অপরাধের বিচার না হলে সমাজে অপরাধীর সংখ্যা কমবে না

শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে

| শনিবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ডকথাটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি কথা বাণী উচ্চারিত হয় সমানভাবে। সেটা হলো : শিক্ষকরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশ, সমাজ ও জাতিকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেন শিক্ষকরা।

তাঁরা ভূমিকা নেন একটি আদর্শ নৈতিক ও দেশপ্রেমিক জাতি গঠনে। এক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা অপরিসীম। একটি শিশু তার পারিবারিক শিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সান্নিধ্য লাভ করে। নৈতিকতার শিক্ষা প্রথমে পরিবার থেকে লাভ করার পর এই শিক্ষকরাই তাকে নৈতিকতার উচ্চতর পাঠদান করেন।

শিক্ষকরা তাঁদের ছাত্রদের সামনে একেক জন মডেল বা আদর্শ। শিক্ষককে দেখেই ছাত্ররা নিজেকে একজন আদর্শবান, নৈতিকতা সম্পন্ন ও অনুকরণীয় হিসেবে উপস্থাপন করে। শিক্ষকরা একজন ছাত্রকে শুধু পাঠদান করান না, পাশাপাশি তাকে নৈতিক জীবনচর্চার উজ্জ্বলতম দিকগুলো শিখিয়ে দেন।

সেই পাঠ অবলম্বন করে ছাত্র তার জীবন পরিচালনা করে। তাই ছাত্ররা তাদের জীবনের আদর্শের মূর্ত প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে একজন শিক্ষককে। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সেই

শিক্ষকের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত। বলা যায় আজ ধুলায় গিয়ে মিশছে। সেই শিক্ষকরা আজ নিজ শিক্ষার্থীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হচ্ছেন। শুধু শিক্ষার্থীদের দ্বারাই নয়, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি, ছাত্রনেতা বা রাজনৈতিক নেতাদের কাছেও অপদস্ত হচ্ছেন। যা সত্যিই দুঃখজনক। কোনো অবস্থাতেই তা কাম্য নয়।

দৈনিক আজাদীতে পরপর দুদিন দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘ক্লাসে ঢুকে শিক্ষিকার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতার অশোভন আচরণ’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে, ক্লাস চলাকালীন শ্রেণিকক্ষে ঢুকে নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজের এক শিক্ষিকার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন ডবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হায়দার।

গতকাল সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে কলেজ অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে অশোভন আচরণের শিকার অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ববি বড়ুয়ার পা ধরে ক্ষমা চান রাকিব। ববি বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, প্রতি বছর ন্যূনতম আড়াই হাজার শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হয়।

কলেজে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্ররা ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ব্রিফিং করে। তবে গত ১৩ বছরে কেউ আমার সামনে করেনি। আজ বহিরাগত এক ছাত্র আসে, যাকে আমি চিনি না। সে ব্রিফ করতে চাইলে বাধা দিই। এতে সে অশোভন আচরণ করে। পরে আমার ছাত্ররা তাকে ধরে নিয়ে আসে।

সে পা ধরে ক্ষমা চায়। কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম সরোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি জানার সাথে সাথে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। রাকিব এসে ম্যাডামের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে। শিক্ষিকাকে মা ডেকে নিজেদের ভুল স্বীকার করেছে। বিষয়টি আমরা মীমাংসা করেছি। তবে একজন শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রের এমন আচরণ কাম্য না।

অন্যদিকে পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘শিক্ষকের সাথে অশোভন আচরণ পলিটেকনিকে’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে,

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চতুর্থ পর্বের সমাপনী পরীক্ষা চলাকালীন এক শিক্ষকের সাথে অশোভন আচরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে। অশোভন আচরণের শিকার শিক্ষক হচ্ছেন প্রকাশ সিকদার।

তিনি আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পরীক্ষা চলার সময়ে ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন ওমর, সাদমান ও কাউসার নামের তিনজন এসে পরীক্ষায় বসা চারজনের কাছ থেকে জানতে চান, তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। উত্তরে তারা বলেন, হ্যা, তাদের সমস্যা হচ্ছে। এর জেরে ওমর, সাদমান ও কাউসার আমার সাথে অশোভন আচরণ করেন।

আধা ঘন্টা পর পরীক্ষায় বসা চারজনের তিনজন খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে যায়। নির্দিষ্ট সময় পার না হওয়ায় আমি তাদের প্রশ্ন রেখে দিই। পরে ছাত্রলীগ নেতা ওমর, সাদমান ও কাউসার আবারও আসে এবং ফের অশোভন আচরণ করেন।

এই ঘটনাগুলোর কি বিচার হবে? অপরাধবিজ্ঞানীরা বলেন, অপরাধের যদি বিচার না হয় তাহলে অপরাধীর সংখ্যা তো কমবে না সমাজে। অপরাধী যদি দেখে এ দেশে এমন অপরাধ করে সহজে পার পাওয়া যায়, তাহলে অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পাবেতাতে কোনো সন্দেহ নেই।

শিক্ষকরা যদি তাঁদের সম্মান নিয়ে কাজ করতে না পারেন, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি যদি সামাল দেওয়া না যায়, তাহলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলা নেমে আসবে। ভয়ে ভয়ে থাকলে কোনো শিক্ষক তাঁদের পাঠদান স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিতে পারবেন না। তাই সার্বিকভাবে শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হলে শিক্ষাঙ্গনকে সুস্থ রাখতে হবে। এখানে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে