অপেক্ষার শেষ, দূর হচ্ছে কুতুবদিয়ার অন্ধকার

আগামী মাসে জ্বলবে বিদ্যুতের আলো

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর অবশেষে বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হতে যাচ্ছে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। দ্বীপবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে

আগামী মাসে (ফেব্রুয়ারি) মহেশখালীর মাতারবাড়ি থেকে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ যাবে এই দ্বীপে। দেশব্যাপী শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে কুতুবদিয়াকে জাতীয় গ্রিডের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ।

প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ আজাদীকে বলেন, কুতুবদিয়ায় শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। গত ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু বিদেশ থেকে প্রকল্পের মালামাল আসতে দেরী হওয়ায় কাজ একটু পিছিয়েছে। গত সপ্তাহে প্রকল্পের অগ্রগতি দেখার জন্য বিদ্যুৎ সচিব ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। আগামী মাসে (ফেব্রুয়ারি) উদ্বোধন হবে বলে আশা করছি।

তিনি আরও জানান, হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপে শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় তিনটি দ্বীপে মোট ৭২০ কিলোমিটার সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। মহেশখালির মাতারবাড়ি থেকে মগনামা ঘাট পর্যন্ত ৩৩ কেভি রিভার ক্রসিংসহ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। মগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া ৫ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট সাবমেরিন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে কুতুবদিয়ায় দুই কিলোমিটার ওভার হেডলাইন ও বিতরণ লাইন। এই প্রকল্পের আওতায় নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে তিনটি সাব স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। হাতিয়া থেকে ১১ কেভি সাবমেরিন লাইনের মাধ্যমে নিঝুম দ্বীপে বিদ্যুৎ নেওয়া হবে।

উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম তিন দিকে বঙ্গোপসাগর আর পূর্বে কুতুবদিয়া চ্যানেল। প্রায় ২১৫

বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সাগরের বুকে ভেসে থাকা দ্বীপ কুতুবদিয়া। জানা যায়, এই উপজেলায় ১৯৮০ সালে জেনারেটরের মাধ্যমে প্রায় ৬০০ গ্রাহকের মধ্যে সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেলে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপরেও ২০০২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় স্বল্প আকারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বিউবো ২০০৫ সালে দেড় কিলোমিটার লাইন মেরামত করে দুটি জেনারেটরের মাধ্যমে সন্ধ্যার পর কয়েক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। তবে এ সুবিধা পেয়েছে উপজেলা সদর ও নিকটবর্তী এলাকার মানুষ। এছাড়া, অচল অবস্থায় পড়ে থাকায় ২০০৫২০০৮ সালের মধ্যে অনেক এলাকা থেকে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়ে যায়।

বিদ্যুতায়ন প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কুতুবদিয়া উপজেলার লোকসংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৮ জন। বর্তমানে দুই লাখ ছাড়িয়েছে। ৩০ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিলে পুরো এলাকা কাভার করবে। কারণ গড়ে এক জন গ্রাহক থেকে ৬ থেকে ৭ জন বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করবেন। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ৪০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। তবে তার আগেই প্রকল্পটির কাজ শেষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅভিযান চলে, অবস্থার উন্নতি হয় না
পরবর্তী নিবন্ধএমআরআই মেশিন কেনাসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস