অপার সম্ভাবনা, তবু পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে চট্টগ্রাম

শুকলাল দাশ | বৃহস্পতিবার , ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব কবির ‘সোনার বাংলা’, নজরুলের ‘বাংলাদেশ’, জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’ রূপের যে তার নেই কো শেষ, বাংলাদেশ।” আবহমানকাল থেকে বাংলার বিভিন্ন কবি সাহিত্যিক এইভাবেই বাংলার রূপ বৈচিত্র্যের বর্ণনা করে আসছেন। আসলেই এই দেশের প্রতিটি অঞ্চলের কিছু না কিছু নিজস্ব দর্শনীয় স্থানঐতিহ্য এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা যুগে যুগে বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকের সাহিত্যে উপজীব্য হয়ে উঠেছে। তবে শুধু কবি সাহিত্যিকই নয় এই দেশের রূপ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বারে বারে মুগ্ধ করেছে হাজারো পর্যটককে। তেমনি মুগ্ধ করার মতো অসংখ্য আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে আমাদের এই চট্টগ্রামে।

ঘন সবুজ সুউচ্চ পাহাড়ে ঘেরা, নদনদী বেষ্টিত আমাদের চট্টগ্রাম প্রাচ্যের রাণী হিসেবেই সুপরিচিত। পাহাড়, টিলা, লেক, সমুদ্র আর বৈচিত্রপূর্ণ গাছগাছালি সমৃদ্ধ এ অঞ্চল পর্যটকদের বরাবরই হাতছানি দেয়। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সম্পদে পরিপূর্ণ অঞ্চল দেশে আর কোথাও নেই। আর এ অঞ্চলটি হতে পারে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় একটি অঞ্চল। কিন্তু সঠিক উদ্যোগ আর নানান প্রতিবন্ধকতায় চট্টগ্রামের অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের তেমন বিকাশ ঘটেনি। নানা প্রতিকূলতায় পিছিয়ে রয়েছে চট্টগ্রামসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটনের এই বিশাল সম্ভাবনাময় খাত।

পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। আর তাই চট্টগ্রাম হতে পারে পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনার দ্বার।

শুধু আমাদের চট্টগ্রামের মধ্যে রয়েছে আকর্ষণীয় অনেক পর্যটনের স্থান।

যে গুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, ভালোমানের খাবারের হোটেলেরসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে এই বিনোদন কেন্দ্র গুলো পর্যটক বান্ধব হয়ে উঠতো। পতেঙ্গা সী বিচ, পারকি সী বিচ, সবুজ পাহাড়ে ঘেরা নয়নাভিরাম প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা ফয়েজ লেক, ফৌজদারহাট ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক, সীতাকুণ্ড গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, সীতাকুন্ড ইকোপার্ক, ভাটিয়ালি লেক, চন্দ্রনাথ পাহাড়, মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা, মহামায়া লেক, মুহুরী প্রজেক্ট, সুপ্তধারা ঝর্ণা, কমলদাহ ঝর্ণা গুলো দিনদিন পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠছে। এছাড়াও কর্ণফুলীর তীরবর্তী পতেঙ্গা নেভাল এরিয়া, চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি, ডিসি হিল, বাটালি হিল, ওয়্যার সিমেট্রি, পাহাড় ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা গুলো পর্যটনের অন্যতম আকর্ষনীয় স্থানে পরিনত হয়েছে।

এদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে রয়েছে সারা বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, আছে সুউচ্চ পাহাড় ঘেরা সাজেক, বান্দরবানের নীলগিরি, নীলাচল, খাগড়াছড়ি, এবং রাঙামাটির দৃষ্টি নন্দন পর্যটন কেন্দ্র গুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। আরো আছে সোনাদিয়া দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, ছেড়া দ্বীপ, হিমছড়ি, ইনানী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যে ঘেরা এই পর্যন্ত কেন্দ্র গুলো আমাদের অমূল্য সম্পদ। পাহাড়, টিলা, লেক, সমুদ্র আর বৈচিত্রপূর্ণ গাছগাছালি সমৃদ্ধ এ অঞ্চল পর্যটকদের প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে।

বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলনে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১০০ কোটি। তাদের ৭৫ শতাংশ এখন ভ্রমণ করেন এশিয়ার দেশগুলোতে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও সারা বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল কয়েকটি পর্যটন মার্কেটের অন্যতম। পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত বিভিন্ন সেক্টরের যেমনহোটেলমোটেল, রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট, এয়ারলাইন্সপরিবহনসহ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে পৃথিবীর অনেক দেশ প্রতিবছর প্রচুর রাজস্ব আয় করে, যা অন্য যে কোন বড় শিল্প থেকে পাওয়া রাজস্ব আয়ের চেয়ে শতগুণ বেশি। দেশে পর্যটন শিল্পকে বৈদেশিক মুদ্রা খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর এক তৃতীয়াংশের আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন শিল্প। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ১০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ তাদের জীবন জীবিকার জন্য এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমাদের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে সঠিক উদ্যোগের কারনে কাজে লাগানো যাচ্ছেনা। অথচ আমাদের দেশে এমন কিছু পর্যটন স্পর্ট রয়েছে বিশেষ করে চট্টগ্রামকক্সবাজার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে যা চোখ জুড়ানোমুগ্ধ হওয়ার হওয়ার মতো।

চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পের বড় প্রতিবন্ধকতা থাকাখাওয়ার অসুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা: বাংলাদেশে প্রতিবছর এক কোটি পর্যটক দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করে থাকেন। চট্টগ্রাম জেলার পর্যটন এলাকার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি জেলা এবং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তবে এখনো অনেক স্থানে থাকাখাওয়ার সুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথভাবে গড়ে ওঠেনি। এটি চট্টগ্রামসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্প বিকাশের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুধুমাত্র কক্সবাজারে পর্যাপ্ত হোটেলমোটেল রির্সোট গড়ে উঠলেও দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র সৈকতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। অপরদিকে রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি সদর ছাড়া আকর্ষনীয় পর্যটন স্পর্ট গুলোতে নেই ভালো মানের খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা।

অপরদিকে পতেঙ্গা বিচ, পারকি বিচ, সীতাকুণ্ড এবং মীরসরাইয়ের পর্যটন স্পর্ট গুলোতে খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই, নেই পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী আমাদের চেয়ে অনেক ছোট দেশ মালদ্বীপের পর্যটন খাতে আয় অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে শুধু কিছু হোটেলমোটেল নির্মাণ করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। পর্যটকদের যাতায়াত, নিরাপত্তা, থাকাখাওয়ার সুবিধাসহ সবকিছুর সুবন্দোবস্ত থাকা আবশ্যক। পর্যটন শহর, নগরগুলোর পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার প্রয়োজন রয়েছে। তাহলেই কেবল পর্যটন খাতে ভালো ভবিষ্যতে আশা করা যেতে পারে। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে বলেও মনে করে থাকেন অনেক পর্যটক। এখানে বেড়াতে এসে দৃর্বৃত্তের কবলে পড়েন অনেকে। কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে গোসলে গিয়েও প্রাণ হারান পর্যটকরা। তাই স্বাচ্ছন্দপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিত করা ছাড়া পর্যটন শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়। তাছাড়া যেসব স্থানে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে, সেগুলোর সৌন্দর্য ও স্বাভাবিকতা বজায় রাখা আবশ্যক। একই সাথে দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানে সময়োচিত বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে পর্যটন শিল্প বিকাশের অনূকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

পর্যটন শিল্প দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। বিদেশি পর্যটক ছাড়াও অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিষয়ক ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে। এ জন্য বিভিন্ন স্পট তৈরি করে আনুষঙ্গিক সুবিধা জোরদার করতে হবে। আমাদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতটি কোথাও কাদার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এবং এর রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বর্তমানে কক্সবাজার নিয়ে চলছে নানা পরিকল্পনা। ইতোমধ্যে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগর তীর ঘেঁষে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ দেশিবিদেশি পর্যটকদের কাছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের পর্যটক বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটন আকর্ষণে কক্সবাজারে আসে। বর্তমানে কক্সবাজার জেলায় তিনটি ট্যুরজম পার্কের কাজ করছে সরকার। তা হলসাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক। ইতিমধ্যে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক চালু হয়েছে। অন্য গুলোর কাজও শেষ পর্যায়ে।

চট্টগ্রামের নতুন পর্যটনকেন্দ্র ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক: নাগরিক জীবনে নির্মল আনন্দ দিতে চট্টগ্রামে ১২২ প্রজাতির ফুল দিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ‘ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক’। নগরীর একেবারে সন্নিকটে সাগরের তীরবর্তী ফৌজদারহাটে ১৯৪ একর জায়গা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে দখলে রেখেছিল একটি চক্র। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এই অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে সেখানে দেশীবিদেশী ১২২ প্রজাতির ফুল চাষ করেছে। দেখতে দেখতে সেটি অল্প সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রামে চোখ জুড়ানো মনোমুগদ্ধকর পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠেছে। সাগর তীরে এক দৃষ্টিননন্দন ‘ডিসি ফ্লাওয়ার পার্ক’, চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ফুলের রাজ্য।

চলতি বছরের গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই ফুলের পার্ক গড়ে তোলা হলেও এখন চট্টগ্রামের মধ্যে নতুন পর্যটন স্পর্ট হিসেবে ‘ডিসি পার্ক’ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ জলরাশি আর তার পাড় ঘেঁষেই ফুলের সাম্রাজ্য। শীতপ্রধান দেশের রানি টিউলিপ ফুল থেকে শুরু করে দেশীয় গাঁদা, লাল, নীল, হলুদ বর্ণের ডালিয়া ছাড়াও আছে নানা বর্ণের মেরিগোল্ড, চন্দ্রমল্লিকার মতো রঙবেরঙের ফুল। এমন দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের দেখা মিলবে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট থেকে বন্দরের সংযোগ সড়ক মেরিন ড্রাইভের একাংশে।

ফুলের এ সম্ভার নিয়ে ফ্লাওয়ার পার্ক গড়ে তুলছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ব্যস্ত নাগরিক জীবনে একটু প্রশান্তি ও স্বস্তির খোঁজে অনেকেই ছুটে আসছেন এখানে। চোখজুড়ানো বর্ণিল এই ফুলের সমারোহ দেখে উচ্ছ্বসিত পর্যটকরা।

দর্শনার্থীরা বলছেন, এটি নিমার্ণের ফলে শিশুরা ফুল চেনার সুযোগ পাচ্ছে। এ ছাড়া পার্কটি বিনোদনের একটি মাধ্যম হয়ে উঠছে বলেও জানান তারা।

শুধু ফুলের সৌন্দর্য নয়, বিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর জন্য এখানকার দুই জলাশয়ের মাঝখানে নির্মাণ করা হবে ওয়াকওয়ে, কটেজ। থাকবে লাইটিংয়ের ব্যবস্থাও।

পার্কের পাশে বিশাল দিঘিতে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানা গেছে। এছাড়া এখানে নৌকাবাইচ ও মাছ শিকারের ব্যবস্থা করা হবে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানএর সার্বিক প্রচেষ্টায় গত ৮ জুন চট্টগ্রামে ২টি পর্যটক বাস চালু হয়েছে। বিআরটিসির সহযোগিতায় দুটি দ্বিতল বাসের মধ্যে একটি বাসের ছাদখোলা।

