অন্নদাশঙ্কর রায় মননশীল কথা সাহিত্যিক এবং চিন্তাশীল লেখক। তাঁকে বাংলা রেনেসাঁসের শেষ মনীষী প্রতিভা বলা হয়ে থাকে।
অন্নদাশঙ্করের জন্ম ১৯০৪ সালের ১৫ই মার্চ উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে। শুরুর দিকে ওড়িয়া ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছিলেন তিনি। পরবর্তীসময়ে বাংলা ভাষাতেই নিবিড় সাহিত্যচর্চা করেছেন। সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলেন বেশ কিছুকাল। উপন্যাস, গল্প, নাটক, কবিতা, ছড়া, কাব্যনাট্য, ভ্রমণকাহিনি, ভাষণ, সাক্ষাৎকার, প্রবন্ধ – সাহিত্যের প্রায় সকল শাখাই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর কুশলী ও নিপুণ স্পর্শে। ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চ শিক্ষা শেষে অন্নদাশঙ্কর বহরমপুরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকরি পান। দীর্ঘকাল চাকরি-জীবনে নিবেদিত থাকলেও সরকারি চাকরির বাঁধাধরা একঘেঁয়েমিতে হাঁপিয়ে ওঠে তাঁর সৃষ্টিশীল মন। সাহিত্যিকের জীবনকেই তিনি বেছে নেন পুরোপুরি। লেখাপড়ার জন্য অন্নদাশঙ্কর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং ইংল্যান্ডে ভ্রমণ করেছেন। তাঁর রচনায় প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের, স্বদেশ ও স্বকালের যে সমন্বয় ঘটেছে তা তাঁর এই ভ্রমণলব্ধ অভিজ্ঞতারই ফসল। অন্নদাশঙ্কর রায়ের বিখ্যাত রচনাগুলোর মধ্যে ‘পথে প্রবাসে’, ‘সত্যাসত্য’, ‘রত্ন ও শ্রীমতী’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘না’, ‘কন্যা’, ‘রাখী’, ‘কামনাপঞ্চবিংশতি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সরস কৌতুকের আদলে তিনি যেমন ছোটদের জন্য ছড়া লিখেছেন, তেমনি কিছু কিছু ছড়ায় সমকালীন ইতিহাস মূর্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর সৃষ্টির মূল উপজীব্য শুভ আর কল্যাণ। জীবন ও জগতকে তিনি দেখেছেন অসামপ্রদায়িক, উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে। ২০০২ সালের ২৮শে অক্টোবর অন্নদাশঙ্কর রায় প্রয়াত হন।