আনোয়ারায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক অফিস সহকারীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন এখানকার ১১০ স্কুলের ৭ শতাধিক শিক্ষক। ইতিমধ্যে এ অফিসের সাবেক শিক্ষা অফিসার বেলাল হোসেন, সাবেক শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার আর্চায্য, অফিস সহকারী আবদুল করিমের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিভাগীয় মামলায় তাদের শাস্তি হয়েছে। তারপরও থেমে নেই এই অফিসের অনিয়ম–দুর্নীতি। শিক্ষকদের বকেয়া বেতন, অবসর ও আনুতোষিক ভাতা, মেডিকেল ছুটি, একাউন্ট বদলি, শিক্ষক বদলি, বেতন হিসাব, শ্রান্তি বিনোদনসহ সর্বক্ষেত্রে টাকা ছাড়া কোনও বিলই ছাড় হয় না। টাকা না
দিলে মাসের পর মাস অফিসে বিল পড়ে থাকে ফাইল বন্দি হয়ে। আবার অনেকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিয়েও বিল পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষকদের। সেই সাথে শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার, নারী শিক্ষকদের অফিসে বসিয়ে রাখার অভিযোগও রয়েছে।
শুধু তাই নয় গত ২২ ডিসেম্বর যোগদান করা ২৬ জন শিক্ষকও দুই মাস ধরে বেতন পাননি। গত দুই দিন আগে ট্রেজারি অফিসে তাদের বেতন ভাতার বিল জমা দিতেও নানান ভোগান্তির শিকার হন বলে অভিযোগ সদ্য যোগদানকারী শিক্ষকদের। স্থানীয় শিক্ষকদের অভিযোগ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের
অফিস সহকারী কাম কম্পিটার মো. রবিউল হোসেন চৌধুরী সাধারণ শিক্ষকদের জিম্মি করে হয়রানি আর অনৈতিকভাবে টাকা আদায় করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কুনির বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো.কামাল উদ্দীন বলেন, জাতীয় বেতন স্কেল– ২০০৫ অনুযায়ী আমার বেতন নির্ধারণ বিবরণীতে অফিসিয়াল ভুলের কারণে বিগত ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি হতে অদ্যাবদি হয়রানির শিকার হয়ে আসছি। আমার বেতন বিলের সাথে ১টি ইনক্রিমেন্ট কম
পেয়ে আসছি। এজন্য এরিয়ার বিল পেতে দীর্ঘ দিন ধরে অফিস সহকারী মো. রবিউল হোসেন চৌধুরীকে বার বার মৌখিকভাবে বলার পরও বিল না করায় আমি গত বছরের ১১ ডিসেম্বব আমার ক্লাস্টার অফিসার উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সানাউল্লাহ কাউসারের সুপারিশসহ উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা
অফিসার বরাবরে লিখিত আবেদন করি। কিন্তু অফিস সহকারী মো. রবিউল হোসেন চৌধুরী মোট বকেয়া বিলের ৪০% টাকা না দিলে বিল করতে অস্বীকৃতি জানান। বিষয়টি আমি উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা অফিসার আনোয়ারুল কাদেরকে অভিহিত করলে তিনি রবিউলের সাথে সমন্বয় করতে বলেন। আমি বার বার অফিসে ধর্না দিলেও চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
অপরদিকে, তুলাতলি আইর মঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধির রঞ্জন নাথের অভিযোগ, গত ২০১৬ সালে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করি। এরপর থেকে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী মো. রবিউল হোসেনের কাছে আমার অবসর ও আনুতোষিক
বিলগুলো করে দেওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করলেও বছরের পর বছর ধরে শিক্ষা অফিসে বকেয়া বিলের জন্য ধর্ণা দিতে থাকি। কিন্তু টাকা ছাড়া অফিস সহকারী মো. রবিউল হোসেন বিলে হাত দিতে নারাজ। তার দাবি ৭০ হাজার টাকা দিলে এ বিল করা হবে। এরপর বাধ্য হয়ে তাকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি
মাসে ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করি। এতে সে অর্ধেক বিল করে দিতে রাজি হয়। বাকী ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করলে পুরো বিল করবে বলে জানায়। কিন্তু গত দুই বছরের অধিক সময় আগে তাকে ৩৫ হাজার টাকা দেওয়ার পরও এখনো আমার অবসর ও আনুতোষিক ভাতা বিলের জন্য তার কাছে প্রতি সপ্তাহে
ধর্ণা দিতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, আমার মত প্রতিদিন শিক্ষা অফিসে শত শত শিক্ষক তাদের বিভিন্ন পাওনাদি নিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
তবে আনোয়ারা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মো. রবিউল হোসেন চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ‘মিথ্যা’ ও ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন। আনোয়ারা উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা অফিসার আনোয়ারুল কাদের এসব বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।