নদী, সাগর ও পাহাড়সমৃদ্ধ চট্টগ্রামের সৌন্দর্য উপভোগের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসন নগরীর টাইগার পাস থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকা ও ফৌজদারহাটের ডিসি পার্ক পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য এই বাস চালুর উদ্যোগ নেয়।

টাইগার পাস থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার প্রতিদিন তিনবার করে এই বাস পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও ফৌজদারহাটের ডিসি পার্ক এলাকায় যাতায়াত করছে। অন্যান্য দিন বিকেলে দুবার করে একই যাত্রাপথে যাতায়াত করে।

পর্যটন বাস সার্ভিসে ভ্রমণের জন্য টাইগার পাস থেকে ডিসি পার্ক ৪০ টাকা, ডিসি পার্ক থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ৩০ টাকা এবং টাইগার পাস থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ৭০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে সীতাকুন্ড গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত:

পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দুয়ার নিয়ে বসে আছে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। সাগর, নদী, পাহাড়, লেক, ঝর্ণা, বন, মন্দির, উপজাতি কি নেই এখানে। সীতাকুন্ডের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে ২ থেকে ৩ দিন কাটিয়ে দেয়া যায়। এখানে রয়েছে ভিন্ন ধরনের গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত, সদ্বীপ ঘাট, কুমিরা ঘাট, চন্দ্রনাথ মন্দির, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, সুপ্তধারা ঝর্ণা, কমলদাহ ঝর্ণা, ইকো পার্কসহ আরও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উপকরণ।

মেঠো পথ পেরিয়ে যতদূর চোখ যায়, চারদিকে সবুজ আর সবুজ, মাথার উপর বিশাল আকাশ, তার নিচে কেওড়ার বন, খানিক দূরেই সমুদ্রের বিশাল জলরাশি। হৃদয় হরণ করা এমন রূপে বারবার হাতছানি দিয়ে পর্যটকদের ডাকছে সীতাকুন্ড অনিন্দ্যসুন্দর গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত। এটি অন্যান্য সৈকতের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন ধরনের। সৈকতের অদূরে বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়াতেই চোখ পড়বে কেওড়া বনের ওপরে মায়াবী আকাশ। বেড়িবাঁধ পেরিয়ে জুতোজোড়া হাতে নিয়ে কাদামাটির ওপর দিয়ে কিছুটা পথ হাঁটার পর কানে ভেসে আসছিল সমুদ্রের গর্জন। সৈকতে যাওয়ার আগে কেওড়া বনে ঘাসের বিছানা আর ঝিরঝিরি বাতাস। কেওড়া বন আর সবুজের মাঝে ছোট ছোট খাদ। সাগরের জলে পা ভেজাতে সৈকতের দিকে এগোতেই দর্শনার্থীদের কোলাহল। দলবল নিয়ে কেউ ফুটবল খেলেছে, কেউ গা ভেজাচ্ছে, অনেকেই আবার ব্যস্ত ছবি তুলতে। সৈকতের এক পাশেই বয়ে যাওয়া খাল। সেই খালে নৌকা নিয়ে গোধূলি বেলায় ভাটার অপেক্ষায় মাঝি। সমুদ্রের জলে সূর্যের রক্তিম আভা। জল আর আকাশ মিলেছে সোনালি রঙের ক্যানভাসে।

পরিচিতি বাড়তে থাকায় সৈকতে দর্শনার্থীদের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। সীতাকুন্ড বাজার থেকে সৈকতের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। সাধারণত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এ পথটা ১৫২০ মিনিট সময় লাগে। এর পাশেই রয়েছে সদ্বীপ ঘাট। এখানেও রয়েছে সাগর আর বনের মিতালী। মাঝ সাগরে দেখা মিলবে নানা ধরনের বড় বড় জাহাজের। আরেকটু সামনে এগুলোই দেখা যাবে জাহাজ ভাঙা শিল্প। পুরনো জাহাজ ভেঙে এখানে বিভিন্ন ধরনের প্লেট তৈরি করা হচ্ছে। এখান থেকে কুমিরা ঘাটের দিকে আরও এগুলো মিলবে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত। এখানে যেমন আছে ঝাউবন, তেমনি আছে ভিন্ন ধরনের এক সৈকত। যার প্রাকৃতিক সৈন্দর্য অতুলনীয়।

