আনোয়ারায় গার্মেন্টসকর্মী সুমন নাথ (৪০) অপহরণের ঘটনায় এবার আদালতে মামলা হয়েছে। এ নিয়ে একই ঘটনায় আদালত ও থানায় পৃথক দুটি মামলা হলো। এছাড়া ভিকটিমের শ্যালককে গভীর রাতে থানায় এনে তাকে বাদী করে মামলা রেকর্ড করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানা যায়, অপহৃত সুমনকে উদ্ধারের পর পুলিশ মামলা নেয়নি। মধ্যরাতে মামলার বাদী সুমনের স্ত্রীকে থানায় এনে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এর পর গত সোমবার অপহৃতের স্ত্রী আদালতে মামলা করেন।
ঘটনার দুদিন পর সোমবার পুলিশ ভিকটিমের শ্যালককে গভীর রাতে থানায় ডেকে আনে। ভিকটিমের স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগে মামলা না নিয়ে ভিকটিমের শ্যালককে এনে মামলা রেকর্ড করায়। এ ঘটনা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
জানা যায়, ১৪ মার্চ কেইপিজেড কর্মী সুমন নাথকে চাতরী চৌমুহনী এলাকা থেকে অভিযুক্তরা তুলে নিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। এই ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী ঝুমি দেবী আনোয়ারা থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার ও ৪ আসামিকে আটক করে।
ভিকটিমের স্ত্রী ঝুমি দেবী বলেন, অপহরণের পর আমি আনোয়ারা থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। ওসি সাহেবের সামনে আমার স্বামীর ফোন থেকে আমাকে ফোন করে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে আমার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর পুলিশ শুক্রবার অভিযান চালিয়ে ৪ অপহরণকারী ও আমার স্বামীকে উদ্ধার করে। রাতে মামলা নেবে বলে আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এরপর মধ্যরাতে পুলিশ আমাকে বাসা থেকে এনে জোর করে কয়েকটি স্বাক্ষর নিয়ে আসামিদের ছেড়ে দেয়। সোমবার সমঝোতা করে দেওয়া হবে বলে আমাকে শাসায়। যার কারণে আমরা বাধ্য হয়ে সোমবার আদালতে মামলা করি।
এ ঘটনার দুদিন পর সোমবার রাতে আনোয়ারা থানায় পুলিশের ডাকা সমঝোতা বৈঠকে ভিকটিম ও তার স্ত্রী উপস্থিত হননি। পুলিশ ভিকটিমের শ্যালক অংশু নাথকে (২২) নিয়ে এসে তাকে বাদী করে অপহরণ মামলা নেয়। সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত হওয়া অভিযুক্তদের আটক করে। গতকাল আটকদের জেল হাজতে প্রেরণ করে।
এ ঘটনায় পুলিশের রহস্যজনক আচরণে ভিকটিমের স্ত্রী গত সোমবার আদালতে মামলা করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহাম্মদ। মামলার তদন্তভার পেয়েছেন একই থানার এসআই কাউসার হুসাইন। মামলায় আসামিরা হলেন মো. ফারুক হোসেন (৩৫), বদিউল আলম (২৬), মো. সোহান (২২) ও মো. সাইফুদ্দিন (২৪)।
অপহৃতের পরিবারের অভিযোগ, অপহরণের ঘটনায় ভিকটিমের পরিবার এজাহার দিলেও তখন পুলিশ মামলা না নিয়ে উল্টো বাদীকে হুমকি দিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে আসামি ছেড়ে দেয়। এ বিষয়ে পুলিশের দাবি ছিল, ঘটনাটির নেপথ্যে ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ আর লেনদেন।
ভিকটিমের শ্যালক অংশু নাথ বলেন, সোমবার রাতে আমার বোনের বাড়ি বেড়াতে যাই। রাত ১২টার পর পুলিশ এসে আমার বোন ও বোন জামাইকে না পেয়ে আমাকে জোর করে থানায় নিয়ে মামলার বাদী করেন। এ ব্যাপারে আমি আর কিছু জানি না।
আদালতে দায়ের করা মামলার আইনজীবী আবু মো. ইউনুস ভুইয়া রোকন বলেন, ভিকটিমের স্ত্রীর দায়ের করা মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।
আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহাম্মদ সাংবাদিকদের জানান, অপহরণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। তিন আসামিকে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। মামলার বাদী পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।