ থেকে। আর এর জন্য অনেকটাই দায়ী আমাদের বর্তমান কৃষ্টি-কালচার। সেই সঙ্গে আছে পারিবারিক শিক্ষা।
শিক্ষাটা যে পরিবার থেকে আসবে তাও নয়। সেটা হতে পারে সমাজ থেকে, স্কুল থেকে, বড় ভাই থেকে, বন্ধু থেকে, কর্মস্থল থেকে, কিংবা কোনো সংগঠন থেকে। কিন্তু বাস্তবে সমাজ, পরিবার, স্কুল, কলেজ, বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাই কিংবা সংগঠন কোথাও এই শিক্ষা নেই। তাই তো এখন বড়-ছোট কোনো পার্থক্য নেই সমাজে। এখন ছোটরাও বড়দের ওপর আঘাত করতে সামান্যতম চিন্তা করে না। যার ভেতর শিষ্টাচার, সৌজন্যবোধের অভাব থাকবে সে তো বড়দের আঘাত করবেই। আর এই অভাব রাখার দায়টা বড়দেরকেই নিতে হবে।
আজকাল বড়রাই ছোটদের এই শিষ্টাচার, নৈতিকতা এবং ভদ্রতা শেখানোর চেয়ে নোংরা এবং বিকৃত করে তুলছে। তারাই ছোটদের নিয়ে কুকর্ম আর অন্যায় পথে হাঁটছে। সমাজের তথাকথিত বড় ভাইরা ছোট ভাইদের হাতে আজ অস্ত্র, ইয়াবা এসব তুলে দেয়। আর এসব দিকে সমাজ, পরিবার খুব একটা নজর দেয় না। এরপর একদিন নষ্ট ছেলেটা নিজের বাবা-মায়ের ওপর আঘাত করতে দ্বিধাবোধ করে না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ঐশী। একটা বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, আজ আপনি যা করবেন কাল আপনার ছোটরা সেটা আপনার সঙ্গে করবে। আপনি যদি আপনার বড়কে সম্মান না দেন তাহলে আপনাকে আপনার ছোটজন কীভাবে সম্মান দেবে? আর আপনিও সেই সম্মান কীভাবে আশা করবেন? তাই সচেতন হতে হবে আপনাকে, আমাকে। আর সেই সচেতনতা শুরু করতে হবে এখন থেকে। যার যার অবস্থান থেকে মানবিকতা, নৈতিকতা, নম্রতা, ভদ্রতা, শিষ্টাচারিতা, সৌজন্যতা এবং ভালো ব্যবহার করতে হবে। তবেই অন্যজন আমাকে দেখে শিখবে। আমি অন্যজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে তার বিনিময়ে আমিও ভালো ব্যবহার পাব। তাই আগে নিজে পরিবর্তন এবং সচেতন হই, তারপর অন্যজনকে সচেতন করার কথা ভাবি। আমি যা করি না তা অন্যজনকে করতে বলাটাও এক ধরনের ভণ্ডামি। আমি অন্যায় কাজ করি, আর মানুষকে বড় বড় লেকচার দিয়ে বলব, অন্যায় কাজ করিও না। এমন নৈতিকতার প্রয়োজন নেই। আমি কেমন সেটা মুখ দিয়ে প্রমাণ না করে কাজে প্রমাণ করাটাই আসল প্রমাণ। তাই আসুন আমরা প্রত্যেকে যার যার স্থান থেকে পরিবর্তন হই, দেখবেন একদিন দেশ হয়ে উঠবে ভালোবাসায় ভরপুর। সবার ভেতর থাকবে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। আর সেই শ্রদ্ধা হবে খাঁটি। তাই এখন থেকে নিজেদের ভেতর সেই মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপায়রার দাম ১৬ কোটি টাকা!
পরবর্তী নিবন্ধপেরুর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