চট্টগ্রামের কুমিরাতে রয়েছে কুমিরা ঘাট। এখান থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার স্পিডবোড ও ট্রলার ছাড়ে। যে কারণে এ ঘাটটি সময়ই থাকে জমজমাট। এখানে দীর্ঘ লম্বা একটি পাকা জেটি। এখানে থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলের অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে। জেটির শুরুতে রয়েছে বেশকিছু খাবারের দোকান। এগুলোতে সাগরের তাজা মাছ ভাজা খেতে পারেন।

সীতাকুন্ড বাজার পেরুলেই চন্দ্রনাথ মন্দির। উঁচু পাহাড় বেয়ে মন্দিরে উঠতে হয়। মন্দির থেকে সাগর ও আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দযের অপরূপ দৃশ্য দেখার সুযোগ রয়েছে। মন্দিরে উঠার পথে ছোট দুটি ঝর্ণাও দেখা যাবে। সুপ্তধারা ঝর্ণা শুধু বর্ষাকালে জেগে উঠে।

সীতাকুন্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন বলেন, গুলিয়াখালীকে সরকার এখনও সৈকত হিসেবে ঘোষণা দেয়নি। যার কারণে এখানে যাওয়ার জন্য কোনো ধরনের অবকাঠামো তৈরি হয়নি। সরকার যদি সৈকত হিসেবে ঘোষণা করত তাহলে রাস্তাঘাট, আবাসিক ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করত পর্যটন কর্পোরেশন। পাশাপাশি এ সৈকতকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করা হলে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এ গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতটি।

বাংলাদেশের পর্যটনের ত্রিরত্ন পার্বত্য চট্টগ্রাম: পার্বত্য চট্টগ্রাম মূলত তিনটি জেলা নিয়ে গঠিত। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের একটি এলাকা, যা তিনটি জেলা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ও বান্দরবান নিয়ে গঠিত। পাহাড় ও উপত্যকায় পূর্ণ বলে এর নামকরণ হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। দেশের একটা বিশাল অংশের বনভূমি এই অঞ্চল জুড়ে আছে। পর্যটনের একটি প্রধান উপজীব্য হল এই পাহাড় যা যুগে যুগে মানুষকে আকর্ষণ করে গেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের মূল উপকরণ হল পাহাড়ে ঘেরা সবুজ প্রকৃতি যা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পর্যটকদের কাছে ধরা দেয়। এটি যেন ক্ষণে ক্ষণে প্রকৃতির রূপ বদলানোর খেলা। এখানে শীতে যেমন এক রূপ ধরা দেয় ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ঠিক তেমনি বর্ষায় অন্য এক রূপ হাজির হয়। শীতে পাহাড় কুয়াশা আর মেঘের চাদরে যেমন ডাকা থাকে তার সাথে থাকে সোনালী রোদের মিষ্টি আভা। আবার বর্ষায় চারদিক জেগে উঠে সবুজের সমারহ। এই সময় প্রকৃতি ফিরে পায় আর নতুন যৌবন। বর্ষায় মূলত এ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিস্টদের পদচারনা সবচেয়ে বেশি থাকে এই পার্বত্য অঞ্চলে। তখন এখানে ঝর্না, ঝিরি কিংবা নদীপথগুলো নতুন রূপে সেজে উঠে যা দেখার জন্য অসংখ্য পর্যটক এইখানে ভিড় করে। এর সাথে আছে পাহাড়ের মানুষের ভিন্নধর্মী জীবনাচরন যা আমাদের চেয়ে অনেকটা আলাদা। তাদের সংস্কৃতি, জীবনধারণ সবকিছু আমাদের থেকে ভিন্ন যা সাংস্কৃতিক পর্যটনের একটি অংশ।

