অপরাধ করে জেলে, ফিরে এসে আরো বড় অপরাধ

কারামুক্তদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান কার্যক্রমে শিথিলতাই কারণ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

সংশোধিত হয়ে ফিরে আসার জন্য অপরাধীদের পাঠানো হয় কারাগারে। কিন্তু সেখানে এক মামলায় শাস্তি ভোগ করতে গিয়ে বের হয়ে আরো বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। নগরী কিংবা জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন অপরাধী ধরা পড়েছে বিভিন্ন থানায়, যারা অপরাধ করে জেলে গেছে, ফিরে এসে আবারো একই কিংবা আরো বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। নামের পাশে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। জামিনে বের হয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়া অপরাধীদের মধ্যে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি কিংবা মাদক মামলার আসামি যেমন আছে, একইভাবে আছে দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের অনেকে। গত ৪ এপ্রিল নগরীর সদরঘাট ও খুলশী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি বন্দর) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম এ প্রসঙ্গে আজাদীকে জানান, এদের মধ্যে শীর্ষ তিনজন জেলে বসেই পরিকল্পনা করে ঈদ মৌসুমে ছিনতাইয়ের জন্য কীভাবে দল গঠন করবে, কাজে কী কী কৌশল প্রয়োগ করবে। এই তিনজনের মধ্যে মিন্টু ও বেলাল বের হয় ১ এপ্রিল, জাহিদ বের হয় ২ এপ্রিল। ঈদের বাজারের ক্রেতা ও ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনকারীদের টার্গেট করেই তারা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা নিয়েছিল। এদের মধ্যে মিন্টুর স্বীকারোক্তি হলো, স্যার নিজের শ্বশুরবাড়িতে অতবার যায় নাই, লাল দালানের শ্বশুরবাড়িতে (কারাগার) যতবার গেছি।
মীরসরাই উপজেলার আলোচিত ইয়াবা কারবারি আমির হোসেন সেলিম ওরফে বুলেট সেলিম (৩৮) ৩ এপ্রিল আবারও গ্রেপ্তার হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদকের ১৬টি মামলা আগে থেকেই ছিল। সর্বশেষ ১৭তম মামলায় তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ২৫ জানুয়ারি মাদকদ্রব্যসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল মীরসরাই থানা পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হলেও জামিনে এসে আবার মাদক কারবারে জড়িয়ে যায়।
একইভাবে ৯ ফেব্রুয়ারি বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার নাছির উদ্দিন প্রকাশ ইয়াবা নাছিরকে গ্রেপ্তার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ। বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান আজাদীকে জানান, নাছির কঙবাজার থেকে ইয়াবা এনে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে। তার বিরুদ্ধে ১৪টির বেশি মাদকের মামলাসহ বিভিন্ন থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে। অস্ত্র ও মাদকসহ বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারও হয়েছে ইয়াবা নাছির। এরপরও স্বভাব বদলায়নি।
২৭ জানুয়ারি রাতে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বায়েজিদ বোস্তামী সংযোগ সড়ক থেকে রড চুরির মামলায় মহিউদ্দিন শিবলু (৪২) নামে এক ব্যক্তিকে ৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগেও অস্ত্র, ইয়াবাসহ দুই দফা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। জামিনে বের হয়ে আবারও জড়িয়েছেন অপরাধে। শুধু তাই নয়, অপরাধী চক্রের সদস্যদের অর্থের বিনিময়ে জেল থেকে জামিনে মুক্ত করে নিজেই সর্দার হয়েছেন বলে জানান সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক।
সিএমপির তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হামকা রাজুকে গত বছর ৩ নভেম্বর বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। জামিনে বের হয়ে পুনরায় জড়িয়ে পড়ে অপরাধে। অপরাধ জগতে তার প্রধান সহযোগী ছোট ভাই মো. জুয়েল ওরফে ধামা জুয়েল। চান্দগাঁও থানা পুলিশ ২৬ জানুয়ারি বহদ্দারহাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে জানিয়ে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঈনুর রহমান চৌধুরী বলেন, জামিনে এসে আবার বিভিন্ন অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজির একটি মামলায় ওয়ারেন্ট থাকায় তাকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নগরীর শীর্ষ ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীদের একটি বড় অংশ জামিনে বর্তমানে বাইরে আছে। এদের মধ্যে অন্যতম হাত কাটা মিলন, আমির, হামকা গ্রুপের নেজাম, হাত কাটা জাহাঙ্গীর, জাকির, মিঠু, সাদ্দাম, ২২ মামলার আসামি হাশেম, বেলাল গ্রুপের ডাকাত সুমন, লিয়াকত, মনির, লম্বা সুমন প্রমুখ।
অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, কারামুক্ত অপরাধীদের ওপর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান কার্যক্রমে শিথিলতা অপরাধীকে আবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। কারণ কারামুক্ত হয়ে অপরাধী সমাজে পুরনো সহযোগীদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পায়। এতে অপরাধী আরো সংগঠিত হয়ে আবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক দশকে সামুদ্রিক কচ্ছপ কমেছে ৯০ ভাগ
পরবর্তী নিবন্ধকোনোভাবেই যেন কেউ হয়রানির শিকার না হয়