ফেসবুকে কোরান অবমাননার গুজব তুলে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ পল্লীতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল যা নাড়া দিয়েছিল সারাবিশ্বের বিবেককে।
কিন্তু নয় বছর পার হলেও এখনও এই ধ্বংসযজ্ঞের বিচার হয়নি। এভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।
বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলার ৯ বছর অতিক্রান্তে আজ বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রামু লালচিং-মৈত্রী বিহার কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ দিনব্যাপী যে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে সেই আয়োজনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ভোরে সাদাচিং-এ বুদ্ধের সামনে অর্ঘ্যদানের মধ্যদিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর সংঘদান, অষ্টপরিষ্কারদান, ধর্ম সভা ও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসুচির আয়োজন করা হয়।
রামু পানেরছড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সুচারিতা মহাথেরোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. জিনবোধি মহাথের।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রামু সেনা নিবাসের স্টেশন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রিয়াজুর রহমান বিপিএম. পিএসসি।
অন্যান্যদের মধ্যে রামু মৈত্রী বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাতিলক মহাথের, করুণাশ্রী থের, শিলপ্রিয় থের ও সংগঠনের সভাপতি কেতন বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া আব্বু প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কেতন বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া আব্বু জানান, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সেই অশুভ দিনে বৌদ্ধদের অনেকগুলো বুদ্ধমূর্তি, বুদ্ধের পবিত্র ধাতু, ধর্মগ্রন্থ পবিত্র ত্রিপিটক ও প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। মূলত হারিয়ে যাওয়া এসব স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং পুণ্যদান করতে এ আয়োজন করা হয়।
তারা আরও বলেন, আমরা এ ঘটনার বিচার চাই কারণ অপরাধীরা শাস্তি না পেলে এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটবে।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জনৈক উত্তম বড়ুয়ার একাউন্টে পবিত্র কোরান শরীফ অবমাননার অভিযোগ এনে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুর বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধপল্লীতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
এ সময় রামুর প্রাচীন ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও ২৬টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলা লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয় আরো ছয়টি বৌদ্ধ বিহার এবং শতাধিক বসতঘরে।
পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর বিকালে উখিয়ায় আরো চারটি বৌদ্ধ বিহারে হামলা চালানো হয়।
সেই হামলার ক্ষতচিহ্ন মুছে বর্তমান সরকার এক বছরের মধ্যে ১৯টি বৌদ্ধ বিহার পুনঃনির্মাণের উদ্যেগ নেয়। প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেই ধ্বংসস্তূপের উপর দৃষ্টিনন্দন এসব বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কিন্তু সেই হামলার নয় বছর পার হতে চললেও এখনও একটি মামলারও বিচার কাজ শেষ হয়নি।