দেশের প্রায় গুররুত্বপূর্ণ একদশমাংশ ভূখন্ড নিয়ে গঠিত পার্বত্য তিন জেলা। পাহাড়পর্বত, নদীনালা, ঝর্না ও গাছপালা বেষ্টিত মনোরম দৃশ্যের এ ভূমিতে রয়েছে বাঙালি ও ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। যার সবই পর্যটন শিল্পের জন্য এক অনন্য উপাদান। এই তিন জেলার প্রতিটি জেলায় কিছু না কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ ছড়িয়ে আছে। যার একটি পর্যটন আকর্ষণ অন্যটি থেকে ভিন্ন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান: বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে একটি হলো বান্দরবান। এটি বাংলাদেশের পাহাড়ী কন্যা নামে খ্যাত। ভৌগোলিক কারণেই বান্দরবানে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। পাহাড়, নদী ও ঝর্নার মিলনে অপরূপ সুন্দর বান্দরবান জেলা। এই জেলার দেশের সুউচ্চ পাহাড়সহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা এক কথায় অনন্য। বান্দরবান জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে বগা লেক, কেওকারাডং, মেঘলা, নীলগিরি, নীলাচল, নাফাকুম, স্বর্ণমন্দিরসহ আরো অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে।

বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৭ কি.মি. দক্ষিণপূর্ব দিকে লামা উপজেলার অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উপরে বাংলাদেশের নতুন পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরির অবস্থান। জায়গাটিকে অনেকে ‘বাংলাদেশের দার্জিলিং’ বলেন। যেখানে পাহাড় আর মেঘের মিতালি চলে দিনরাত। সুপরিকল্পিতভাবে এই পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে বান্দরবনের স্বর্ণমন্দির উপাসনালয়টি বাংলাদেশের একটি অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই ‘বৌদ্ধ ধাতু জাদী’ স্বর্ণমন্দির নামে পরিচিত। এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উল্লেখযোগ্য একটি উপাসনালয়। যা বান্দরবন শহর থেকে ৪ কি.মি. উত্তরে বালাঘাট নামক এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এর নির্মাণশৈলী মায়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে তৈরি।

স্বর্ণমন্দির উপাসনালয়টি বাংলাদেশের ধর্মীয় পর্যটনের এক অনন্য স্থান রূপে বিবেচিত। বান্দরবন জেলা শহরে প্রবেশের ৭ কি.মি. আগে মেঘলা পর্যটন এলাকা। এটি সুন্দর কিছু উঁচুনিচু পাহাড় বেষ্টিত একটি লেক ঘিরে গড়ে উঠেছে। সবুজ গাছ আর লেকের স্বচ্ছ পানি পর্যটককে প্রকৃতির কাছাকাছি টেনে নেয় প্রতিনিয়ত। পানিতে যেমন রয়েছে প্যাডেল বোট, তেমনি ডাঙ্গায় রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। রয়েছে রোপওয়ে কার। এখানে সবুজ প্রকৃতি, লেকের স্বচ্ছ পানি আর পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দেখতে পাওয়া যায় বান্দরবানের নয়নাভিরাম দৃশ্য। তাছাড়া নীলাচল বান্দরবন শহর হতে ১০ কি.মি. দক্ষিণে ১৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি পর্বত শীর্ষ। যেখান থেকে নীল আকাশ যেন তার নীল আঁচল বিছিয়ে দিয়েছে ভূমির সবুজ জমিনে। যে দিকে দুচোখ যায় অবারিত সবুজ ও নীল আকাশের হাতছানি। মুগ্ধতায় ভরে উঠবে মনপ্রাণ।

এছাড়া বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে বগালেক পরিচিত। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বগালেক। কেওকারাডাং এর কোল ঘেঁষে বান্দারবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। পাহাড়ের উপরে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে বগালেক। এ পানি দেখতে প্রায় নীল রঙের। এ লেকের পাশে বাস করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র উপজাতীয় বম ও খুমী সমপ্রদায়। অদ্ভুদ সুন্দর এই নীল রঙ্গের লেকের সঠিক গভীরতা বের করা যায়নি এখনও পর্যন্ত। স্থানীয় ভাবে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ ফুট বলা হলেও মেশিনে ১৫১ ফুট পর্যন্ত গভীরতা পাওয়া গেছে। এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ একটি লেক। এর আশেপাশে পানির কোন উৎসও নেই। তবে বগালেক যে উচ্চতায় অবস্থিত তা থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে যা বগাছড়া (জ্বালামুখ) নামে পরিচিত।

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি : পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলায় রয়েছে পর্যটনের আরো অনেক নিদর্শন। চট্টগ্রাম থেকে ৫৫৬০ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গামাটি। এখানে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কাপ্তাই লেক ঘিরে আশেপাশে অসংখ্য লেক ও পর্যটন স্পর্ট গড়ে উঠেছে। এছাড়াও ঝুলন্ত সেতু, আরণ্যক, বেরান্ন্যার লেক, সাজেক ভ্যালীসহ বিভিন্ন লেক ও ঝর্না উল্লেখ্যযোগ্য। সামপ্রতিক সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে যে কয়টি ভ্রমণ গন্তব্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার মধ্যে অন্যতম হল রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালি। বর্তমানে সাজেকে ভ্রমণরত পর্যটকদের জন্য অনেক ধরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সারাবছরই সাজেক যাওয়া যায়। সাজেক রুইলুইপাড়া এবং কংলাক পাড়া এই দুটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত।

১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়ার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭২০ ফুট। চারপাশে মনোরম পাহাড় সারি, সাদা তুলোর মত মেঘের ভ্যালি পর্যটকদের সহজেই মুগ্ধ করবেই। এটি এমনই এক আশ্চর্যজনক স্থান যেখান থেকে একই দিনে প্রকৃতির তিন রূপের সান্নিধ্যে পর্যটকরা চমৎকৃত হয়। কখনোবা খুব গরম অনুভূত হবে তারপর হয়তো হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে কিংবা চোখের পলকেই মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে চারপাশ। প্রাকৃতিক নিসর্গ আর তুলোর মত মেঘের পাহাড় থেকে পাহাড়ে উড়াউড়ি খেলা দেখতে সাজেক আদর্শ স্থান। তাই সাজেকের রূপের কোন তুলনা হয় না। সারা বছরই বর্ণিল সাজে সেজে থাকে সাজেক। তাই বছরের যেই কোন সময় সাজেক ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময়।

রাঙ্গামাটির আরেকটি প্রধান আকর্ষণ হলো ঝুলন্ত সেতু। সাধারণত রাঙামাটি গিয়ে এই ঝুলন্ত সেতুটি না দেখে কেউ ফেরত আসেন না। রাঙামাটির কাপ্তাই লেকের একাংশে ৩৩৫ ফুট লম্বা এই ব্রিজটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় স্পট। নয়নাভিরাম এই ঝুলন্ত সেতুটি দুইটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের মধ্যে গড়ে উঠেছে। সেতুটি পারাপারের সময় সৃষ্ট কাঁপুনি পর্যটকদের মধ্যে এনে দেবে ভিন্ন আমেজ।

পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলায় রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। অসংখ্য ঝর্ণা আর বুনো পাহাড় মিলিয়ে এক জানাঅজানা রহস্যের নাম খাগড়াছড়ি। যদিও আমাদের পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে পর্যটনের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে এই জেলাটি। কিন্তু এই জেলার রয়েছে অফুরন্ত পর্যটন সম্ভাবনা। এই অফুরন্ত সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে ডাকছে খাগড়াছড়ি। প্রকৃতি অকৃপণভাবে সাজিয়েছে খাগড়াছড়িকে। স্বতন্ত্র করেছে বিভিন্ন অনন্য বৈশিষ্ট্যে। খাগড়াছড়ি জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে আলুটিলা পাহাড় ও গুহা, রিছাং ঝর্না, দেবতা পুকুরসহ আরো অন্যান্য স্থান উল্লেখযোগ্য।

সৌন্দর্যের ঐশ্বর্যময় অহংকার খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশ পথ আলুটিলা। জেলা সদর থেকে মাত্র ৭ কি.মি. দূরে মাটিরাঙ্গা উপজেলাতে এটি অবস্থিত। আলুটিলা পাহাড় থেকে খাগড়াছড়ি শহরের পুরো চিত্র দেখা যাবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য টিলায় একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারও আছে। আর আলুটিলা থকে আরো প্রায় ২ কি.মি. দূরে অবস্থান বিছাং ঝর্ণা। বর্ষায় এটি যেন চির যৌবনা হয়ে উঠে। এছাড়া সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে প্রায় ১০০০ ফিট উপরে পাহাড়ের চূড়ার মধ্যে অবস্থিত একটি পুকুর যা স্থানীয়ভাবে দেবতা পুকুর নামে পরিচিত। পুকুরের আকার দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫০০ ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ৬০০ ফুট। এটি খাগড়াছড়িরাঙ্গামাটি রোডে নুনছড়ি ত্রিপুরা গ্রামে অবস্থিত। এখানে ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের স্বচ্ছ জলস্রোতে প্রকৃতির অপূর্ব সাজে মুগ্ধতায় শিহরিত হয় মন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ পাহাড়কে কেন্দ্র করে তাদের পর্যটন শিল্পকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। আমরা যদি আমাদের পাশের দেশ ভারত কিংবা নেপালের দিকে দৃষ্টি দেই তাহলে তা সহজেই প্রতীয়মান হয়। এইসকল দেশ পর্যটন বিকাশের জন্য পাহাড়ে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করেছে। তারা তৈরী করেছে বিভিন্ন স্থাপনা যা পর্যটকদের জন্য বিনোদনের অভাব পূরন করে। কিন্তু আমাদের দেশে পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটনকে কেন্দ্র করে খুব একটা উন্নয়ন এখনো চোখে পড়ছে না। এই সকল এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পর্যটকদের বিনোদনের ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল যা দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণে এখনো মূল বাঁধা হিসাবে কাজ করছে। তবে এইসকল অঞ্চলে উন্নয়ন করতে হলে এর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে তার পরিকল্পনা করতে হবে।

এই ব্যাপারে রাঙামাটির সংবাদকর্মী ও উন্নয়নকর্মী চিরন বিকাশ দেওয়ান এবং সংবাদকর্মী নিহার বিন্দু চাকমা আজাদীকে বলেন, আমাদের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা ব্যাপক, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে আমরা পিছিয়ে আছি। চোখ জুড়ানোমনোমুগ্ধকর আমাদের পর্যটনএলাকা গুলো। এমন অপার সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে মনে হয়না। তারপরও আমরা কতো পিছিয়ে আছি। শুধু পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নের অভাব। আমাদের তিন পাবর্ত্য জেলায় পর্যটন বিকাশের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তার অভাব এবং ভালো মানের খাবারের অভাব। এ শিল্পের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। পর্যটন শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত সব পক্ষকে নিয়ে একসাথে কাজ করতে হবে। দেশিয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে প্রচারপ্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক আজাদী

পূর্ববর্তী নিবন্ধইডিইউ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে যথাযথ শিক্ষামান এবং অনুকূল পরিবেশ প্রদানে আমরা সংকল্পবদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধঅযত্নে, অবহেলায় রূপ ও যৌবন হারাতে বসেছে আসকারদিঘি